দেশজুড়ে শিরোনামে শিক্ষা দুর্নীতি। একের পর এক পরীক্ষা বাতিলে মাথায় হাত পড়ুয়াদের। বিক্ষোভে ফুঁসছেন দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা। দেশের শিক্ষার এই অবস্থা নিয়ে সকলেই উদ্বিগ্ন। এই ঘটনায় একইভাবে রুষ্ট হচ্ছেন বিদ্যার দেবীও? ঠিক কোন কোন কাজে রুষ্ট হন সরস্বতী? শুনে নেওয়া যাক।
যে কোনও পুজোর কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম থাকে। সেইমতো পুজো না করলে রুষ্ট হন দেবতা। কিন্তু স্রেফ পুজোয় অবহেলা নয়, এমন অনেক কাজই রয়েছে, যা দেবতারা পছন্দ করেন না। শাস্ত্রে এর ব্যাখ্যা যেমন মেলে, তেমনই লৌকিক আচারেও একাধিক নিয়মের উল্লেখ মেলে।
আরও শুনুন: উচ্চশিক্ষা যেন আর লক্ষ্য নয়, হয়ে উঠছে এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়
লক্ষ্মী পুজোয় ঘণ্টা বাজাতে নেই, মনসা পুজোয় দেখানো যাবে না ধুপ-ধুনো, আবার সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেলেই সর্বনাশ! বলা হয় এইসব মোটে পছন্দ করেন না দেবী। তাই শাস্ত্রের ব্যাখ্যার পাশাপাশি বিভিন্ন দেব-দেবীর সঙ্গে তাঁদের রুষ্ট হওয়ার কারণ প্রচলিত রয়েছে। তবে স্রেফ পুজোর আচার নিয়ম নয়। দেবতাকে তুষ্ট করতে গেলে বদলাতে হয় বাড়ি বা সমাজের পরিস্থিতিও। যেখানে অনিষ্ট, অনাচার, অনিয়ম সেখানে ভুলেও পা রাখেন না দেবী। পুরাণের গল্পে এমন উদাহরণ রয়েছে ভুরি ভুরি। বাংলার ব্রত কথাতেও সেসবের উল্লেখ মেলে। সেখানে দেবী ষষ্ঠীকে তুষ্ট করতে একাধিক নিয়ম মানছেন বাড়ির মহিলারা। আবার চণ্ডীকে তুষ্ট করতে আরও কিছু নিয়ম পালনে ব্যস্ত হচ্ছেন সকলে। সরস্বতী পুজোর সঙ্গে এমন কোনও ব্রত কথার চল নেই। তাই কোন কাজ করলে দেবী রুষ্ট হবেন তা হলফ করে বলা কঠিন। তাই বলে শান্তমূর্তি দেবী কি কখনও রুষ্ট হন না?
অবশ্যই হন। অন্তত যে কারণে তাঁর অর্চনা সেই শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি দেখলে দেবী অবশ্যই রুষ্ট হন। শাস্ত্রেও সে ব্যাখ্যা মেলে। পুরাণের গল্পে দেবী সরস্বতীর রুদ্রমূর্তির উল্লেখ না থাকলেও তাঁর রোষে পড়তে নারাজ দেবতা থেকে অসুর সকলেই। কারণ তিনি বাগদেবী। অর্থাৎ আমরা যে কথা বলছি সেই স্বর, সুর সবেরই নিয়ন্ত্রক দেবী। বলা হয়, কোনও অসৎ ব্যক্তি দেবীর পছন্দের পাত্র হতে পারেন না। কিংবা এমন কেউ যে জেনেশুনে দেবীর অপমান করছে, তাঁর প্রতিও কুপিতা হন দেবী। আসলে, সরস্বতী স্রেফ কোনও মূর্তির মধ্যে নয়, বাদ্যযন্ত্র, বই-খাতা, কিংবা অধ্যয়নের সঙ্গে যোগ রয়েছে এমন সবকিছুর মধ্যেই বিরাজ করনে। কাজেই এইসব জনিসের অবজ্ঞাও দেবীকে অবহেলার সমান। কেউ এমনটা করলে দেবি অবশ্যই রুষ্ট হন।
সুতরাং সামগ্রিক ভাবে শিক্ষা নিয়ে যে দুর্নীতির অভিযোগ আসছে, তাতে দেবী খুব একটা স্বচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না এমনটা বলাই যায়। সরস্বতী পুজো না করলে পরীক্ষায় ফেল করতে হবে, এই ধারণা অনেক পড়ুয়ার মধ্যেই রয়েছে। তাই ছোটবেলা থেকে আর যাই দুষ্টুমি করুক, সরস্বতীর অপমান হবে এমন কোনও কাজ খুদের দল করে না। ধীরে ধীরে তাঁরা বড় হয়। তাতে দুষ্টুমির ধরণ বদলায়। তবু সরস্বতী পুজোর দিন সেসব চলবে না। কুল খেলে আদৌ দেবী রুষ্ট হবেন কি না, সেই নিয়ে বিশেষ তর্কও করেন না অনেকে। নিয়ম মেনে চলেন অন্যদের মতো। পাশাপাশি নিষ্ঠা ভরে দেবীর পুজো করা। যেহেতু সরস্বতী মন্দির সেই অর্থে চোখে পড়ে না, তাই বসন্ত পঞ্চমীতে সরস্বতী আরাধনার দিনেই সকলে বিশেষ নিয়মের মধ্যে থাকে। তবে শিক্ষা জগতে যে অরাজকতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে তাতে ভক্তিভরে দেবীর পুজো করলেও বিশেষ লাভ হয়ত হবে না।