৭০টি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি মন্দির। কিন্তু তার মধ্যে একটি স্তম্ভ ঝুলন্ত। অমন বিশাল আকৃতির একটি স্তম্ভ কীভাবে ঝুলে রয়েছে, সে রহস্যের সমাধান হয়নি আজও। আসুন, শুনে নেওয়া যাক এই আশ্চর্য মন্দিরের কথা।
বিশাল আকারের একটি স্তম্ভ। অথচ আসলে তার যোগই নেই মাটির সঙ্গে। খালি চোখে দেখলে মনে হবে সেটি ওপর থেকে ঝুলছে। আর যদি নিজের চোখকে সন্দেহ হয়, তবে একটি রুমাল স্তম্ভের নিচে দিয়ে দেখুন। চক্ষুকর্ণের বিবাদ মিটে যাবে মুহূর্তেই। কারণ দেখা যাবে, খুব সহজেই ওই স্তম্ভের নিচ দিয়ে এক পাশ থেকে অন্য পাশে নিয়ে যাওয়া গেল রুমালটিকে। এই ঝুলন্ত স্তম্ভ দেখতেই অন্ধ্রপ্রদেশের বীরভদ্র মন্দিরে ভিড় জমান পর্যটকেরা।
আরও শুনুন: পৃথিবীতে রয়েছে আরেক ‘রামরাজ্য’, অযোধ্যায় বাস করেন রাজা রামও
পুরাণ মতে ঋষি অগস্ত্য নাকি তৈরি করেছিলেন এই মন্দির। স্কন্দ পুরাণ মতে, শিবের ১০৮ পীঠের অন্যতম এই বীরভদ্র মন্দির। ভক্তরা এই মন্দিরে শিবের তাণ্ডব রূপ বীরভদ্রের পুজো করেন। এই মন্দিরে রয়েছে একটি ২৪ ফুট বাই ১৪ ফুটের বীরভদ্রের মূর্তি। একটি বড় পাথর কেটে বানানো শিবের বাহন নন্দীর মূর্তি এবং একটি পাথরের উপর খোদাই করে আঁকা চিত্র। এ ছাড়াও মন্দিরের দেওয়াল এবং থামে শিবের ১৪টি অবতারের চিত্র আঁকা রয়েছে। সব মিলিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুর জেলার লেপাক্ষীতে অবস্থিত বীরভদ্র মন্দির বা লেপাক্ষী মন্দির ষোড়শ শতকে ভারতীয় ভাস্কর্যের এক অপরূপ নিদর্শন। রামায়ণেও রয়েছে এই লেপাক্ষী গ্রামের উল্লেখ। কথিত আছে যে, সীতা হরণের সময় রাবণকে বাধা দিতে গিয়ে আহত জটায়ু এই গ্রামেই এসে পড়েছিলেন। জটায়ুর কাছে পৌঁছে তাঁকে দেখে রাম বলে ওঠেন ‘লে পাক্ষী’, অর্থাৎ তেলুগু ভাষায় ‘ওঠো পাখি’। এই কারণেও ভক্তদের কাছে এই গ্রাম ও এই মন্দিরের তাৎপর্য রয়েছে। কিন্তু ৭০টি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে থাকা এই মন্দিরেই রয়েছে এমন একটি আশ্চর্য স্তম্ভ, যার মাটির সঙ্গে কোনও সংস্পর্শ নেই। এই ঝুলন্ত স্তম্ভের নাম ‘আকাশ স্তম্ভ’। অমন বিশাল আকৃতির একটি স্তম্ভ কীভাবে ঝুলে রয়েছে, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে সকলের মধ্যেই। অনেকের মতে, স্তম্ভটি তার আসল জায়গা থেকে খানিকটা সরে গিয়েছে। কিন্তু সে দাবিরও কোনও প্রামাণ্য ভিত্তি নেই। এই ঝুলন্ত স্তম্ভের রহস্য ভেদ করতে সক্ষম হননি বিশেষজ্ঞরাও। বিজয়নগর নির্মাতাদের স্থাপত্যের প্রতিভা প্রদর্শনের জন্য এই স্তম্ভটি ইচ্ছাকৃতভাবে নির্মিত হয়েছিল, এমনটাই শেষমেশ মেনে নিয়েছেন তাঁরা।