লম্বায় সাড়ে তিন কিমি। একটা নয়, রয়েছে ছ-খানা ইঞ্জিন। ২৯৫ টি বগি। ওজন ২৫৯৬২ টন। এই বিবরণ একটা ট্রেনের। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। এটিই দেশের সবথেকে বড় ট্রেন। আকারে বহরে এই ট্রেনকে পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা নেই আর কিছুর। কী নাম এই ট্রেনের? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
বাসুকি নাগ। পুরাণের গল্পে অতি পরিচিত এই সরীসৃপ। সাপেদের রাজ্যে ইনিই আকারে বহরে সবথেকে বড়। অবস্থান দেবাদিদেব মহাদেবের গলায়। এই বাসুকি নাগকেই সমুদ্র মন্থনের সময় কাজে লাগানো হয়েছিল। কিন্তু এই নাগের কথা হঠাৎ বলছি কেন? কারণ, এ দেশের সবথেকে বড় ট্রেনটিও এই সাপের নামেই।
কথা বলছি, ‘সুপার বাসুকি’ সম্পর্কে। যা আসলে একটি মালবাহী রেলগাড়ি। তবে আকারে বহরে এটিই দেশের সবথেকে বড় ট্রেন। শুরু থেকে শেষ অবধি প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার। একটা নয়, ছ খানা ইঞ্জিন দরকার হয় এই ট্রেন চালাতে। মোট ২৯৫টি বগি বা ওয়াগান রয়েছে। সামনে দিয়ে এই গাড়ি পেরিয়ে যাচ্ছে দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যেতে পারে। কারন একটা জায়গা দিয়ে এই ট্রেন পার হতে অন্তত আধঘণ্টা সময় নেয়। গতিবেগ বেশি থাকলেও এতগুলো বগি পেরোতে যথেষ্ট সময় লাগে। আর গতি কম হলে তো কথাই নেই। ট্রেনটিতে একইসঙ্গে প্রায় ৯০০০ টন কয়লা নিয়ে যাওয়া সম্ভব। যা অন্যান্য মালবাহী রেলগাড়ির কয়েক গুন। এছাড়া ট্রেনটির অতিরিক্ত ওজনের কারণে যে কোনও জিনিস এই মাধ্যমে বহন করানো যেতে পারে। ২৬৭ কিমি পথ পেরোতে এই ট্রেনের সময় লাগে সাড়ে ১১ ঘণ্টা। অবশ্য এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। মালগাড়ির চাকা গড়াতে এমনিতেই সময় লাগে, কারন এত ভারি পন্য নিয়ে রেললাইন বরাবর এগিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন ব্যাপার। সেখানে সুপার বাসুকি একাই ৬-৭ খানা মালগাড়ির সমান। কাজেই এর চাকা গড়াতে আরও সময় লাগাই স্বাভাবিক। এছাড়া ৬ টি ইঞ্জিন আলাদা আলাদা পাইলটের দায়িত্বে থাকে। তাঁদের মধ্যে সমন্বয় সংযোগ ঠিক না হলে বিপদ ঘটতে বাধ্য। সবদিক মিলিয়ে বেশ সাবধানে চালানো হয় এই গাড়ি।
তবে এই গাড়িতে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। যাত্রীদের বসার বা দাঁড়ানোর জায়গাও নেই। লুকিয়ে ওয়াগানে উঠলে মোটা টাকা জরিমানা দিতে হতে পারে। মূলত ভারী পন্য একসঙ্গে অনেকটা দূরে পাঠানোর জন্যই এই রেলগাড়ি তৈরি হয়েছে। রেলের তরফেও পরীক্ষামূলক ভাবে এটি চালানো হয়। যেহেতু ওজন অনেকটাই বেশি, তাই একবার এই গাড়ি রেললাইন দিয়ে গেলে সেই ট্র্যাক পরীক্ষা করে দেখতে হয়। পাছে লাইনে কোনও সমস্যা থেকে যায়। অনেক জায়গায় যাত্রীবাহী গাড়ি যাওয়ার লাইনও আলাদা হয়। সুপার বাসুকি সেই সব লাইন দিয়েই মূলত নিয়ে যাওয়া হয়। খোদ রেলমন্ত্রী এই ট্রেনের ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন। সঙ্গে লিখে দেন ট্রেনটির অতিযান্ত্রিক ক্ষমতার কথা। সেই ভিডিও নিয়ে বেশ চর্চাও হয়। তবে বর্তমানে এই ট্রেন খুব বেশি চালানো হয় না। এতবড় ট্রেনের রক্ষণাবেক্ষণ করাও মুখের কথা নয়। সেই কারণেই এই ট্রেন লম্বা বিরতির পর প্রকাশ্যে আসে।