ডিভোর্স মন্দির। এই নামেই সকলে চেনে এই মন্দিরকে। কিন্তু কেন এমন নাম? এর নেপথ্যে রয়েছে এক প্রাচীন কাহিনি। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সম্পর্ক দিন দিন বিষাক্ত হয়ে উঠছে। গৃহহিংসার কবলেও পড়তে হচ্ছে। অথচ সেই সম্পর্ক ছেড়ে বেরোনোর কোনও পথ নেই। এমন নারীদেরই আশ্রয় দিত এই মন্দির। হ্যাঁ, সেই কারণেই ‘ডিভোর্স মন্দির’ নামে পরিচিত জাপানের এই মন্দিরটি। জাপানের কামাকুরা শহরে অবস্থিত এই বৌদ্ধ মন্দিরের আসল নাম অবশ্য মাৎসুগাওকা তোকেইজি মন্দির। তবে ৬০০ বছরের পুরনো এই মন্দিরের সঙ্গে ‘ডিভোর্স মন্দির’-এর নাম জুড়ে রয়েছে এখনও পর্যন্ত।
আরও শুনুন: পড়ে রইল ১১ মাসের সন্তান, কর্ণাটকে ফ্রি-বাসে চড়ে প্রেমিকের কাছে ছুটলেন তরুণী
১২৮৫ সালে এই মন্দির গড়ে তুলেছিলেন এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসিনী। তাঁর নাম কাকুসান শিদ-নি। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১১৮৫ থেকে ১৩৩৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জাপানে মেয়েদের উপর প্রচুর বিধিনিষেধ চাপানো ছিল। আইনি সুযোগসুবিধা পেতে চাইলে মেয়েদের সেইসব নিষেধাজ্ঞা না মেনেও উপায় ছিল না। আর তার মধ্যেই ছিল বিয়ে টিকিয়ে রাখার বিষয়টিও। স্বামীর হাতে মার খাওয়াই হোক, কিংবা স্বামীর অন্য নারীর প্রতি আসক্তিই থাক, অর্থাৎ সম্পর্কে যতই সমস্যা থাকুক না কেন, বিয়ে ভাঙা বা ডিভোর্সের ধারণা ছিল না প্রাচীন জাপানে। ফলে সমস্ত কিছু সয়ে সেই তিক্ত সম্পর্কেই মুখ বুজে পড়ে থাকতে হত মেয়েদের। তার কোনও সুরাহা মিলত না কোনও দিক থেকেই। আর এই অসহায় মেয়েদেরই পাশে এসে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন ওই সন্ন্যাসিনী। তাই এই মন্দিরে ওইসব অসহায় মেয়েদের প্রয়োজনে আশ্রয় দিতেন তিনি। ক্রমে ক্রমে স্বামীর হাতে অত্যাচারিত, নির্যাতিত নারীদের দ্বিতীয় গৃহ হয়ে দাঁড়ায় এই বৌদ্ধ মন্দিরটি। অত্যাচারী স্বামীর কাছ থেকে পালিয়ে এসে এখানেই আশ্রয় নিতেন এমন অনেক নারী। আর এখানেই রোজকার সেই অন্ধকার জীবন থেকে মুক্তি মিলে যেত তাঁদের। পাশাপাশি ছিল নিরাপত্তাও।
আরও শুনুন: এতদিনে কাটল সংশয়, ডিম আগে না মুরগি? ধাঁধার সমাধান বিজ্ঞানীদের
এই নারীরা যাতে বিচ্ছেদের পাকাপোক্ত কোনও দলিল পান, একসময় সেই বিষয়টি নিয়েও উদ্যোগী হয় মাৎসুগাওকা মন্দির। এই ধরনের ডিভোর্স সার্টিফিকেটকে বলা হত সুইফুকু-জি। সেই সার্টিফিকেটের জোরেই পরবর্তী কালে আইনিভাবে স্বামীর থেকে বিচ্ছিন্ন হন অনেক নারী। যাঁরা সমাজের কাছে কোনও আশ্রয় পাননি, সেইসব নারীরা সমাজকে ত্যাগ করা এক সন্ন্যাসিনীর মন্দিরেই আশ্রয় পেয়েছিলেন তাঁদের বিপদের দিনে। তাই এই মন্দিরকে কাকেকোমি-দেরা বলে ডাকতে শুরু করেন তাঁরা, যার অর্থ ‘পলাতক নারীর মন্দির’ বা ‘ডিভোর্স মন্দির’। যদিও আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এই সংক্রান্ত কোনও বিশয়ের সঙ্গে আর যুক্ত নয় এই মন্দিরটি। তবে এখনও তার সঙ্গে জুড়ে থাকা এই নাম আসলে ধারণ করে রয়েছে তার সেই প্রাচীন ইতিহাসকেই।