এই সমুদ্রের নাম শুনলেই রীতিমতো আতঙ্কে শিউরে ওঠেন জাহাজচালকেরা। ভুল করে কোনও জাহাজ এখানে ঢুকে পড়লেই নাকি তাকে গিলে নেয় এই ভয়ংকর সাগর। কিন্তু কেন চালু রয়েছে এমন কিংবদন্তি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক এই অভিশপ্ত সমুদ্রের কথা।
প্রকৃতি তার নিজের খেয়ালে এমনই কিছু অদ্ভুত সৃষ্টি করে যার কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া কঠিন। তেমনই একটি ব্যতিক্রম এই সারগ্যাসো সাগর। যে কোনও জাহাজের কাছে যে সাগর আতঙ্কের মতো। কারণ এই সাগরে একবার ভুল করে যদি ঢুকে পড়ে কোনও জাহাজ, তবে তার এগোনো বা পিছনোর কোনও উপায় থাকে না। প্রাচীন যুগে যখন যোগাযোগ ব্যবস্থার বিশেষ উন্নতি হয়নি, তখন এই সমুদ্র গিলে নিয়েছে এমন একাধিক জাহাজকেই। আসলে কোনও দিকেই না এগোতে পেরে, একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকেছে জাহাজ। আর মৃত্যুর প্রহর গুনেছেন তার ভেতরের আরোহীরা।
আরও শুনুন: রঙিন ফুলে ঢাকা, অথচ সায়ানাইডের থেকে ৬০০০ গুণ বিষাক্ত পদার্থ মেলে এই গাছে
কিন্তু কেন ঘটে এমনটা? আসলে নামে সাগর হলেও এ আসলে এক বদ্ধ ডোবার মতো। এখানে কোনও স্রোত নেই। আর সেই কারণেই এখানে জাহাজ চলতে পারে না। উপরন্তু এই সমুদ্র ভরে আছে এক বিশেষ ধরনের শৈবাল। কোনও স্রোত না থাকার কারণেই এখানে শৈবালের বাড়বাড়ন্ত। সারগাসম নামে এই শৈবালের আধিক্য দেখা যায় বলেই এই সাগরের নাম সারগ্যাসো। একে জলের স্রোত নেই, তার উপরে এই শৈবালের পুরু স্তরে আটকে যায় জাহাজ। আর সেই কারণেই এই সারগ্যাসো সাগর নাবিকদের কাছে মূর্তিমান বিভীষিকা।
দৈর্ঘ্য প্রস্থের দিক দিয়ে প্রায় কয়েক হাজার কিলোমিটার জুড়ে এর বিস্তৃতি। কিন্তু তবুও কেন এই সাগরের জলে স্রোত নেই? আসলে আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে বইতে থাকা চার ভিন্ন ধরনের স্রোতের ফলেই সৃষ্টি হয়েছে এই অদ্ভুত সাগরের। যা ক্রমাগত চক্রাকারে ঘুরেই চলেছে সমুদ্রের অভ্যন্তরে। ফলত প্রবাহহীন অবস্থায় এক নতুন তীর বিহীন সাগরের সৃষ্টি হয়েছে। হ্যাঁ, কথায় আছে সমুদ্র এতই বিশাল যে তার এক পারে দাঁড়িয়ে অন্য পার দেখাই যায় না। কিন্তু দেখা না যাক, সত্যিই ওপারে যে কিছু আছে তার প্রমাণ দেয় মানচিত্র। তবে এই সাগরটি সেদিক থেকেও ব্যতিক্রম। কারণ পৃথিবীতে এটি একমাত্র সমুদ্র, যার কোনও তীর নেই।
আরও শুনুন: অকূল সমুদ্রে একা টিকে থাকার লড়াই, ৪০০ দিন পেরিয়ে ঘরে ফিরেছিলেন ‘জয়ী’ ব্যক্তি
একাধিক জাহাজ এই সাগরের ফাঁদে আটকে পড়ে আর বেরোতে পারেনি। বেশ কিছু বইয়েও উল্লেখ রয়েছে সে কথার। আর সেখান থেকেই এই সাগরকে ঘিরে গড়ে উঠেছে গুপ্তধনের মিথও। অনেকেই মনে করেছেন, এখানে রয়ে গিয়েছে একাধিক বাণিজ্যতরী, আর তার গর্ভে আজও রয়ে গিয়েছে অমূল্য সম্পদ। কিন্তু সেই সম্পদের খোঁজে গেলে যে নিজের প্রাণও বিপন্ন হবে, সে কথা কে না জানে! তাই সারগ্যাসো সাগরের অভিশাপ আর সম্পদ, দুই-ই এখনও ঢাকা রহস্যের কুয়াশায়।