এ যেন এক অভিশপ্ত রেসিপি। যা রান্না করতে গেলেই ঘটে যায় মারাত্মক দুর্ঘটনা। এই পদ রান্না করতে গেলেই জখম হতে হয় রাঁধুনিকে। কেউ কেউ পাঞ্জা লড়েন মৃত্যুর সঙ্গেই। শুধুমাত্র এই রেসিপিটির কারণেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল একটা আস্ত বইকেও। কী রহস্য রয়েছে এর নেপথ্যে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
রান্না করতে গিয়ে জখম খোদ রাঁধুনিই। একবার দুবার নয়, বারবার ঘটেছে এমন ঘটনা। আর তাও কিনা বিশেষ একটি পদের ক্ষেত্রেই। তাই ভয়ে ভয়ে এই খাবারটি রান্নার ঝুঁকি নিতেন না আর কেউ। এমনকি যে রান্নার বই থেকে ওই রেসিপিটি পাওয়া গিয়েছিল, সেই বইটিকে নিষিদ্ধ করার পথে হাঁটে প্রশাসন। সকলেরই ধারণা হয়ে গিয়েছিল, ওই বিশেষ রেসিপিটি আসলে অভিশপ্ত।
আরও শুনুন: লাঠি দিয়ে পুরুষ সঙ্গীদের আঘাত করেন মহিলারা, দোল উদযাপনের অন্য এক ধারা ‘লাঠমার’
কী রহস্য রয়েছে এর নেপথ্যে? তাহলে খুলেই বলা যাক।
সত্তরের দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত হয়েছিল একটি রান্নার বই। নাম “উইমেন’স ডে ক্রকারি কুইজিন”। অর্থাৎ কিনা, নারী দিবস উদযাপনের জন্য বিভিন্ন রান্নাবান্নার রেসিপি। শুধু আমেরিকাই নয়, দেশবিদেশের হরেক রকমের রেসিপিই ঠাঁই পেয়েছিল এই বইয়ে। আর তার সঙ্গেই ছিল একেবারে অভিনব কিছু নতুন পদ। তেমনই একটি পদ রান্না করতে গিয়েই বিপত্তির মুখে পড়েছিলেন রাঁধুনিরা।
আসলে বইটির একটি রেসিপি ছিল ‘সিল্কি ক্যারামেল স্লাইস’। দু-পাতা জুড়ে লেখা এই রেসিপি যে একের পর এক পাকা রাঁধুনিকে ধরাশায়ী করে দেবে, সে কথা কে জানত! কিন্তু দেখা গেল, ওই পদটি রান্না করতে গেলেই প্রেশার কুকার বার্স্ট করে সবসময়ই। আর গরম খাবার ছিটকে পড়ে মারাত্মক জখম হন রাঁধুনিরা। একাধিকবার যখন একই ঘটনা ঘটল, তখন তো আর তাকে বিক্ষিপ্ত ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কেউ কেউ সন্দেহ করেন, এই রেসিপির মধ্যে আসলে কোনও বিস্ফোরক পদার্থ তৈরি করার ফর্মুলা রয়েছে, আর তা ফেটে গিয়েই এইভাবে আহত হচ্ছেন রাঁধুনিরা। অবস্থা সামাল দিতে তড়িঘড়ি বিজ্ঞপ্তি দেয় বইটির প্রকাশনা সংস্থা। জানায়, কেউ যেন এই পদটি রান্নার চেষ্টা না করেন। শেষমেশ বইটি নিষিদ্ধ করার পথে হাঁটে প্রশাসন।
কিন্তু আসলে কী ঘটেছিল, সেই রহস্য জানা যায় এরপরেই। ওই রেসিপিটি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেন, রান্নার একটি ধাপেই যত গোলমাল। তাতে একটি কনডেন্সড মিল্কের টিনকে ৪ ঘণ্টা ধরে প্রেশার কুকারের মধ্যে রেখে গরম করতে হত। একে টিনের পাত্র, তার উপরে কাচের ঢাকনা। ওই উচ্চ তাপমাত্রা এবং চাপের কারণে একসময় বিস্ফোরিত হত টিনটি। সঙ্গে ফেটে পড়ত প্রেশার কুকারের কাচের ঢাকনাও। জানা গিয়েছিল, এই গণ্ডগোলের জন্য দায়ী আর কেউ নয়, খোদ ছাপাখানার ভূত। যদি ঠান্ডা জলের মধ্যে টিন বসিয়ে তা প্রেশার কুকারে গরম করা হয়, সেক্ষেত্রে টিনের তাপমাত্রা বিস্ফোরণের অবস্থায় যাবে না। রেসিপির এই কথাটিই বাদ পড়ে গিয়েছিল বইয়ের পাতা থেকে। আর তার জেরেই যত গণ্ডগোল।
আরও শুনুন: ‘আধুনিক’ মেয়েদের ধূমপান না-পসন্দ, অনুমতি ছাড়াই অচেনা মহিলার ছবি পোস্ট করে বিপাকে ব্যক্তি
সত্যিটা জানার পর অবশ্য রেসিপি আর বই, দুয়ের উপর থেকেই নিষেধাজ্ঞা উঠে গিয়েছিল। তবে ‘অভিশপ্ত’ তকমা আর মুছে ফেলতে পারেনি ওই খাবারটি।