জানলা ছাড়া দুটো ঘর। ব্যাস এতটুকুই। কিন্তু সেখানেই রাত কাটাতে বাধ্য হন অনেকে। কেন জানেন? আসুন শুনে নিই।
গল্পে হোক বা সিনেমায়, জেলখানার ছবি অনেকেই দেখেছেন। তার কোনওটাই খুব একটা ছোট নয়। লাইন দিয়ে ঘর। সবকটার সামনেই লোহার গারদ। অবশ্যই তালা দেওয়া। আর তার পিছনে সাদাকালো পোশাকে কয়েদির দল। কোনও ঘরে একজন, কোথাও তার থেকে বেশি। কিন্তু পৃথিবীর সব জেলখানার ছবিই ঠিক এরকম নয়। বিষেশত ইংল্যান্ডের শার্ক জেল তো একেবারেই অন্য ধরনের।
আরও শুনুন: রাত বাড়লেই ক্ষমতা বাড়ে, রক্ত খেয়েই বাঁচে কোন প্রাণীরা?
কারণ এই জেলখানায় ঘর বলতে মাত্র দুটি। সেখানেও কোনও জানলা নেই। ঘুমানোর ব্যবস্থা রয়েছে, তবে আহামরি কিছু নয়। ঘরগুলো এতই ছোট, যে দেওয়ালের সঙ্গে আটকানো লোহার বেঞ্চেই অপরাধীদের ঘুমাতে হয়। এমনকি সেগুলোর উচ্চতাও বেশি নয়। একটু লম্বা কারও অনায়াসে মাথা ঠেকে যাবে ছাদে। আর এই কারণেই এই শার্ক জেল , বিশ্বের সবথেকে ছোট জেলের তকমা পেয়েছে। ইংল্যাণ্ড আর ফ্রান্সের মাঝামাঝি একটি দ্বীপে তৈরি হয়েছে এই অদ্ভুত জেলখানা। যা এখনও সক্রিয় রয়েছে। জেল পরিচালনার দায়িত্বে দুজন পুলিশকর্মীও সবসময় মজুত থাকেন এখানে। তবে বেশিদিন এখানে কাউকে আটকে রাখা হয় না। একরাত বা খুব বেশি হলে দুই রাত, তার বেশি এখানে কাউকেই আটকে রাখার নিয়ম নেই। আসলে, এই জেল তৈরিই হয়েছিল ছোটখাটো অপরাধের শাস্তি দেওয়ার জন্য। চুরি, ছিনতাই কিংবা অত্যধিক নেশা করলে এখানে নিয়ে আসা হত অপরাধীকে। তারপর এক-দুদিন আটকে রেখে ছেড়ে দেওয়া হত। তবে অপরাধ গুরুতর হলে তাকে চালান করে দেওয়া হত পাশের দ্বীপে অবস্থিত অন্য একটা জেলে। সেই জেল অবশ্য এমন ছোট নয়।
আরও শুনুন: হার মেনেছে বয়স! ৮৯ বছরের বৃদ্ধার নেতৃত্বেই অনন্য স্বীকৃতি পেল গ্রাম
কিন্তু মজার বিষয় হল, এই বাড়িটি জেলখানা বানানোর উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি করা হয়নি। ১৮৪১ সালে মেয়েদের স্কুল হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল এই ঘরদুটি। কিন্তু পরবর্তীতে সেখানে কোনও স্কুল তৈরি হয়নি। বরং সরকারের তরফে এটিকে জেল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকেই এই জেলে সাময়িক ভাবে অপরাধীদের রাখার চল। যদিও বর্তমানে এই জেল পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। ওই অঞ্চলে ঘুরতে গেলে সকলেই অন্তত একবার এই শার্ক জেল দেখে যান। স্রেফ আকারে ছোট হওয়ার কারণেই কে দেখার জন্য ভিড় জমান সকলে। অনেক সময় সেই পর্যটকদের মধ্যে কেউ সামান্য অপরাধ করলে এই জেলে আটকে রাখা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা হয় নেশার কারণে। কিন্তু মাত্র একরাতের জন্যই সেই শাস্তি বরাদ্দ থাকে। পরদিন আবারও ছেড়ে দেওয়া হয় ওই ব্যক্তিকে। এছাড়া ওই দ্বীপটির আরও কিছু ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট রয়েছে। শোনা যায়, সেখানে এখনও মোটরগাড়ি চলে না। বাইসাইকেল, ট্রাইসাইকেল বা ঘোড়ায় টানা গাড়িতে চড়েই এখানে যাতায়াত করেন সকলে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং মনোরম আবহাওয়ার কারণেও এখানে প্রতিবছর ভিড় জমান বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা।