বয়স ১০০ পেরিয়েছে। চাইলেই ঘরে বসে ভোট দিতে পারেন। কিন্তু না, এই বয়সেও বুথে গিয়েই ভোট দিয়েছেন প্রাক্তন সেনা অফিসার। আর সেই ঘটনাই এই মুহূর্তে সকলের চর্চায়। যেখানে দেশের তরুণদের অনেকেই ভোটদানে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না, সেখানে এই বয়সে বুথে গিয়ে ভোটদান! আসুন শুনে নেওয়া যাক।
লোকসভা নির্বাচনের পাঁচটি দফা পেরিয়েছে। এ প্রসঙ্গে অনেকের দাবি, চলতি নির্বাচনে ভোটদানের হার ক্রমশ কমছে। বা, যতটা আশা করা যায়, ততটা হচ্ছে না। কেউ বলছেন ভিলেন চাঁদিফাটা গরম। আবার কেউ বলছেন নির্বাচনী প্রক্রিয়াতেই ক্রমশ আস্থা হারাচ্ছে জনতা। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের দিকে আঙুল উঠছে আঙুল। অভিযোগ, দেশের যুবরাই ভোটদানে অনিচ্ছুক। সেখানে অদ্ভুত এক ছবি ধরা পড়ল মুম্বইয়ে। দেখা গেল ১০১ বছর বয়সেও বুথে গিয়ে ভোট দিচ্ছেন এক প্রাক্তন সেনাকর্মী।
আরও শুনুন: পাপ, প্রায়শ্চিত্ত, উপবাস: ভোট যেন পঞ্জিকায় বাঁধা শাস্ত্রীয় ধর্মকর্ম
নির্বাচন গণতন্ত্রের উৎসব। আর সেই উৎসবে শামিল দেশের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক কর্তব্য। এ কথা যে দেশের মানুষ ভুলে গিয়েছেন, তা নয়। অথচ নির্বাচনের পাঁচটি দফা পেরোনোর পরও দেখা যাচ্ছে, ভোটদানের হার সেভাবে বাড়ছে না। ফলত, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মনে নতুন সংশয় দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন যে, সামগ্রিক ভাবে হয়তো নির্বাচনের উপরই আস্থা হারাচ্ছেন মানুষ। বিশেষ করে এবারের নির্বাচনে লক্ষাধিক নতুন ভোটার। রাজনীতি সম্পর্কে তেমন জ্ঞান না থাকা এই যুবদের হাতেই ভোটের চাবি রয়েছে, এমনটাই দাবি করেছিলেন বেশ কিছু ভোটকুশলী। কমিশনের তরফেও নতুন ভোটারদের উৎসাহ যোগাতে কম ব্যবস্থা হয়নি। প্রচার থেকে শুরু করে রেস্তরাঁয় ছাড় অবধি দেওয়া হয়েছে। তাতেও যেন লাভের লাভ হয়নি। নির্বাচন নিয়ে সবথেকে হতাশ বোধহয় দেশের তরুণ প্রজন্মই। বিশেষত, যাঁরা প্রথম কি দ্বিতীয়বার ভোট দিচ্ছেন। দেশের ভবিষ্যতের ভার তাঁদের উপরই। তবে, রাজনৈতিক দলগুলি যেভাবে প্রতি মুহূর্তে নিজেদের ভাঙছে, জুড়ছে তাতে বিশ্বাসযোগ্যতায় বড় প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে। এদিকে ভোট দেওয়ার জন্য ততোধিক বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে দেশের প্রবীনদের মধ্যে। এবারের নির্বাচনেই কমিশনের তরফে বয়স্কদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। চাইলেই তাঁরা বাড়ি বসে ভোট দিতে পারেন। সেই সুবিধা বাস্তবে নিয়েওছেন অনেকেই। তবে মুম্বইয়ের প্রাক্তন সেনাকর্মী এসব সুবিধা নিতে নারাজ। বয়স ১০১। তাতে কী! দিব্যি পায়ে হেঁটে কেন্দ্রে পৌঁছে গিয়েছিলেন বুথে। ভোট দিয়েছেন অন্যান্যদের মতোই। এর জন্য মুম্বই পুলিশের তরফে তাঁকে কুর্নিশ জানানো হয়েছে। নেটদুনিয়াতেও কম আলোচনা হয়নি। ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকা কোনও কারণ থাকতে পারে না, এই বৃদ্ধের ছবি দিয়ে এমনটাই বলছেন নেটিজেনরা।
আরও শুনুন: গান্ধীদের বিঁধতে গান্ধীই অস্ত্র! ‘বাপু’র জন্য কেন এত আক্ষেপ মোদির?
শুধু ওই সেনাকর্মী একা নন। নিজে গিয়ে ভোট দিয়েছেন মুম্বইয়ের কাঞ্চনবেন-ও। তাঁরও বয়স ১১২। কিন্তু সেসবের তোয়াক্কা না করে, নিজেই গিয়ে ভোট দিয়েছেন বৃদ্ধা। নেটদুনিয়ায় তাঁকে নিয়েও আলোচনা হয়েছে। দেশভাগ থেকে শুরু করে স্বাধীনতা, বিশ্বযুদ্ধ, জীবদ্দশায় সবই দেখেছেন বৃদ্ধা। স্বাধীনতার পর থেকে ভোট দিয়ে আসছেন। এতদিন বুথে গিয়েই ভোট দিয়েছেন। তাই এবার সুবিধা থাকা সত্ত্বেও বাড়ি বসে ভোট দেননি। অন্যান্যদের মতো তিনিও বুথে গিয়েই ভোট দিয়েছেন। কোথাও গিয়ে এই দুই ঘটনাই যেন নতুন করে ভোটদানের গুরুত্ব বাড়িয়েছে। দেশের নাগরিক হিসেবে এই কাজ যে অবশ্য কর্তব্য তা সকলকে মনে করিয়ে দিয়েছেন দুই প্রোঢ় ভোটার।