ডেভিলস ব্রিজ বা শয়তানের সেতু। এই সেতু নাকি নিজের হাতে গড়ে দিয়েছিলেন শয়তান। তবে এই জায়গার সৌন্দর্য দেখলে তা মনে হবে না। অর্ধচন্দ্রাকার এই সেতুর ছায়া যখন স্বচ্ছ জলে প্রতিফলিত হয়, তখনই ঘটে যায় ম্যাজিক। খুলে যায় অন্য কোনও জগতের দরজা। কোথায় রয়েছে ম্যাজিকাল সেতু? শুনে নিন।
খালি হাতে বৃত্ত আঁকতে গিয়ে কত নাকানিচোবানিই না খেতে হয়েছে ছোটবেলায়। তার পরে সেই সমস্যার সমাধান করে দিয়েছিল জ্যামিতি বক্সের কম্পাসখানা। তা কম্পাস ছাড়া যে কেউ এমন নির্ভুল বৃত্ত আঁকতে পারে, তা এই জায়গায় না এলে বিশ্বাসই হবে না। দেখলে মনে হবে কেউ যেন রীতিমতো কম্পাস নিয়ে এঁকেছে গোলখানা। তবে কাগজে নয়, প্রকৃতিরই বুকে আঁকা রয়েছে সে ছবি।
আরও শুনুন: এ নাকি ‘যৌবনের হ্রদ’! রাত নামলেই জ্বলে ওঠে নীল আলো, নেপথ্যে কোন রহস্য?
নামে সে ডেভিলস তথা শয়তানের ব্রিজ। জার্মানির স্যাক্সোনিতে রয়েছে ক্রোমলিউ পার্ক। সেখানকার এই রাকোৎজব্রুক ব্রিজকে দেখলে কিন্তু সে কথাটা একেবারেই মনে হয়না। বরং প্রকৃতির বুকে কে যেন সেই শকুন্তলার আংটিখানা রেখে দিয়ে চলে গিয়েছে বলে ভুল হয়। জলে ছায়া পড়ে অর্ধবৃত্ত থেকে পূর্ণবৃত্তের আকার নেয় ব্রিজখানা। তখন তারই রূপই আলাদা।
না, প্রাকৃতিক ভাবে নয়। মানুষের হাতেই ১৮৬০ সালে তৈরি হয়েছিল ব্রিজটি। ফ্রেডরিক হারমন রটসজিক বলে এক ব্যক্তি তৈরি করেছিলেন সেতুটি। তিনি ছিলেন ক্রমলুর এক নাইট অর্থাৎ যোদ্ধা। তবে যোদ্ধা হওয়ার পাশাপাশি প্রকৃতির উপরেও ছিল তাঁর নিদারুণ টান। আর তারই ফলস্বরূপ দারুণ সুন্দর ওই ব্রিজটি তৈরি করান ফ্রেডরিক।
স্থানীয় ভাবে ওই দ্বীপটি পরিচিত রাকোৎজব্রুক বা তুফলব্রুক নামে। জার্মানিতে তুফল শব্দটার অর্থও কিন্তু শয়তান। তবে এই নামের পিছনে কারণটা কী তা আজও ঠিক করে জানা যায়নি। যদিও স্থানীয়রা মনে করেন, এই সেতু বাঁধতে সাহায্য করেছিলেন খোদ শয়তান। আসলে প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে যা কিছু তৈরি হত, তাই শয়তানের হাতে তৈরি বলে মনে করা হত। আরও একটি মত, ওই সুন্দর সেতুটি নাকি একা হাতে মানুষ তৈরি করে উঠতে পারেননি। সাহায্য নিতে হয় শয়তানের। সেসময় নাকি শয়তানের সঙ্গে সেতুর কারিগড়ের একটি চুক্তি হয়।
আরও শুনুন: ১০ বছর ধরে টানা ঘুম! কুম্ভকর্ণকেও হার মানিয়েছিল এই মেয়ে
কী সেই চুক্তি? শয়তান নাকি ব্রিজ গড়ে দেওয়ার পরিবর্তে চেয়ে বসেছিল একটি আত্মা। প্রথম যে ব্যক্তি ওই ব্রিজটি পার হবেন, তাঁর আত্মাটি নিজের সঙ্গে নিয়ে যাবেন শয়তান।
তা সেই চুক্তিতে রাজি হয়ে যান সেতুর কারিগড়। ব্রিজটি গড়ে দেয় শয়তান। এবার সেতু পার হওয়ার পালা। কিন্তু কেউই আর সেতু পার হতে চান না। অবশেষে কয়কজন বুদ্ধি দিলেন, একটি কুকুরকে পাঠিয়ে দেওয়া যাক সেতু পারাপারের জন্য। কিন্তু এ কথায় রাজি হলেন না কারিগর। বরং তার বদলে নিজেই পার হয়ে গেলেন ওই ব্রিজ। সেই থেকেই সেতুটির অমন নাম।
তবে যতই শয়তানের ব্রিজ বলা হোক না কেন, পাথরের তৈরি ওই ব্রিজের ছায়া পড়ে নদীর স্বচ্ছ জলে এমন মায়াবী বৃত্তের জন্ম হয়, যা দেখলে অন্য কোনও জগতের প্রবেশদ্বার বলেই মনে হয় সেটাকে। আর সেই দৃশ্য স্বর্গের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। ওই ডেভিলস রিং দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন পর্যটকেরা। তবে এখন আর তাঁদের এই ব্রিজের তলা দিয়ে যাতায়াত করতে দেওয়া হয় না। এমনকি ওই সেতুকে ছুঁয়ে দেখাও বারণ। তবে দূর থেকে আপনি স্বাদ নিতেই পারেন সেই ঐতিহাসিক ব্রিজের। মাঝখানে ওই সেতুটি সংরক্ষণে বেশ কিছু উদ্যোগ নেন স্থানীয় প্রশাসন। সারাইয়ের কাজও হয়েছিল বেশ কিছুটা। ফ্রেডরিক হারমন নামে ওই যোদ্ধা শুধু সেতুটিই নয়, গোটা পার্কটিও বানিয়েছিলেন খুব যত্ন করে। টিউলিপ গাছে ভর্তি ওই বাগানটি বিয়ের ভেন্যু হিসেবেও বেশ বিখ্যাত। এমন ডেভিলস ব্রিজ পৃথিবীর আরও বেশ কিছু জায়গায় রয়েছে। তবে জার্মানির এই ব্রিজটির মতো অপূর্ব সুন্দর সেগুলির কোনওটাই নয়। উনিশ শতকে বানানো এই সেতু আজও যেন পৃথিবীর কাছে এক আশ্চর্য।