শৌচালয়। ছোট হলেও সমস্যা নেই, প্রয়োজন মেটা নিয়ে কথা। কিন্তু সবাই বুঝলে তো! যতই সিনেমা হোক, সরকার বলুক, শৌচালয় গড়তে বেজায় অনীহা অনেকের। কিন্তু এঁরা যদি জানতেন, শৌচালয় স্রেফ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য নয়! অবাক হলেন তো? বিষয়টা খুলেই বলা যাক।
ব্যাঙের মতো পেঙ্গুইনের রক্তও কি ঠান্ডা? চিংড়ির শরীরে রক্তাল্পতা হতে পারে? কোন বয়সের পর আর লম্বা হয় না জিরাফ? টিকটিকির পায়ে কী আঠা থাকে? প্রশ্নগুলো অবান্তর। কিন্তু ভাবনার ব্যারিকেডে এইসব ঢুঁ মারলে কি আর আটকানো যায়! এদিকে প্রকাশ্যে কাউকে বলার উপায় নেই, সবাই হাসবে। সহায় হতে পারে কেবলমাত্র শৌচাগারের দেওয়াল, কিংবা আয়না, বালতি, মগ- সবকিছুই।
আরও শুনুন:
World Storytelling Day: তুমি তোমার গল্প বলো, আমি আমার গল্প বলছি…
‘ইউরেকা, ইউরেকা!’ স্নানঘর থেকে চিৎকার করতে করতে বেরিয়ে এলেন আর্কিমিডিস। সেখানেই নাকি যুগান্তকারী এক সূত্র আবিষ্কার করেছেন তিনি। ইতিহাসের পাতায় এই গল্প বেশ জনপ্রিয়। সবাই যদিও বিশ্বাস করেন না। কিন্তু তাতে কী! স্নানঘর যে এমন হাজার হাজার ভাবনার আবিষ্কারের আঁতুড়ঘর হয়ে উঠতে পারে, তার প্রমাণ দেয় বিজ্ঞানও। তথ্য বলছে, শৌচালয় বা স্নানঘরেই আসল মাথা খোলে। মানে এখানে বসে থেকে কিছু নিয়ে ভাবলে, তার সমাধান সূত্র বেরিয়ে অনায়াসে। মনোবিজ্ঞানের সমীক্ষা বলছে প্রায় ৭২ শতাংশ মানুষ কর্মক্ষেত্রের বাইরে বিশেষ কিছু জায়গায় নতুন ভাবনার হদিশ পান। আর সেই জায়গার তালিকায় প্রথমে রয়েছে টয়লেট। শুনতে অবাক নাই লাগতে পারে। কারণ একথা বাস্তবেই সত্যি। গান হোক বা আবৃত্তি, খোলা মনে কোনও ভাবনা চিন্তা ছাড়া করে ফেলার জায়গা এই শৌচালয়। কেউ নেই সামনে, কেউ ভুল ধরবে না, কাজেই নিজেকে মেলে ধরতে কোনও বাধা নেই। ভাবনার ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। ঠিক কী নিয়ে ভাবনা চলছে তা জানতে পারবে না কেউ, সুতরাং যতখুশি ভাবো সমস্যা নেই।
আরও শুনুন:
ভাবলে ভুল হবেই…তাতে ভাবনা বন্ধ হবে কেন?
অনেকেরই শৌচালয়ে দীর্ঘক্ষণ সময় কাটানোর অভ্যাস রয়েছে। সকলের যে শারীরিক সমস্যা রয়েছে, এমন নয়। বরং এখানে বসে বিশ্ব সংসারে খুঁটিনাটি নিয়ে ভাবতে পছন্দ করেন না, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া ভার। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে চিন্তার পরিধি বদলায়, এক থাকে স্রেফ শৌচালয়। ছোটবেলায় যেখানে বসে স্কুলের পর আচার কিনতে যাওয়ার প্ল্যান হয়েছে, সেখানে বড়বেলা ছকে নিতে পারে অফিস কামাইয়ের ফন্দি। কেউ কেউ এখানে বসে খবরের কাগজ পড়েন, কারও আবার সঙ্গে থাকে চারমিনার। এ জুটি বিখ্যাত, হার মানাতে পারে বলিউডের তাবড় নায়ক-নায়িকাকেও। মোটেও এমনটা স্বাস্থের জন্য ভালো না, কিন্তু ভাবনার জন্য এর বিকল্প নেই। ফেলুদার কথায় বললে, ‘বুদ্ধির গোড়ায় একটু ধোঁয়া দেওয়া…’।
কিন্তু এমনটা কেন হয়?
আসলে, শৌচাগার হল মুখোশহীন থাকার সবথেকে নিরাপদ জায়গা। কেউ দেখছে না, কারও দেখা সম্ভব না, সেই কারণে নিজেকে নিজের মতো করে রাখতে পারেন যে কেউ। তাই ভাবনার বিকাশ অনায়াসে। গালে হাত দিয়ে বসে বসেই ভাবতে হবে, এমনটা নয় মোটেও। স্নান করতে করতেও ভাবনা মাথায় আসতেই পারে। তবে সমীক্ষা বলছে, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে দিতেই সবথেকে বেশি ভাবতে পারেন যে কেউ। তা সে যতই অবান্তর ভাবনা হোক, এখানে সবকিছুর ছাড় রয়েছে। এছাড়া স্নানের সময় বা শৌচের সময় ডোপামিন নামে এক হরমোন ক্ষরণ হয়। যা মনের পরিবর্তন ঘটাতে পারে নিমেষের মধ্যে। ভালোর দিকে অবশ্যই, মানে এই হরমোন এত সহজে মন ভালো করে দেয়, কোনও জটিল সমস্যার সমাধানও হয়ে যেতে পারে। আরও একটা কারণ রয়েছে, এবং সেটাই হয়তো সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, রাগ বা দুঃখের প্রকাশও শৌচাগারে ঢুকেই দেখাতে চান অনেকে। কেউ দেখছে না, তাই কাঁদতে লজ্জা নেই। আবার, কেউ শুনছে না বলেই উচ্চস্বরে চিৎকার করা যেতে পারে। আর এমনটা করে ফেললে মন হালকা হতে বাধ্য। ব্যাস, তখনই ভাবনারা ভিড় করবে মনে। মনের অবস্থাও তখন অনেকটা ঠিক, কাজেই ভাবনাদের প্রশ্রয় দিতেও অসুবিধা হবে না। তাই হয়তো, বিশ্ববিখ্যাত ভাস্কর রদ্যাঁ-র ‘দ্য থিঙ্কার’ মূর্তিটির ‘টয়লেট’ সংস্করণ রয়েছে। সেখানে ওই মূর্তিটিকে বসানো হয়েছে টয়লেট সিটের উপর, একই ভঙ্গিমায়। এ বিষয়টা হয়তো নিছকই মজা, কিন্তু শৌচাগার যে ভাবনার আঁতুড়ঘর তার ইঙ্গিত মেলে এখানেও।