স্রেফ মাছ-মাংস-ডিম নয়। পেয়াজ-রসুন-মুসরডাল কিছুই থাকবে না খাদ্যতালিকায়। সপ্তাহের নির্দিষ্ট কিছুদিন এই নিয়ম মেনে চলেন অনেকেই। কিন্তু এর কি সত্যিই কোনও বাখ্যা রয়েছে? আসুন শুনে নিই।
রোজ কী খাওয়া হচ্ছে তার প্রভাব শরীরের উপর পড়বেই। সেই হিসেবে শাস্ত্রে বিভিন্ন পুজোয় নিরামিষ খাওয়ার উল্লেখ মেলে। এমনকি একাদশী সহ কিছু ব্রতের ক্ষেত্রে নিরম্বু উপবাসেরও নিয়ম রয়েছে। তবে পুজোর কথা বাদ দিলেও, সপ্তাহের নির্দিষ্ট কিছুদিন নিরামিষ খাওয়ার পরামর্শ দেন অনেকেই।
আরও শুনুন: স্মার্টফোন আসক্তিতেই যৌন ক্ষমতা হারাচ্ছে পুরুষ, কেন এমন দাবি বিশেষজ্ঞদের?
জ্যোতিষমতে, রাশিচক্রের উপর নির্ভর করে আমাদের ভাগ্য। আর প্রতিটি রাশির একজন অধিপতি রয়েছেন। সেই হিসেবেই সপ্তাহের আলাদা আলাদা দিনে নির্দিষ্ট রাশির জাতক জাতিকার নিরামিষ খাওয়ার নিয়ম। তার আগে জেনে নেওয়া যাক কোন রাশির অধিপতি গ্রহ কে?
জ্যোতিষ শাস্ত্রমতে গ্রহের সংখ্যা ৯টি। আর রাশির সংখ্যা ১২। সেইসঙ্গে রয়েছে ১২টি লগ্নও। নির্দিষ্ট রাশির যেমন নির্দিষ্ট অধিপতি গ্রহ রয়েছে। তেমন লগ্নের ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট অধিপতি রয়েছে। যেমন রবি, চন্দ্র, বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি এই সাতটি গ্রহই ১২টি রাশির অধিপতি। তবে লগ্ন অনুযায়ী ঠিক হয় গ্রহ শুভ না অশুভ। তাই লগ্নের ভত্তিতেই নির্বাচন শ্রেয়। যেমন, মেষ লগ্নের অধিপতি মঙ্গল, বৃষের ক্ষেত্রে শুক্র, মিথুন লগ্নের অধিপতি বুধ, কর্কট চন্দ্র, সিংহ লগ্নের অধিপতি গ্রহ রবি। আবার কন্যা লগ্নেরও অধিপতি বুধ। তুলা ও ধনু শুক্র, বৃশ্চিকের ক্ষেত্রে লগ্ন অধিপতি হলেন মঙ্গল। ধনু লগ্নের লগ্ন অধিপতি বৃহস্পতি, মকর এবং কুম্ভের ক্ষেত্রে শনি গ্রহ। আর মীন লগ্নের অধিপতি শুভ গ্রহ। সেই হিসেবে সপ্তাহের কোন দিন নিরামিষ খাওয়া হবে তা নির্দিষ্ট করেন জ্যোতিষীরা।
আরও শুনুন: পুজোয় বেলাগাম খাওয়াদাওয়া, ছুটি শেষে শরীরকে ডিটক্স করবেন কোন উপায়ে
