রথ বললেই পুরীর কথা মনে আসে। কিন্তু পুরীর মন্দির শুধুমাত্র রথের জন্যই বিখ্যাত নয়। ঘটা করে দুর্গাপুজোও হয় সেখানে। তাও আবার শ্রী মন্দির চত্বরেই। কিন্তু আলাদা করে দুর্গামূর্তি আনা হয় না। তাহলে, কীভাবে হয় দেবী দুর্গার আরাধনা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
আশ্বিনের শারদপ্রাতে দিকে দিকে বেজে ওঠে আগমনীর সুর। উৎসবের আনন্দে মাতে গোটা বাংলা। তবে স্রেফ এই রাজ্য নয়, গোটা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটা করে দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হয়। তার মধ্যে রয়েছে পুরীর মন্দিরও। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। শ্রীমন্দির চত্বরেই ঘটা করে দেবী দুর্গার আরাধনা চলে পুজোর চারদিন। তবে অন্যান্য জায়গার মতো দুর্গামূর্তি আনা হয় না। শ্রী মন্দিরে থাকা বিমলা দেবীর মন্দিরে এই পুজো হয়।
জগন্নাথ শ্রী বিষ্ণুর রূপ। বৈষ্ণব হিসেবেই তিনি সর্বজনবিদিত। কিন্তু তাঁর মন্দিরে রয়েছে দেবী মহামায়ার মন্দির। যা সতীপীঠেরও অন্যতম। এই মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী বিমলা শ্রী মন্দিরের শক্তিস্বরূপা। আর সেখানেই প্রতি বছর আয়োজন করা হয় দুর্গাপুজোর। পুরাণমতে, এখানে সতীর ডান পায়ের কড়ে আঙুল পড়েছিল। যদিও অনেকেই এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। বলা হয়, এই দেবীর ভৈরব স্বয়ং জগন্নাথ। এক্ষেত্রে তাঁর প্রকাশ শিবরূপে। আর শ্রীমন্দিরে তাঁরা শিব-শিবানী হিসেবে অবস্থান করেন। জগন্নাথের সঙ্গে তাঁরও নিত্যপূজার ব্যবস্থা থাকে। দেওয়া হয় ভোগ। রথের সময় প্রভু মন্দির ছেড়ে গুণ্ডিচা গেলেও বিমলা মন্দিরের পুজো বন্ধ হয় না।
একইভাবে দুর্গাপুজোর সময়টা আলাদাভাবে দেবী বিমলার পুজোর ব্যবস্থা হয়।
দেবী বিমলা ভক্তিকামী। ভগবদ-অভিলাষী মানুষোকে পবিত্র করেন তিনি। তাঁর মূর্তির রূপ মহিষমর্দিনী। অর্থাৎ দেবী দুর্গার যে সনাতনী রূপ মণ্ডপে দেখা যায়, দেবী বিমলাও সেই রূপেই বিরাজমানা। সারা বছর দেবীর পুজো হয় তন্ত্রমতে। মূল উৎসব হয় দুর্গাপুজোর সময়। আশ্বিন মাসে টানা ষোলো দিন বিভিন্ন রূপে দেবীকে অর্চনা করা হয়। বছরের অন্যান্য দিন জগন্নাথের মতো নিরামিষ ভোগ তাঁকে অর্পন করা হয়। কিন্তু দুর্গাপুজোর সময় তাঁকে আমিষ ভোগ নিবেদনের নিয়ম রয়েছে। বিশেষভাবে স্থানীয় কুণ্ড থেকে মাছ এনে ভোগ নিবেদন করা হয় দেবীকে। শোনা যায়, পুজোর সময় দেবী মন্দিরে মেষ বলির চল রয়েছে। খুবই গুপ্ত পদ্ধতিতে এই সময় দেবীর পুজো হয়। বৈষ্ণব মন্দিরের মেঝেতে সেই মেষ স্পর্শ করানো হয় না। বাঁশের সিঁড়ি ব্যবহার করে বিশেষ ভাবে দেওয়া হয় বলি। এই সময় মন্দিরে প্রবেশাধিকার পান না মহিলারা। মনে করা হয়, দেবীর উগ্র রূপ তাঁরা সহ্য করতে পারবেন না। তাই এই নিয়ম চালু রয়েছে মন্দিরে। এমনই আরও অনেক কিংবদন্তি প্রচলিত রয়েছে দেবী বিমলা সম্পর্কে। বলা হয়, জগন্নাথ মন্দির প্রতিষ্ঠার বহু আগে থেকেই ওই স্থানে দেবী বিমলার মন্দির রয়েছে। বরং তাঁর বদান্যতাতেই ত্রিমূর্তি শ্রীমন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হন। দূরদূরান্ত থেকে শ্রী মন্দিরের এই দেবীকে দর্শন করতে আসেন ভক্তরা। আর দেবীর কৃপায় সুখ সমৃদ্ধি লাভ করেন সকলে।