কাজের আবার ছেলে-মেয়ে! এই ধারণা অনেকেরই। কিন্তু সবার নয়। এখনও অনেকেই মনে করেন, কিছু কাজ পুরুষের। তাঁদের সকলকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রোজ কাজে যান কেরলের এই মহিলা। ঠিক কী করেন তিনি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
গেছো মেয়ে! পাড়াগাঁয়ে এ তকমা খুবই সাধারণ। গাছে চড়তে জানা এক্ষেত্রে প্রতীকী। মেয়ে হয়ে পুরুষালি কাজ করছে এটাই সমস্যার। কটাক্ষ, বিদ্রূপ সবই সহ্য করতে হবে মহিলাকে। শুধু পাড়া-গাঁ বললে ভুল হয়। এ ধারণা শহুরে মস্তিষ্কেও রয়েছে। অথচ গেছো হওয়াই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন কেরলের এই মহিলা।
কথা বলছি, সি সিজা সম্পর্কে। মহিলার পেশা নারকেল গাছে চড়া। এমনিতে এই কাজ পুরুষের। কারণ, গাছে চড়া মোটেও সহজ নয়। সেইভাবে কোনও যন্ত্রপাতিও নেই। উঠতে হবে বিশেষ কৌশল মেনে। তাই এক্ষেত্রে কোনও মহিলাকে সচরাচর দেখা যায় না। ব্যতিক্রম সিজা। ২০১৯ থেকে এই কাজের সঙ্গে তিনি যুক্ত। রয়েছে লাইসেন্সও। প্রতিদিন গড়ে ১০ টা গাছে চড়েন। তাও একবার নয় দিনে তিনবার করে গাছে চড়তে হয়। প্রশ্ন উঠতেই পারে, কেন এক গাছে ফল পাড়তে তিনবার চড়তে হয়?
আসলে ফলের খোঁজে তিনি গাছে চড়েন না। কেরলে নারকেল গাছের ফুল থেকে বিশেষ এক মদ তৈরি করা হয়। তাই ফুলের রস সংগ্রহ করতেই গাছে চড়তে হয়। স্থানীয় ভাষায়ু একে টোডি বলা হয়। কোমরে ঝোলানো থাকে হাঁড়ির মতো বিশেষ পাত্র। ওঠার থেকেও নামার সময় বেশি সতর্ক থাকতে হয়। কারণ রস যদি পড়ে যায় তাহলে সব পরিশ্রম জলে গেল। প্রথমদিকে এই কাজ করতে বেশ সমস্যায় পড়তেন সিজা। একে তো অভ্যেস নেই তার ওপর এই কাজ সত্যিই বেশ কঠিন। তবু জেদ ধরে রেখে নিজেকে তৈরি করেছেন। আসলে, এই কাজে একপ্রকার বাধ্য হয়েই এসেছিলেন সিজা। দুর্ঘটনায় স্বামীকে হারিয়ে বেছে নেন এই উপার্জনের পথ। এর মাঝে একইকাজ করতে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে মৃত্যু হয় তাঁর ভাইয়ের। তবু দমে যাননি। মন দিয়ে কাজ শিখেছেন। আর সেই অধ্যাবসায়ের জেরেই এখন তিনি পোক্ত হয়েছেন। ভোরবেলা উঠে কাজে যান। সারাদিনে মোট ১০ লিটার রস সংগ্রহ করতে হবে। প্রতি লিটার বিকোবে ১০০ টাকায়। ওটাই রোজগার সেদিনের। কাজেই রস কম সংগ্রহ হলে টাকা কম আসবে। এইভাবেই এতগুলো বছর কাটিয়ে ফেলেছেন। এই মুহূর্তে তাঁর রোজগারেই চলে সংসার। নিজের মেয়েকেও দায়িত্ব নিয়ে মানুষ করছেন। এলাকার মানুষজন এই কাজে যথেষ্ট সহযোগিতা করেন বলেই দাবি সিজার। এমনকি এলাকার সবাই তাঁকে সেলিব্রিটি তকমা দিয়েছেন বলেও জানান সিজা। এর জন্য বহু পুরষ্কারও পেয়েছেন। পেয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা। তাই আগামীদিনে এই কাজই করে যেতে চান তিনি। তবে এখন আর আগের মতো পারেন না। বয়স বাড়ছে, তাই সাবধানে কাজ করেন। তবু যেটুকু হয় তাতেই দিন চলে যায় বলে দাবি সিজার। বর্তমানে একটাই ইচ্ছা, এই কাজে তাঁর মতো আরও মহিলারা যোগ দিন। কাজের কোনও ছেলে-মেয়ে ভাগ হয় না, প্রতিষ্ঠা হবে তবেই।