সপ্তাহে দিনের সংখ্যা সাত। সেই হিসেবে শুরুর দিন যদি রবি ধরা হয়, তাহলে এইদিনটা সিংহ লগ্নের জাতকরা নিরামিষ খেতে পারেন। জ্যোতিষমতে এই বার পালনে প্রসন্ন হন রবিদেব। স্রেফ রাশি অধিপতি হিসেবে নয়, যাদেরই রবির স্থান পোক্ত নয়, তাঁরা এইদিন নিরামিষ খেয়ে ওই গ্রহকে তুষ্ট করতে পারেন। সেইসঙ্গে এটি সূর্যের বার। তাই নিষ্ঠাভরে রবিবার দিনটি পালন করলে তুষ্ট হন সূর্যদেবও। সোমবার চন্দ্রদেবের। তাঁকে তুষ্ট করতে এইদিন নিরামিষ খান। একইসঙ্গে সোম অর্থে এইদিনটি দেবাদিদেব মহাদেবেরও প্রিয়। সেই কারণে শ্রাবণ মাসের সোমবার নিয়ম করে নিরামিষ খান শিবভক্তরা। এরপর মঙ্গলবার। নাম থেকেই স্পষ্ট, এদিনের অধিপতি মঙ্গল। একইসঙ্গে এইদিনটি পালনে তুষ্ট হন বিষ্ণু অবতার নৃসিংহদেব। তাই বিপদের হাত থেকে মুক্তি পেতে নিরামিষ খেতে পারেন। বুধবার বুধগ্রহের। এদিন শুদ্ধাচারে কাটালে বুদ্ধির বিকাশ ঘটে। শিল্পী ও ক্রিয়াশীল মানুষদের বুধবার নিরামিষ খাওয়া বিশেষ লাভদায়ক হতে পারে। বৃহস্পতির ক্ষেত্রে অবশ্যই দেবগুরু বৃহস্পতির নাম উঠে আসে। সেইসঙ্গে এইদিন দশ মহাবিদ্যার অন্যতম মা তারার দিন। তাই নিয়ম মেনে বৃহস্পতিবার পালনে সামগ্রিক ভাবে সুখ নেমে আসে জীবনে। আবার বৃহস্পতিবার দেবী লক্ষ্মীর আরাধনার দিন। তাই অনেক গৃহস্থ বাড়িতেই এদিন নিরামিষ খাওয়ার চল রয়েছে। শুক্রের অধিপতি স্বয়ং শুক্রগ্রহ। এদিন ইষ্টের নামজপ বিশেষ ফলদায়ক। আবার শনিবার দিনটি গ্রহরাজ শনির জন্য নির্দিষ্ট। তাঁর কোপে ভয়ংকর ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তাই তাঁকে চটালে রক্ষে নেই কারও। শনির সাড়ে সাতি চললে, বা রাশিচক্রে শনির অবস্থান ঠিক জায়গায় না থাকলে অবশ্যই এইদিনটি পালন করুন। তবে জ্যোতিষের এই ব্যাখ্যার বাইরেও নিরামিষ খাওয়ার নিদান দেন চিকিৎসকরাও। তেমনভাবে নির্দিষ্ট কোনও দিন না হলেও, সপ্তাহে অন্তত একটা দিন নিরামিষ খেতে বলেন অনেকেই। তবে সেক্ষেত্রে অত বাদ বিচার নেই। প্রয়োজনে হালকা খাবার খান সপ্তাহের যে কোনও দিন তাহলেও চলবে। তবে জ্যোতিষে বিশ্বাস থাকলে নিজের রাশি অনুযায়ী সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে নিরামিষ খেতে পারেন। যদিও বেশ কিছু শাস্ত্রে নিরামিষ আহারের কোনও উল্লেখই পাওয়া যায় না। বরং আত্মাকে জোর করে অতৃপ্ত রাখার বিরোধিতায় করে সেইসব শাস্ত্র। তাই সপ্তাহের সাত দিন নিরামিষ খেলেই যেমন ভাগ্যের চাকা খুলে যাবে না, তেমন এর উলটোটা করলেও বিরাট কোনও ক্ষতি হবে না। ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস এবং নিজের প্রতি আস্থা রেখে সৎ পথে কাজ করে গেলেই জীবনে সার্বিক উন্নতি সম্ভব।