শাস্ত্রে উল্লেখ নেই। পৌরাণিক কাহিনিতেও তেমন খোঁজ মেলে না। নিতান্তই লোক বিশ্বাসে ভর করে জন্ম হয়েছে দেবি বাসলীর। তবে অন্যান্য লৌকিক দেবীর তুলনেয় তিনি কিছুটা আলাদা। কারণ বছরের একটা নির্দিষ্ট দিন নয়, এই দেবীর পুজো চলে বারোমাস। রয়েছে বেশ কিছু প্রাচীন এবং স্থায়ী মন্দিরও। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
লৌকিক দেবতা মাত্রেই, বেশ কিছু মিল বর্তমান। তার না আছে নির্দিষ্ট পূজা পদ্ধতি, না আছে গুরুগম্ভীর মন্ত্র। কিছুক্ষেত্রে নির্দিষ্ট করা নেই পুজোর নিয়মকানুনও। তবে দেবী বাসলী এইসবের বতিক্রম। পুজোর ব্যাপকতা ও প্রাচীনত্বের কারণেই তাঁকে স্রেফ আঞ্চলিক দেবীর আওতায় ফেলা যায় না।
সবার আগে জেনে নেওয়া যাক, দেবী বাসলীর শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা ঠিক কেমন। আসলে দেবীর পুজো পদ্ধতি ও নামের সঙ্গে শাস্ত্রীয় দুর্গার বেশ মিল পাওয়া যায়। তাই মনে করা হয় ইনিও দুর্গা আকৃতি ভেদে বা চণ্ডীস্বরূপা। সেইসঙ্গে দেবীর আরেক নাম বিশালাক্ষ্মী। তার থেকেই আরও স্পষ্ট হয় শাস্ত্রীয় ধারণা। অন্যদিকে এঁকে চৌষট্টি যোগিনীর অন্যতমা, রঙ্কিনীও মনে করেন অনেকেই। এমনটাও মনে করা হয়, আর্য-আর্যেতর কৃষ্টির সমন্বয়ে দেবীর সৃষ্টি। পরে হিন্দু সমাজের অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। যদিও লৌকিক বিশ্বাসে দেবীর মন্যতা রয়েছে যথেষ্ঠই।
দেবী মূর্তিও বিশেষভাবে আলাদা নয়। তবে মূর্তির ধরণ দুটি। প্রথমটি দ্বিভূজা, আর দ্বিতীয়টি চতুর্ভূজা। প্রথম ধরণ, অর্থাৎ দেবীর দ্বিভুজা মূর্তি অনেকটা লক্ষ্মী , সরস্বতীর প্রতি রূপ বলা চলে। গায়ের রং হলুদ। মাথায় মুকুট তাহকতে পারে, তবে বেশিরভাগ মূর্তিতেই দেবী এলোকেশী। সুদীর্ঘ ত্রিনয়ন বর্তমান। এক্ষেত্রে দেবীর এক হাতে বরাভয় অন্য হাতে প্রহরণ মূদ্রা থাকে। তবে চতুর্ভূজা মূর্তিটি খানিক আলাদা। সে ক্ষেত্রে প্রহরণ ও মুদ্রা ভিন্নরূপ। দেবীর গলায় নরমুণ্ড। পরনে রক্তবস্ত্র। দেবী মূর্তি মাতৃস্বরূপা হলেও তা উগ্র। দক্ষিণভারতের বিভিন্ন মন্দিরে দেবীর এই রূপের দেখা মেলে। তবে লৌকিক মতে এই দেবীর স্রেফ মুণ্ড পুজোরও চল রয়েছে।
স্বাভাবিক ভাবেই দেবীর পুজো পদ্ধতিতেও ভিন্নতা ধরা পড়ে। একদিকে তিনি তান্ত্রিক দেবী। তাই কিছু মন্দিরে সম্পূর্ণ গুহ্য তন্ত্রমতে তাঁর পুজো করা হয়। আবার কোথাও তান্ত্রিক ও ব্রাহ্মণ মিশ্রিত পদ্ধতিতে পুজো হয়। তবে লৌকিক মতে পুজো হলে সেখানে কোনও নির্দিষ্ট মন্ত্রের প্রয়োজন পড়ে না। সেক্ষেত্রে দেবীর নিত্যপূজারও চল নেই। বার্ষিক উৎসব বা জাতের পুজো হয় বৈশাখ মাসে। সুতরাং একথা বলাই বাহুল্য, এই দেবী লৌকিক আধারে থাকলেও, এঁকে স্রেফ লৌকিক দেবীর তকমা দেওয়া যায় না।