প্রয়াত মনমোহনের শেষকৃত্য হয়েছে, সেই সুবাদে চর্চায় দিল্লির নিগমবোধ শ্মশান। তবে রাজধানীর এই পুরনো শ্মশানটি আরও এক কারণে বিখ্যাত। স্রেফ মৃতদেহ সৎকার নয়, এখানে অন্য কাজের টানেও ছুটে আসেন অনেকেই। ঠিক কী সেই কারণ? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মনমোহন সিংয়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে দিল্লিতে। নিগমবোধ শ্মশানে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন রাজনীতির ইন্দ্র-মিত্র-বরুনরা। প্রিয় নেতাকে শেষবারের মতো দেখতে, ভিড় জমিয়েছিলেন আমজনতাও। তবে নিগমবোধ শ্মশানে ভিড় নতুন কিছু নয়। মৃতদেহ সৎকারের জন্য এখানে যেমন ভিড় জমে, তেমনই এই শ্মশান হল পক্ষীপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য!
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। এই শ্মশানে এমন অনেক পাখি আসে যা সচারচর অন্য কোথাও দেখা যায় না। শীতকালে পাখিদের ভিড় জমে সবথেকে বেশি। তবে পরযায়ী পাখি নয়, এদেশের পাখিই নির্ভয়ে ভিড় জমায় এখানে। নেপথ্যে অবশ্যই শ্মশানের পরিবেশ। অন্যান্য জায়গার তুলনায় এখানে কোলাহল কম। কেউ আলাদা করে বিরক্ত করে না, তাই নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়ায় পাখির দল। শ্মশানে অনেক গাছপালাও রয়েছে, ডালে ডালে বসে থাকে টিয়া, পায়রা, শালিকরা। রঙবেরঙের পাখনা ওয়ালা পাখিও থাকে অনেক। এদের দেখতে ক্যামেরা নিয়ে শ্মশানে হাজির হন পক্ষী প্রেমীরা। ঘুরে ঘুরে তারা ছবি তোলেন। কখনও পাখিদের সঙ্গে সময় কাটাতেও এখানে চলে আসেন শহরের মানুষ। পুরনো এই শ্মশান আকারে বহরেও নেতাহই ছোট নয়। এখানেই দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। তালিকায় প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ জেটলি, শীলা দিক্ষিত সহ আরও অনেকেই রয়েছেন। সুতরাং সরকারের তরফেও এর দেখভাল করা হয় ভালোমতো। পাশাপাশি এই শ্মশানের ঐতিহাসিক গুরুত্বও কম নয়।
শোনা যায়, এই শ্মশান তৈরি হয়েছিল মহাভারতের আমলে। খোদ যুধিষ্ঠির এই শ্মশান তৈরি করিয়েছিলেন। অনেকে বিশ্বাস করেন, এখানে স্বয়ং বিষ্ণু রয়েছেন। শুধু তাই নয়, অন্যান্য দেবতারাও এই শ্মশানে রয়েচ্ছেন বলে মনে করেন কেউ কেউ। সবটাই লোককথা। যা কয়েক হাজার বছর ধরে লোকমুখে প্রচলিত হয়ে আসছে। রাজধানীর সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ব্যস্ত শ্মশানও এটিই। দিল্লিতে ঘুরতে আসা পর্যটকরাও এখানে ঢুঁ মেরে যান। তবে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ায় নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে এই শ্মশান নিয়ে।