মন্দিরের অন্দরে সাজানো রয়েছে একটা খেলনা পুতুল। আকারে বহরে যা একেবারেই বড় নয়। দেখতেও অন্তত দেবতার মতো নয়। বিশেষত্ব বলতে একটাই, মানুষের মতো পুতুলটিরও মাথার চুল বাড়ে। কী ভাবছেন, ভূতের সিনেমার গল্প শোনাচ্ছি? একেবারেই না। এমন পুতুলের দেখা সত্যি সত্যিই পাবেন। তার জন্য কোথায় যেতে হবে? আসুন শুনে নিই।
মন্দিরে পুজো হয় দেবতার। একথা সকলেরই জানা। কোথাও ভূতের আরাধনা হয় শুনেছেন? অবাক লাগলেও সত্যি। জাপানে রয়েছে এমন এক মন্দির যেখানে আরাধ্য আসলে একটা ভূত। নিশ্চয়ই ভাবছেন, ভূত তো চোখে দেখা যায় না! তাহলে কীভাবে তার পুজো হয় ওই মন্দিরে?
আরও শুনুন: সন্তানের স্মৃতিতেই বিয়ের উদ্যোগ যুগলের, নবদম্পতির ছবিতে দেখা মিলল ‘অশরীরী’ মেয়েরও
আসলে, এখানে ভূতের বাস এক খেলনা পুতুলের মধ্যে। সবটাই প্রায় জনশ্রুতি। কিন্তু ওই যে কথায় আছে, যা রটে তার কিছু তো অবশ্যই ঘটে। এক্ষেত্রেও তেমনটা ধরে নেওয়া যেতেই পারে। কথা বলছি জাপানের হোক্কাইডোর ইওয়ামিজাওয়া শহরের এক মন্দির সম্পর্কে। এখানে ঢুকলে কোনও দেবতার মূর্তি চোখে পড়বে না। বদলে দর্শন মিলবে একটা খেলনা পুতুলের। সেই ওই মন্দিরের আরাধ্য। ঠিক ধরেছেন, এই খেলনা পুতুলের মধ্যেই রয়েছে ভূত। কীভাবে?
আরও শুনুন: পিয়ানো বাজান, ঘোড়াও চড়েন… কলকাতার পুরনো বাড়িতে এখনও নাকি দেখা মেলে ‘তেনাদের’
তাহলে খুলেই বলা যাক। ঘটনাটা বেশ কয়েক বছরের পুরনো। শোনা যায়, জাপানের ওই অঞ্চলে এক সময় ওকিকু নামে এক খুদে ও তার পরিবার থাকতো। ওকিকু বাড়ির একমাত্র মেয়ে। সকলের নয়নের মণি। প্রায়শই তার জন্য উপহার নিয়ে হাজির হতো বাড়ির বড়রা। এমনই একদিন ওকিকুর দাদা বোনের জন্য বিশেষ এক পুতুল কিনে আনে স্থানীয় মেলা থেকে। পুতুলটা বিশেষত্ব ছিল তার চুলে। জাপানে ওই বিশেষ চুলের ধরনকে বলা হত ‘ওকাপা’। এক কথায় বলতে গেলে ঘাড় অবধি চুল ছিল সেই পুতুলের। একবার দেখলে জীবন্ত মনে হত বাধ্য। বোন ওকিকুর ভারি পছন্দ হয় সেই পুতুল। সারাদিন পুতুলটাকে ঘিরেই সময় কাটাত সে। কিন্তু ভাগ্যের কী পরিহাস! বছর ঘুরতে না ঘুরতেই মারাত্মক অসুখে পড়ে ওকিকু। দীর্ঘদিন ভোগার পর মৃত্যুও হয় মাত্র তিন বছরের ওকিকুর। শোনা যায়, জীবনের শেষ দিনগুলোতেও পুতুলটাকে এতটুকু কাছ ছাড়া করত না ওকিকু। এমনকী মারা যাওয়ার সময়ও পুতুলটাকে কাছছাড়া করেনি সে। বাড়ির আদরের মেয়ে চলে যাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই ভেঙে পড়েন পরিবারের অন্যান্যরা। বিশেষ করে ওকিকুর দাদা। মেয়ের স্মৃতি হিসাবে ওকিকুর পুতুলটি বাড়িতেই রেখে দেয় ওই পরিবার। এমনকি বাড়ির মধ্যে একটি বেদিও তৈরি করা হয় পুতুলটা রাখার জন্য। এরপর কিছুদিন একইভাবে কাটে। একদিন বাড়ির সবাই লক্ষ করেন ওকিকুর সেই সাধের পুতুলটার চুল আগের তুলনায় বেড়েছে। পুতুলটি যে ঘরে থাকত, রাতের বেলায় নাকি সেই ঘর থেকেও অদ্ভুত আওয়াজও শোনা যেত। শুধু তাই নয়, ওকিকুর মা নাকি মেয়ের গলা অবধি শুনতে পেতেন। এভাবেই ভূতুড়ে উপদ্রব চলতেই থাকে দিনের পর দিন। বাধ্য হয়ে স্থানীয় পুরোহিতের দ্বারস্থ হন পরিবারের লোকজন। তখনই জানা যায়, এই পুতুলের মধ্যে ওকিকুর আত্মা আটকে রয়েছে। প্রথমে ভয় পেলেও, একথা জানার পর পুতুলের যত্ন নিতে শুরু করেন ওই পরিবারের সদস্যরা। তবে একসময় তাঁরা জাপানের ওই শহর ছেড়ে চলে যান। তখন আর পুতুলটিকে সঙ্গে নেননি। তার ঠাঁই হয় স্থানীয় এক মন্দিরে। সেখানেই এখনও ওই পুতুল রয়েছে। স্থানীয় বিশ্বাস, এখনও পুতুলের চুল বাড়ে। তবে সেই ঘটনা সত্যি না মিথ্যে তা জানতে একবার ঢুঁ মারতে হবে জাপানের ওই মন্দিরে।