নেই হর্নের শব্দ। মাইক বাজে না কোথাও। একেবারে শান্ত, চুপ, সবকিছু। কিছুক্ষণের জন্য নয়। বরং গোটা একটা দিন। তাও আবার আস্ত একটা দেশ। কিন্তু এমন মৌনব্রত পালনের নেপথ্যে কারণ কী? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
আচ্ছা, যদি একটা দিনের জন্য সবকিছু শান্ত হয়ে যায়, কেমন লাগবে? অতিমারির সময় সে অভিজ্ঞতা অনেকের হয়েছে ঠিকই, কিন্তু নিয়ম করে প্রতিবছর এমনটা পালন করার কথা শুনেছেন? বাস্তবেই হয় এমনটা। একটা গোটা দিন, গোটা দেশ চুপ। এক্কেবারে নিস্তব্ধ। কোনও আওয়াঝ নেই।
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। কথা বলছি, দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্কে। আধুনিক দেশ। প্রযুক্তি, শিক্ষা কোনও দিক থেকেই পিছিয়ে নেই। বরং কে-পপ, কোরিয়ান ড্রামা মতো বিষয় নিয়ে বিশ্বজুড়ে চর্চা চলে। অথচ এই দেশেই রয়েছে এক অদ্ভুত নিয়ম। যা আরও কোথাও পালিত হয় না বললেই চলে। প্রতিবছর নভেম্বর মাসে এক দিনের জন্য লকডাউন থাকে গোটা দেশে। বন্ধ থাকে বৌদ্ধ মন্দিরের ঘন্টাও। এতটাই নিস্তব্ধ থাকে চারদিক যে, একটা আলপিন পড়লেও শব্দ শোনা যাবে। কিন্তু কেন?
:আরও শুনুন:
সঙ্গীতে নেই ধর্মের ভেদ! রামের ভজন গেয়েই পদ্মশ্রী পাচ্ছেন বাতুল বেগম
নেপথ্যের কারণটা বড় অদ্ভুত। আসলে, উন্নত দেশে যে শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, সে কথাই বুঝিয়ে দেয় দক্ষিণ কোরিয়া। আর এই নিস্তব্ধতার কারণও তাই। নভেম্বর মাসের ওই দিনে বিশেষ এক পরীক্ষা থাকে ওই দেশে। পাছে পরীক্ষার্থীদের অসুবিধা হয়, তাই গোটা দেশ নিজেদের মতো করে চুপ হয়ে যায়। ওইদিন দক্ষিণ কোরিয়ায়ে ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষা দেন। স্থানীয় ভাষায় যার নাম ‘সানেয়াং’। প্রতিবছর নভেম্বরের তৃতীয় বৃহস্পতিবার হয় এই ‘সানেয়াং’। তাই দিনটিকে খুব গুরুত্ব সহকারে পালন করে কোরিয়ানরা। জানা যায়, বিশ্বের দশটি কঠিনতম পরীক্ষার মধ্যে এটি একটি। এই পরীক্ষাটির ওপর ভিত্তি করে ছাত্রছাত্রীরা ভবিষ্যতে কী করবে, কোথায় কাজ করবে সেই সবকিছুই ঠিক করা হয়। ১২ বছর কঠিন প্রস্তুতি নিলে এই পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষা চলে কয়েক ঘন্টা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একইসঙ্গে পরীক্ষা হয়। তাই শান্ত থাকতে হয় গোটা দেশকেই। আসলে, এই পরীক্ষা সে দেশে এতটাই জনপ্রিয় যে প্রতিবারই দেখা যায় কারও না কারও আত্মীয় পরিজন এই পরীক্ষায় বসছে। তাই নিজের কাছের মানুষটির সুবিধার কথা ভেবেই মৌনব্রত পালন করেন দক্ষিণ কোরিয়ার বাসিন্দারা। আর তাতেই শান্ত হয়ে যায় গোটা শহর। নিঃসন্দেহে এমন উদ্যোগ প্রশংসার যোগ্য। তবে এতকিছু করেও যে সবাই পরীক্ষায় পাস করে এমন নয়। বরং অর্ধেকেরও বেশি পড়ুয়া ফেল করে। তবু পরীক্ষা না দিয়ে উপায় নেই। তাই সকলেই সকলের সহযোগিতায় দেশের এই বিশেষ পরীক্ষায় অংশ নেন।