লোকসভা অধিবেশনে অভয়মুদ্রা দেখিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। বিভিন্ন ধর্মের সঙ্গে এই প্রতীকে যোগ কোথায় তা বুঝিয়েছেন কংগ্রেস নেতা। হিন্দু ধর্মে বহু দেবদেবীর মূর্তিতে এই চিহ্ন দেখা যায়। শাস্ত্রে কী ব্যাখ্যা এর? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সাধক রামপ্রসাদ গাইতেন, অভয়পদে প্রাণ সঁপেছি, আর কি যমের ভয় রেখেছি। লোকসভা অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়েও সেই ভয় না রাখার বার্তাই দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। বক্তব্যের মাঝে দেখিয়েছেন অভয়মুদ্রা। সব ধর্মের সঙ্গে এই প্রতীকের যোগ টেনে বুঝিয়েও দিয়েছেন, ধর্ম কখনও ভয়ের কথা বলে না।
আরও শুনুন: চোখা বক্তৃতায় বাজিমাত রাহুলের, তবুও কোন কোন অংশ বাদ গেল সংসদের খাতায়?
সংসদে বক্তব্য রাখার সময় দেবাদিদেব মহাদেবের একটি ছবি দেখিয়েছেন রাহুল। মহেশ্বর সেখানে অভয়মুদ্রায় রয়েছেন। রাহুলের বক্তব্য, এইভাবে শিব আকুতোভয় হওয়ার কথা বলছেন। শাস্ত্রের ব্যাখ্যাও আসলে তেমনটাই। অভয় অর্থাৎ ভয় না পাওয়া। হাতের এক বিশেষ কায়দায় সেই মুদ্রা দেখাতে হয়। অধিকাংশ হিন্দু দেবমূর্তিতেই অভয়মুদ্রা দেখা যায়। সংহার মূর্তি হলেও একটি হাতে বরাভয় প্রদান করেন ঈশ্বর। কালী মূর্তির কথাই ধরা যাক। করালবদনা দেবীর এক হাতে খড়গ, অন্য হাতে ছিন্নমুণ্ড, একহাতে বর আরেক হাতে অভয়। মূর্তি কল্পের সহজ ব্যাখ্যা করে বলা যায়, দেবী একদিকে যেমন দুষ্টের দমন করছেন। অন্যদিকে তেমনই ভক্তকে তাঁর কাছে যাওয়ার আশ্বাস দিচ্ছেন। দেবীর পায়ে নিজেকে সমর্পন করলে আর কোনও ভয় নেই। ত্রিভূবনের সকল প্রাণীকে অভয় প্রদান করছেন আদ্যাশক্তি মহামায়া। দেবাদিদেবও সেই ভাবেই অভয়মুদ্রা প্রদর্শণ করেন। যদিও শিব মূর্তির আরও অনেক ধরণ রয়েছে। সবেতেই যে এমন অভয়মুদ্রা দেখা যায় তা নয়। একইভাবে নারায়ণ, ব্রহ্মা সহ অন্যান্য দেবমূর্তিতেও এই অভয়মুদ্রা বর্তমান। শাস্ত্রে আলাদাভাবে এর বিশেষ কোনও অর্থের কথা বলা নেই। মূর্তি তত্বের ব্যাখ্যা ধরেই বলা যায়, অভয়মুদ্রা হল নির্ভয়ের প্রতীক।
আরও শুনুন: আকারে বহরে পুরীকেও টেক্কা দেবে, বিশ্বের বৃহত্তম রথ কোথায় তৈরি হয় জানেন?
তবে এর সঙ্গে পুরাণের যোগ বলতে গেলে গৌতম বুদ্ধের প্রসঙ্গ উল্লেখ করতে হয়। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী বুদ্ধ নারায়ণের অবতার। ভগবানের এই অবতার শান্তির বার্তা বহন করছেন। তাঁর কাছে কোনও অস্ত্র নেই। ভালোবাসাকেই অস্ত্র করে দুরন্ত অসুরকে শান্ত করেন বুদ্ধ। এই নিয়ে পুরাণের একটি গল্পও রয়েছে। কথিত আছে, ভগবান বুদ্ধ এই অভয়মুদ্রা দেখিয়েই কোনও এক মত্ত হাতিকে শান্ত করেছিলেন। সেই থেকে তাঁর মূর্তির প্রধান বৈশিষ্ট হয়ে উঠেছে এই অভয়মূদ্রা। বৌদ্ধধর্মেও এই মূদ্রার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। অনেকে মনে করেন হাতের এই বিশেষ মুদ্রা আশীর্বাদের প্রতীক। তবে শাস্ত্রে এমন কিছুর উল্লেখ নেই। অভয়মুদ্রা স্রেফ নির্ভয় হওয়াকে নিশ্চিত করতেই বোঝানো হয়। আসলে ধর্ম মানে ধারণ করা। তা ভয়ের কারণ হবেই বা কেন! তাই অধিকাংশ ধর্মপুরুষ বা সেই ধর্মের প্রতীক হিসেবে অভয়মুদ্রা দেখা যায়। হিন্দু ধর্মে যে উদাহরণ সবথেকে বেশি।
তবে সাম্প্রতিক কিছু উদাহরণ ধর্মের সেই ধারণা বদলাতে বাধ্য করছে। ধর্মের নামে এত হিংসা বদল দিচ্ছে বিশ্বাসের অর্থ। সেখানে অভয়মুদ্রা যেন নতুন করে আশার আলো দেখায়। ধর্মে কোনও ভয় নেই, ধর্মাচরণের উগ্রতায় লুকিয়ে যত ভয়। অভয়মুদ্রা দেখিয়ে সেই ভয়ের বাঁধন কাটিয়ে ফেলার কথাই যেন বলেছেন বিরোধী দলনেতা।