অলিম্পিক গেমস, অথচ বিদেশের কারও তাতে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। খেলার ধরণও একেবারেই আলাদা। শ্যুটিং, জ্যাভলিন, সাঁতার, জিম্যান্সটিক কিছুই হয় না এখানে। বদলে দড়ি টানাটানি, গরুর গাড়ির রেস এইসব খেলার আয়োজন থাকে। কোন অলিম্পিকে এমনটা হয়? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
অলিম্পিকে পদক জেতার স্বপ্ন সব খেলোয়াড়ই দেখেন। ব্যক্তিগত সাফল্য তো বটেই, সেইসঙ্গে মেলে বিশ্বের দরবারে দেশের নাম উঁচু করার সুযোগ। তবে এমনও এক অলিম্পিক রয়েছে, যেখানে সাফল্যের পুরস্কার স্রেফ মেডেল বা অন্য কিছু। বিশ্বের দরবারে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ নেই। দেশের নামও আলাদা করে উঁচু হয় না এই অলিম্পিকে।
কথা বলছি গ্রামীন অলিম্পিক সম্পর্কে। ভারতের একেবারে নিজস্ব অলিম্পিক। ১৯৩৩ সালে শুরু হওয়া প্রতিযোগিতা, যা এখনও রমরমিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। পাঞ্জাবের কুইলা গ্রামে খেলার আসর বসে। তাতে অংশ নেন গ্রামের বাসিন্দারাই। বাইরের রাজ্য থেকেও অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। তবে বিদেশের কারও এই খেলায় যোগ দেওয়ার সুযোগ নেই। অবশ্য এখানে যে ধরনের খেলার আয়োজন থাকে, তা সবার পক্ষে খেলাও একপ্রকার অসম্ভব। মাটির সঙ্গে যোগ না থাকলে এসব খেলায় পারদর্শী হওয়া বেশ কঠিন। তালিকায় রয়েছে গরুর গাড়ির রেস, চুলে বেঁধে বড় গাড়ি টানা, দাঁতে করে লাঙল ধরে রাখা-র মতো অদ্ভুত সব খেলা। সেইসঙ্গে সাধারণ দৌড়, দড়ি টানাটানি, কাবাডি, খো খো এসবেরও আয়োজন থাকে গ্রামীন অলিম্পিকে।
সবথেকে বেশি উত্তেজনা থাকে গরুর গাড়ির দৌড় নিয়ে। প্রতিটি গাড়ির সঙ্গে দুটি গরু থাকে। তাদের বিভিন্নভাবে উত্তেজিত করে দৌড় শুরু করতে হয়। বাকীটা চালকের দায়িত্ব। মত্ত গরু বেশি জোরে ছুটলেও সমস্যা, যে কোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনা হতে পারে। আবার আস্তে ছুটলে রেসে হারতে হবে। বুদ্ধি করে অন্যদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যেতে পারলেই বাজিমাত। একইভাবে হয় ঘোড়ার দৌড়। সেখানে আবার কেউ কেউ একসঙ্গে দুটো ঘোড়ার পীঠে সওয়ারি করেন। রীতিমতো অভ্যাস না থাকলে এমন কাজ অসম্ভব। পাশাপাশি দড়ি টানাটানি নিয়েও কম উত্তেজনা হয় না। এ খেলা যদিও গ্রামবাংলায় প্রচলিত। কিন্তু এতবড় ইভেন্টে দড়ি টানাটানি খেলা আকর্ষনের কেন্দ্রেই থাকে। এছাড়া রয়েছে দাঁতে করে আস্ত লাঙল ব্যালেন্স করার খেলা। অনেকটা গুলি-চামচের মতো। কিন্তু এত ভারি লাঙল দাঁতে করে নিয়ে এগোনো খুব একটা সহজ নয়। চুল দিয়ে বড় গাড়ি টানাও মুখের কথা নয়। কিন্তু গ্রামীন অলিম্পিকে এই খেলাও বেশ জনপ্রিয়। আবার কাবাডি, খো খো কিংবা দৌড় প্রতিযোগিতাতেও আনন্দে মেতে ওঠেন সকলে। খেলার আড়ালে গ্রামের মানুষকে এক করাই এই অলিম্পিকের উদ্দেশ্য। তাই কে জিতল, কে হারল এসব নিয়ে কেউ তেমন মাথা ঘামান না। সকলে আনন্দে করে খেলায় অংশ নেন। আর হৈ হৈ করে নিজেদের অলিম্পিক উদযাপন করেন।