বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর। প্রচলিত প্রবাদ, তবে অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। কুম্ভমেলার বর্তমান অবস্থার কথা ভাবলে এমনটা বলাই যায়। এত মৃত্যু, এত হাহাকার দেখেও স্রেফ মনের বিশ্বাসের টানে কুম্ভ ছুটছেন ভক্তরা। আর বিশ্বাসের ভরেই যাওয়ার পথে মাথা ঠেকাচ্ছেন ফ্লাইওভারে! ব্যাপারটা ঠিক কী? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কুম্ভমেলা যেন সাধুদের মিউজিয়াম! হরেক রঙের, হরেক ঢঙের, সাধুর ছড়াছড়ি। কারও মাথায় আস্ত বাগান, কেউ পরেছেন ৪৫ কেজি রুদ্রাক্ষ মালা, কেউ আবার আইআইটি পাস আউট! সাধুদের সাতকাহনে জমজমাট কুম্ভ। ভাইরাল কনটেন্টের কমতি নেই! সম্প্রতি এই দলে নাম লিখিয়েছে এক ফ্লাইওভার!
আরও শুনুন:
ভিড় সামলানো অসম্ভব! কুম্ভের আবহে বন্ধ বেনারসের গঙ্গারতি, খুলবে না শহরের একাধিক স্কুলও
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। কুম্ভের আবহে এবার ভাইরাল, ‘ফ্লাইওভার বাবা’! সাধারণ এক ব্রিজ। তার তলা দিয়ে প্রয়াগে হেঁটে চলেছেন হাজার হাজার ভক্ত। আর সেইসময় ব্রিজের থাম ছুঁয়ে প্রণাম করছেন। কেউ কেউ আবার লাফিয়ে ছুঁইয়ে নিচ্ছেন ব্রিজের নিচের অংশ। সেইসঙ্গে জয়ধ্বনি, ‘জয় ফ্লাইওভার বাবার জয়!’
হাস্যকর। মনে হতেই পারে। স্বাভাবিক সেটাই। তবে এই আচরণ যারা করছেন তাঁরা সজ্ঞানে করছেন। নেপথ্যে ঠিক কী কারণ, তার সঠিক ব্যাখ্যা নেই। তবে সবাই করছেন, তাই করছি, এমনটা অনেকেরই দাবি। কিছুদিন আগে বৃন্দাবন মন্দিরে এসির নোংরা জল চরণামৃত ভেবে পান করার ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছিল। তখনও একইভাবে বিতর্ক জমেছিল। সোশাল মিডিয়ায় সরব হয়েছিলেন বিশেষজ্ঞ মহলের অনেকেই। ধর্মের মোহে এইভাবে ‘বিষপান’ মেনে নিতে চাননি তাঁরা। সেই ঘটনার কিছুদিনের মধ্যেই এমন কাণ্ড নতুন করে শোরগোল ফেলেছে। হয়তো এই আচরণে সরাসরি কেউ বিপদে পড়ছেন না, তবে এমনটা যারা করছেন তাঁরা ঝোঁকের বশে এমন কিছু অনায়াসে করতে পারেন, যা অন্যের বিপদের কারণ হয়ে উঠবে, এমনটা সহজেই অনুমেয়।
:আরও শুনুন:
কুম্ভমেলায় চাহিদা তুঙ্গে গীতা, রামচরিত ইংরাজি অনুবাদের! ধর্মের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে জেন-জির?
আসলে, মহাকুম্ভের ঐতিহ্য চিরকালীন। তবে, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই সেখানে যেন লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। ডিজি যুগের প্রভাব এড়াতে পারেনি মহাকুম্ভ। আর তাই কুম্ভ যেমন প্রয়াগরাজে, তেমনই সোশ্যাল মিডিয়াতেও। বহু রিল। চোখের নিমেষে ভাইরাল। কুম্ভের চর্চাও তাই ঘুরে গিয়েছ নানা দিকে। কখনও সুন্দরী সাধ্বীর কুম্ভ মাতানো নিয়ে চলেছে দেদার কথাবার্তা। কখনও আবার আইআইটি বাবার ধর্মপথে জীবনের মোক্ষসন্ধান নিয়ে মশগুল মানুষ। মালা-বিক্রেতা এক তরুণীকে নিয়েও কম চর্চা হয়নি। শোনা যাচ্ছে, সেখান থেকে সোজা অল্লু অর্জুনের সিনেমায় সুযোগ পেয়েছেন তিনি। আবার এক আরসিবি ফ্যান প্রিয় দলের জার্সিকে স্নান করিয়েছেন কুম্ভে। অমৃতকুম্ভের সন্ধান যেন ধর্মচর্চা থেকে বাঁক নিয়েছে একেবারে অন্যদিকে। তা নিয়ে চলছে সমালোচনা। তাই ফ্লাইওভার প্রসঙ্গেও এই বিষয়টা আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসছে। সহজ করে বললে, কুম্ভকে সামনে রেখে প্রচারের আলোয় আসার নেশা। ফ্লাইওভার ছোঁয়া বা প্রণাম করাও যে সেই রিতির অঙ্গ তা ভাবাই যেতে পারে।