দেখতে হুবহু পুরনো পঞ্চাশ টাকার নোটের মতো। কিন্তু সেটা না দেখে হাতে নিলে ভুল হতে বাধ্য। কিংবা বছরের যে কোনও দিনই মনে হতে পারে, পয়লা এপ্রিল। আসলে এই নোট দেখতে যেমনই হোক, এর মূল্য একেবারে শূন্য! ব্যাপারটা ঠিক কী? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কাগজের টুকরো। তাঁর দামই লাখ টাকা। ঠিক ধরেছেন, টাকার নোটের কিসের কথা বলছি। দুনিয়া যতই ডিজিটাল হোক, টাকা বললে এখনও সবাই গোলাপি, বেগুনি কিংবা হালকা সবুজ নোটই বোঝে। তার জোরেই দুনিয়া চালানোর স্বপ্ন দেখেন কেউ কেউ। কিংবা দুবেলা দুমুঠো খাবার জুটবে কি না, তাও ঠিক করে দেয় পকেটে থাকা ওই নোটের সংখ্যা।
কিন্তু সেখানে নির্দিষ্ট একটা অঙ্ক থাকা আবশ্যক। মানে ১০, ২০, ৫০, ১০০ কিংবা তার বেশি অঙ্কের টাকার চল রয়েছে বাজারে। একসময় এক,দুই, পাঁচ টাকার নোটও চালু ছিল। এদিকে সবথেকে বড় অঙ্কের নোট হিসেবে কিছুদিন আগে অবধি বাজারে ছিল ২০০০ টাকা। বলাই বাহুল্য, কোনও অঙ্কের উল্লেখ নেই এমন নোট কল্পনাতেও আসে না কারও। আসল তো নয়ই, জাল নোট হলেও সেখানে কিছু না কিছু অঙ্ক থাকবেই। হিসাবটাও সহজ। নোটের উপর যে অঙ্ক লেখা থাকবে, তার মূল্যও হবে ততটাই। কাজেই কিছু না লেখা মানে সেই নোটের কোনও মূল্য নেই। অথচ ঠিক এমনই এক নোট একসময় চালু হয়েছিল যার আদতে কোনও মূল্য নেই। হ্যাঁ, সেই নোটেই সংখ্যা লেখা থাকত বটে। তবে সেই সংখ্যাটা হল শূন্য। না আগে কিছু, না পরে। স্রেফ একটা শূন্য। তাই এই নোটের কোনও বাজার মূল্য ছিল না। এদিকে সেই নোট দেখতে ছিল পুরনো পঞ্চাশ টাকার নোটের মতো। পাশাপাশি রেখে দিলে দূর থেকে বোঝার উপায় নেই ওই নোট আসলে কী!
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এমন নোট কেন চালু হয়েছিল?
আসলে সবটাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেষ্টা। দক্ষিণের এক এনজিও এই নোট বাজারে এনেছিল ২০০৭ সালে। বিশেষ করে সরকারি কোনও কাজের বিনিময়ে কেউ যেন ঘুষ না দেন সেই প্রচার চালাত ওই সংস্থা। এমনিতে নোটে ইংরাজি ভাষায় দেখতে পোয়া যায়। সেইসঙ্গে অন্য ভাষা থাকলেও তার পরিমাণ কম। তবে শূন্য নোট বেশ কয়েকটি ভাষায় ছাপা হয়েছিল। নোট ছাপানোর আসল উদ্দেশ্য যেন সকলের কাছেই ছড়িয়ে পড়ে সেই ভাবনাতেই করা হয়েছিল এমনটা। নোটের উপরে সেই কথা লেখাও থাকত। এমনিতেই এ নোটের কোনও দাম নেই, তাই সংস্থার সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় এই নোট বিলি করতেন। যাতে সকলের মধ্যে ঘুষ না দেওয়ার প্রবণতা বাড়ে সেই চেষ্টা চালিয়ে যেতেন সবসময়।