তাজমহল নিয়ে সাম্প্রদায়িক বিতর্ক উসকে উঠেছে বারেবারেই। তাজমহলের জায়গায় এককালে ছিল ‘তেজো মহালয়’ নামে একটি শিবমন্দির, এমন দাবিও করেছে কোনও কোনও ধর্মীয় সংগঠন। আদতে কার মালিকানা ছিল তাজমহলের জমিতে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
প্রিয় বেগম মমতাজ মহলের সমাধিসৌধ গড়ার জন্য যে স্থান নির্বাচন করেছিলেন মুঘল সম্রাট শাহজাহান, আদতে সেই জমিটিই নাকি তাঁর মালিকানাধীন ছিল না। এক হিন্দু রাজার জমিতেই সেদিন গড়ে তোলা হয়েছিল তাজমহল। এই দাবির জের টেনে বারবার ঘনিয়েছে বিতর্ক। সম্প্রতি তাজমহলের ‘আসল ইতিহাস’ অনুসন্ধানের দাবি জানানো এক মামলার প্রসঙ্গে ফের সামনে এল সেই জমি ইস্যু। জয়পুরের মহারাজা জয় সিংহের জমিতেই মুঘল সম্রাট শাহজাহান তাজমহল বানিয়েছিলেন বলে দাবি করলেন রাজস্থানের বিজেপি সাংসদ দিয়া কুমারী।
আরও শুনুন: মমতাজের সমাধি ছিলই না আগ্রায়, তবে কেন তাজমহল গড়েছিলেন শাহজাহান?
হিন্দুত্ববাদী কয়েকটি সংগঠনের দাবি, ‘তেজো মহালয়’ নামে একটি শিব মন্দিরের উপরে তাজমহল গড়া হয়েছে। সেই সূত্রে এর আগেও জয়পুর রাজপরিবারের কোনও কোনও সদস্য দাবি জানিয়েছিলেন যে, তাজমহলের জমিতে একসময় তাঁদেরই অধিকার ছিল। এবার সেই দাবি নিয়েই ফের সরব হলেন প্রয়াত মহারানি গায়ত্রী দেবীর নাতনি দিয়া কুমারী। এমনকি তাজমহলের ওই জমির নথিও জয়পুর রাজ পরিবারের কাছে রয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
সত্যিই কি তাজমহল নির্মাণের জন্য রাজা জয়সিংহের জমি অধিগ্রহণ করেছিলেন শাহজাহান?
আরও শুনুন: শাহজাহান একা নন, ‘তাজমহল’ বানিয়েছিলেন আরও অনেকেই! কোথায় কোথায় রয়েছে সেগুলি?
ইতিহাস জানায়, মুঘলদের বিরুদ্ধে রীতিমতো রুখে দাঁড়িয়েছিলেন রাজস্থানের কোনও কোনও রানা। কিন্তু জয়পুর সেদিক দিয়ে ব্যতিক্রম। বরাবরই মুঘল ঘনিষ্ঠ ছিল জয়পুরের রাজপরিবার। রাজা মানসিংহ ছিলেন সম্রাট আকবরের অন্যতম সেনাপতি। সেই সূত্রেই যমুনার তীরের ওই জমি মানসিংহের হাতে এসেছিল বলে জয়পুর রাজপরিবারের দাবি। জানা যায়, তাজমহল গড়ে তোলার জন্য রাজা মানসিংহের বড়সড় বাগানবাড়ি সহ ওই জমিটিকেই মনে ধরেছিল সম্রাটের। সেসময় জয়পুর বংশের রাজার শিরোপা পেয়েছেন মানসিংহের উত্তরাধিকারী জয়সিংহ। মুঘলদের বশংবদ রাজা জয়সিংহ সম্রাটের বাসনার কথা জানা মাত্রই জমিটি তাঁকে উপহার দিতে চেয়েছিলেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। কিন্তু সেই প্রস্তাবে সম্মত হননি শাহজাহান। কারণ ইসলাম ধর্মের নির্দেশ মোতাবেক, দানে পাওয়া বা ছিনিয়ে নেওয়া জমিতে পবিত্র সমাধি নির্মাণ করা অনুচিত। তাই তাজমহল গড়ার জন্য জমি নেওয়ার বিনিময়ে রাজা জয়সিংহকে রীতিমতো ক্ষতিপূরণ দিয়েছিলেন সম্রাট। রাজা ভগবানদাসের হাভেলি ও মান সিংহের ছোট ভাই মাধো সিংহের হাভেলি, আটঘা খান বাজারে রূপসী বেরাগী ও সুরজ সিংহের ছেলের হাভেলি— মোট চারটে হাভেলি জয়সিংহকে হস্তান্তরিত করা হয়। বিকানিরের রাজ্য অভিলেখাগারে পাওয়া একটি দলিল থেকে এই তথ্য জানা যায়। যদিও সেই জমিতে কোনও মন্দির ছিল কি না, তার কোনও উল্লেখ নেই ওই দলিলে। বরং ঐতিহাসিকেরা জানিয়েছেন, ওই রাজবংশে সকল রাজাই মাতৃপূজায় বিশ্বাসী ছিলেন। একমাত্র উনিশ শতকে দ্বিতীয় সওয়াই রাম সিংহকে শিবপূজা করতে দেখা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। সুতরাং ওই জমিতে শিবমন্দির থাকার সম্ভাবনা কতটা, তা নিয়ে সংশয় রয়েই গিয়েছে। কিন্তু এইসব সংশয় সত্ত্বেও আদৌ থামছে না তাজমহল বিতর্ক।