শবরীমালা বিতর্ক ঘিরে একসময় উত্তাল হয়েছিল দেশ। মন্দিরে অধিষ্ঠিত দেবতা আয়াপ্পন আজীবন ব্রহ্মচারী, তাই সেই মন্দিরে ঋতুকালীন বয়সের নারীর প্রবেশের অনুমতি নেই। এমনকি কেরল সরকারের অনুমতির পরও মন্দিরে মেয়েদের প্রবেশ নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। কিন্তু আশ্চর্যের কথা হল, সেই কেরলেরই আরেকটি মন্দিরে নাকি দুই স্ত্রীকে নিয়ে অধিষ্ঠান করেন ওই দেবতা আয়াপ্পন। অর্থাৎ একই রাজ্যে, একই তত্ত্বাবধায়ক সংস্থার আওতায় থাকা দুটি মন্দিরে দেখা যায় বিপরীত দুই ঘটনা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
একদিকে দেশজোড়া পরিচিত শবরীমালা মন্দির। প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ে কঠোর সংযম পালন করে এই মন্দিরে পৌঁছন পূজার্থীরা। আরেকদিকে ঘোর জঙ্গলের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা আচানকোভিল মন্দির। যার খোঁজই রাখেন না অধিকাংশ মানুষ। কিন্তু কেরলের এই দুই মন্দিরেই বাস একই দেবতার। তিনি শাস্তা আয়াপ্পন। আয়াপ্পন হলেন পান্ড্য রাজত্বের এক অকুতোভয় রাজকুমার, শিবের সঙ্গে মোহিনী মূর্তিধারী বিষ্ণুর মিলনে তাঁর জন্ম। শবরীমালা মন্দিরে তাঁর পরিচয় নিষ্ঠাবান ব্রহ্মচারী হিসেবে। সেই কারণে এই মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি ছিল না ঋতুকালীন বয়সের কোনও নারীর। ২০১৮ সালে সংবিধানের মৌলিক অধিকারের প্রশ্ন তুলে এই প্রথাকে নাকচ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। যদিও তারপরেও শবরীমালা মন্দিরে ঋতুযোগ্য নারীদের প্রবেশ করা নিয়ে বাদ-প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছে দেশ। কিন্তু আচানকোভিল মন্দিরের দেবতা আয়াপ্পন? তাঁর ক্ষেত্রে গল্পটা যে একেবারে উলটো। কেরল-তামিলনাড়ু সীমানায় থাকা এই নির্জন মন্দিরে আদৌ ব্রহ্মচর্য পালন করেন না আয়াপ্পন। বরং দুই স্ত্রী, পূর্ণা আর পুষ্কলাকে নিয়ে সুখের গার্হস্থ্য তাঁর। আয়াপ্পনের মতো, রোজ পুজো পান তাঁর দুই স্ত্রীও।
আরও শুনুন: পৃথিবীতে রয়েছে আরেক ‘রামরাজ্য’, অযোধ্যায় বাস করেন রাজা রামও
জানা যায়, আচানকোভিল মন্দিরে বরাবরই স্ত্রী পূর্ণার সঙ্গে পুজো পেয়ে আসছিলেন আয়াপ্পন। কিন্তু পরবর্তী কালে ঘটনাচক্রে আরও এক স্ত্রী জুটে যায় তাঁর। বাণিজ্যের উদ্দেশে রেশম নিয়ে মাদুরাই যাচ্ছিলেন এক বণিক। সঙ্গে তাঁর মেয়ে পুষ্কলা। জঙ্গলের এই মন্দিরে এসে পুষ্কলা বাবার কাছে আরজি জানালেন, তিনি বরং এখানেই দেবতার পূজার্চনা করবেন। বাণিজ্য সেরে ফেরার পথে মেয়েকে নিয়ে যাবেন বাবা। সেইমতোই বণিক রওনা দিলেন গন্তব্যে। কিন্তু তারপরই ঘটল বিপত্তি। বনের রাস্তায় বণিকের পিছু নিল হাতির দল। স্থানীয় জনজাতির এক তরুণের দৌলতে কোনওমতে রক্ষা পেলেন ওই বণিক। খুশি হয়ে যুবককে নিজের সম্ভার থেকে মহামূল্য রেশমের বস্ত্র উপহার দিলেন তিনি। সেই গ্রাম্য তরুণ সঙ্গে সঙ্গেই গায়ে চাপালেন ওই বস্ত্র। জানতে চাইলেন, কেমন দেখাচ্ছে তাঁকে। রসিকতা করে বণিক বললেন, বিয়ের বরের মতো। কিন্তু সে কথার ফল যে কী দাঁড়াল, ফেরার পথে তা উপলব্ধি করলেন বণিক। দেখলেন মন্দিরের সামনে বা আশেপাশের জঙ্গলে, কোথাও হদিশ নেই তাঁর মেয়ে পুষ্কলার। শেষে মন্দিরের দরজা খুলে দেখলেন বিগ্রহের গায়ে সেই তরুণকে দেওয়া রেশমবস্ত্র, পাশে রয়েছেন পুষ্কলাও।
আরও শুনুন: বিয়ে করলেই থাকতে হবে ঘরজামাই! অদ্ভুত শর্তের জেরে বর জুটছে না গ্রামের ৩০০ তরুণীর
আশ্চর্যের কথা হল, শবরীমালার মতো এই মন্দিরও ত্রিবাঙ্কুর দেবস্বম বোর্ডের আওতায়। ১৮টি পবিত্র সিঁড়ি ভেঙে উঠতে হয় দুই মন্দিরেই। অথচ দুই মন্দিরের অন্দরমহলের গল্প একেবারে ভিন্ন। কোনও স্বৈরতান্ত্রিক একমুখীনতা নয়, বৈচিত্র্যই যে এ দেশের মূল কথা, সে কথাই যেন আরও একবার প্রমাণ করে দেয় আয়াপ্পানের এই দুই মন্দির।