বিচ্ছেদে বেজায় লোকসান। লাভ স্রেফ টিকে থাকায়। সম্পর্কের কথাই বলছি। তাতে টিকে থাকলে মিলবে মোটা টাকা। সম্প্রতি এমনটাই শোনা যাচ্ছে। একথা ঘোষণা করা হয়েছে বিমা সংস্থার তরফে। কোন শর্তে মিলবে টাকা? অঙ্কটাই বা কত? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কথায় কথায় ঝগড়া, রাগ হলেই ‘ব্লক’। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, এইভাবে কাটে। সময়ের সঙ্গে জমে তিক্ততা, ক্ষয়ে আসে ভালোবাসা। দূরত্বটাই দোসর হয় দুজনের। অবশেষে বিচ্ছেদ। এক নয় একাধিক কারণ থাকতে পারে বিচ্ছেদের। কিংবা কোনও কারণ নেই, তবু বিচ্ছেদ, হতেই পারে। সিনেমা-সিরিয়ালের গল্পকথা নয়, ঘোর বাস্তবের সত্যি এমনটাই। কিন্তু এই ব্যাপারটা অভ্যাস করে ফেললে মুশকিল। বেজায় লোকসান হতে পারে!
এ আবার কেমন কথা! এমনটাই ভাবছেন তো? তাহলে খুলেই বলা যাক। কথা বলছি, রিলেশনশিপ বিমা সম্পর্কে। বাজারে এক্কেবারে নতুন। ব্যবসার এক ধরণ বটে, কিন্তু তাতে ক্ষতি নেই লাভ আছে শুধু। অন্তত ভালোবাসার দিক দিয়ে বিচার করলে তো বটেই। সম্প্রতি এক সংস্থার তরফে ঘোষণা করা হয়েছে এই বিমার কথা। ভাইরাল ভিডিওতে এক যুবককে খুঁটিনাটি বলতে শোনা গিয়েছে। আদতে সাধারণ বিমার মতোই। অর্থাৎ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টাকার অঙ্ক বাড়বে। তবে এক্ষেত্রে স্রেফ সময় বাড়লেই হবে না, সম্পর্কে টিকে থাকতে হবে। আসলে এই বিমার প্রথম শর্ত, গ্রাহককে কোনও সম্পর্কে থাকতে হবে। তাঁর মনের মানুষকে সজ্ঞে নিয়েই বিমার কাগজে সই করতে হবে। সংস্থার তরফে কড়া নজর রাখা হবে তাঁদের সম্পর্কে। মানে সম্পর্ক টিকল না ভাঙল, সেদিকটায়। নির্ঝঞ্ঝাট সম্পর্ক যদি পরিণতি পায়, মানে ব্যাপারটা যদি বিয়ের পিঁড়ি অবধি এগোয়, তাহলে বিমার টাকা মিলবে। তাও অন্তত দশগুণ। কিন্তু সম্পর্ক বিয়ের আগেই ভেঙে গেলে পুরো টাকাটাই জমে গেল। অর্থাৎ যে টাকা দিয়ে বিমা করা হয়েছিল বা মাসে মাসে কিস্তি দিতে হত, তার পুরোটাই নষ্ট হবে সম্পর্ক ভাঙলে।
সংস্থার তরফে দাবি করা হয়েছে, মন দিয়ে যারা একটি সম্পর্কে টিকে থাকবেন তাঁরাই এই টাকা পাবেন। তাতে বিয়ের অর্ধেক খরচ উঠে আসবে অনায়াসে। আসলে, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সম্পর্কও কেমন যেন কর্পোরেট হয়ে উঠেছে। একটু মতের অমিল হলেই ব্রেকাপ। কিংবা আরও ভালো কাউকে চোখে ধরলে, সেদিকে যাওয়ার জন্য মন উচাটন। তাতে উলটোদিকের মানুষটা কষ্ট পেলেও, কুছ পরোয়া নেহি মনোভাব থাকে অনেকের। কেউ কেউ আবার দায়িত্ব নিতে ভয় পান। দীর্ঘদিনের সম্পর্ক, তবু পরিণতি দিতে বেজায় অস্বস্তি। তাতে বিরক্ত হয়ে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন অন্যজন। এছাড়া টাকা-পয়সা, চাকরি, স্ট্যাটাস তো রয়েছেই। প্রেমিক বা প্রেমিকা যদি একে অন্যের মন যুগিয়ে চলতে না পারেন, তাহলেও ব্রেকাপ বাঁধা। তাই বলে কি ব্যতিক্রম নেই? আলবাত আছে। এখনও এমন অনেক প্রেম আমাদের আশেপাশে ছড়িয়ে আছে যা সিনেমার গল্পকে হার মানাবে। তার সঙ্গে হয়তো তথাকথিত রোম্যান্সের সংজ্ঞা মিলবে না, খালি চোখে প্রেম ধরা নাও পড়তে পারে, কিন্তু সেখানে বিশ্বাস আছে, ভালোবাসা আছে। সেই জোরেই টিকে থাকা, আরও আরও বেঁধে থাকা। এই বেঁধে থাকার পরিণতি যদি চার হাত এক করতে পারে, তাহলেই টাকা দিয়ে সম্মানিত করবে ওই বিমা সংস্থা। বিষয়টা যে অভিনব তাতে সন্দেহ নেই। তাই ইতিমধ্যে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ সমালোচনাও করছেন। ব্যবসার ফিকির, এমন দাবিও উঠছে। তবু দিনের শেষে এই চেষ্টাকে স্রেফ ব্যবসায়িক ফিকির হয়তো বলা যায় না। হোক না টাকার লোভে, তবু যদি কিছু সম্পর্ক পরিণতি পায়, ক্ষতি কি!