গল্পে, সিনেমায় ভূতুড়ে জায়গার কথা নিশ্চয়ই শুনেছেন! বাস্তবে এই অভিজ্ঞতা হয়েছে কখনও? অনেকেই দাবি করেন, উত্তরাখন্ডের এই পাহাড়ি রাস্তায় সন্ধ্য়ের পর গেলে অলৌকিক অভিজ্ঞতা হতে বাধ্য। ঠিক কোন জায়গার কথা বলছি? সেখানে কী এমন হয়? আসুন শুনে নিই।
পাহাড়ি রাস্তা। আশেপাশে তেমন পরিচিত টুরিস্ট স্পট নেই। রাস্তায় অনেকটা ছাড় দিয়ে দু-একটা বাড়ি। এর বাইরে চোখে পড়বে শুধু গাছ। আর সেসব এতটাই ঘন, যে কিছুক্ষণ হাঁটলে সূর্যের আলোও কোথায় হারিয়ে যাবে। এমন এক জায়গা ঘিরে অলৌকিক কাহিনি থাকাই স্বাভাবিক। বাস্তবে হয়েছেও তাই। উত্তরাখন্ডের পরি টিব্বা নামে এক পাহাড়ি এলাকা ঘিরে জন্ম নিয়েছে একাধিক ভূতুড়ে কাহিনি।
আরও শুনুন: ৪০০ বছর ধরে সমুদ্রে ঘুরে চলেছে ভূতুড়ে জাহাজ! কী এই রহস্য?
পাহাড় বললেই, চোখের সামনে যা কিছু ভেসে ওঠে, দেরাদুন-মুসৌরি নিঃসন্দেহে সে তালিকায় থাকবে। যে দিকে তাকাও উঁচু পাহাড়। সেইসঙ্গে গাছ গাছালি মিশে এক অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য। জনপ্রিয় সাহিত্যিক রাস্কিন বন্ডের লেখায় দেরাদুনের সে ছবি অনেকটাই ধরা পড়ে। কিন্তু এই পাহাড়ের কোলেও যে ভূতের উপদ্রব হতে পারে, সে কথা জানেন?
তাহলে খুলেই বলা যাক। দেরাদুন থেকে হাঁটা পথে ঘণ্টা দুয়েক। তাহলে পরি টিব্বার দেখা মিলবে। পাহাড়ের কোল ঘেঁষা এক রাস্তা। যার অনেকটাই জঙ্গলে ঢাকা। অথচ এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ এতটাই মনোরম, যে দূর দূরান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন একবার স্বচক্ষে এই দৃশ্য উপভোগ করবেন বলে। ভিড় খুব বেশি না হলেও, দু-একজন পর্যটক চোখে পড়তেই পারে। সেইসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারা তো আছেনই। রাস্তার শেষে কিছু পোড়ো বাড়ির দেখা মিলতে পারে। তবে এই সবকিছুই দেখে ফেলতে হবে সন্ধ্যে নামার আগে। কারণ অন্ধকার হলেই, এপথে জনপ্রাণীর দেখা মেলা ভার। বিকেল বিকেল স্থানীয় কারও সঙ্গে দেখা হলেই, তিনি জোর করে সেখান থেকে ফেরত পাঠিয়ে দেবেন। কারণটা যা ভাবছেন ঠিক তাই। ভূতের উপদ্রব! তবে এই ভূত শীর্ষেন্দুর গল্পে পড়া গোঁসাইবাগানের বাসিন্দা নয়। পাহাড়ের রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো এক অতৃপ্ত আত্মা। ভেবেই দেখুন এমন কারও মুখোমুখি কে হতে চাইবে?
আরও শুনুন: ২০০ বছর আগে রাতারাতি উধাও হয়ে যায় গ্রামবাসীরা! অভিশাপের জেরেই নাকি ভূতুড়ে এই গ্রাম
তবে প্রথম থেকেই যে এই আত্মা বা ভূতের উপদ্রব এই অঞ্চলে ছিল তা নয়। সবটা শুরু হয় এক দম্পতিকে ঘিরে। বেশ কয়েকবছর আগেও এই অঞ্চল সম্পূর্ণ জনমানবহীন ছিল। সেখানেই নিজেদের মতো করে সময় কাটাতে আসেন এই যুগল। এমনিতে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য এতটাই উপভোগ্য, যে কেউ প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাবেন। শোনা যায়, এই যুগলও সেই প্রকৃতির সৌন্দর্যে হারিয়ে অন্তরঙ্গ হয়ে পড়েন। এদিকে সেইসময় প্রচন্ড মেঘ করেছে। আকাশ কালো হয়ে শুরু হয়েছে তুমুল ঝড়। সেইসঙ্গে বজ্রপাত। আচমকা বাজ পড়ে ওই যুগলের উপর। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁদের। কিন্তু হাজার খোঁজ করেও সেদিন কোনও মৃতদেহ মেলেনি ওই অঞ্চলে। তা মেলে ঘটনার কয়েকদিন পর। বাজ পড়ে পুরোটাই পুড়ে গিয়েছিল দুটি দেহ। এরপর থেকেই যাবতীয় উপদ্রব শুরু। শোনা যায়, ওই যুগলের অতৃপ্ত আত্মাই পরি টিব্বায় ঘুরে বেড়ায়। সন্ধ্যা নামলেই পথে নেমে আসে তাঁরা। নানা তান্ডব শুরু করে। ধীরে ধীরে একথা রটে যায় চারিদিকে। অনেকে এই দাবিও শুরু করেন ওই অঞ্চলে অলৌকিক অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁদের। গাছের গায়ে কালো দাগ, রাস্তায় ছাইয়ের দাগ, এইসব নাকি সকালেও দেখা যায় পরি টিব্বায় গেলেই। যদিও কেউ কেউ ভূতের কথা আমল দেন না। তাঁদের কথায়, এই অঞ্চল অনেকটাই উঁচুতে হওয়াই এখানে সামান্য ঝড়বৃষ্টি হলে বাজ পড়ে। তার জেরে এই কালো দাগ, বা ছাই। কিন্তু ওই যুগলের মৃতদেহ কেন দিনের দিন মেলেনি, সেই প্রশ্ন রহস্যই থেকে গিয়েছে। তাই মুখে যে যাই বলুক, সন্ধ্যার পর ওই চত্বরে যাওয়ার সাহস দেখান না তেমন কেউই।