একের পর এক ট্রেন দুর্ঘটনা। ভূমিধসে বিধ্বস্ত ওয়ানড়। একইভাবে বন্যায় ভাসছে উত্তরাখণ্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা। এর মাঝেও রমরমিয়ে চলছে ‘ডার্ক ট্যুরিজম’। শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বজুড়ে বিপর্যয়ের মাঝেই চলছে এই বিশেষ পর্যটন। ঠিক কী এই ডার্ক ট্যুরিজম? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কখনও যুদ্ধ, কখনও ভূমিকম্প, কখনও তার থেকেও বড় বিপর্যয়! বিগত কয়েকবছরে বিশ্ব সাক্ষী থেকেছে একাধিক ধ্বংসলীলার। প্রাণ হারিয়েছেন বহু। সারাজীবনের জন্য অঙ্গহানি হয়েছে লাখ লাখ মানুষের। কতজনের যে চিরতরে প্রিয়জনের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে তার হিসাব রাখা কঠিন। এত যন্ত্রণা, এত হাহাকার সামনে থেকে দেখার ইচ্ছা আদৌ কারও হতে পারে?
আরও শুনুন: বিপর্যস্ত ওয়ানড়ে সেতু গড়ে উদ্ধার দুর্গতদের, লিঙ্গবৈষম্য উড়িয়ে কুর্নিশ আদায় মেজর সীতার
পর্যটনের এই নয়া ট্রেন্ড জানাচ্ছে, অবশ্যই হতে পারে। নতুন এই পর্যটনের মূল আকর্ষণ ধ্বংসস্তূপ। যেখান হাজার হাজার মানুষের কান্না মিশে আছে, সেখানে গিয়েই সেলফি তুলতে ব্যস্ত দর্শকরা। এর নামই ‘ডার্ক ট্যুরিজম’। আক্ষরিক অর্থে পর্যটনের এই নয়া ট্রেন্ডে অন্ধকার নেই, কিন্তু যেভাবে মানুষের কান্না মিশে থাকা ধ্বংসস্তূপ দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন অনেকে তাকে অন্ধকারের সঙ্গে তুলনা করলে ভুল হয় না।
তালিকায় সবার উপরে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের বিভিন্ন জায়গা। একসময় যেখানে হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ ছিল, এখন তার প্রায় সবই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ভয়ঙ্কর বিস্ফোরনে শতচ্ছিন্ন হয়েছে হাজার হাজার দেহ। সেই রক্ত মাখা ভাঙা পাঁচিল কিংবা অর্ধেক হয়ে যাওয়া ইমারতের ছবি তোলাই এই পর্যটকদের মূল লক্ষ্য। এদেশেও এর প্রভাব চোখে পড়ছে রীতিমতো। কিছুদিন আগেই করমন্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক। জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনাও ভোলেননি অনেকেই। এমনই আরও কতশত রেল দুর্ঘটনা বিগত কয়েক বছরে আতঙ্ক তৈরি করেছে সাধারণ মানুষের মনে। অথচ সেইসব দুর্ঘটনাস্থল এখন পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত রেলের বগি, তার সামনে দাঁড়িয়েই দেদার সেলফি তোলা হচ্ছে। কেউ কেউ ভাঙা জানলার টুকরোও সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন, স্মৃতি হিসেবে। এখানেই শেষ নয়, বন্যা বিধ্বস্ত ওয়ানড়েও রমরমিয়ে চলছে ডার্ক ট্যুরিজম। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বন্যায় ভেসে যাওয়া গ্রাম দেখতে ছুটছেন অনেকে। তবে স্রেফ দেখাটুকুই উদ্দেশ্য নয়। সঙ্গে চলছে ধ্বংসের ছবি তোলা। অনেকে এমনটা করতে গিয়ে বিপদের মুখেও পড়ছেন। তাও আশ মিটছে না ছবি তোলার। এতে সমস্যায় পড়ছে উদ্ধারকারী দলও। কেরল সরকারের তরফে কড়া ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কেউ যেন বন্যা বিধ্বস্ত এলাকা ঘুরতে না যান। কিন্তু সেসব শুনছে কে?
:আরও শুনুন:
বড্ড বেশি মানুষ গেল বানের জলে ভেসে! প্রকৃতির পূর্বাভাসকে গুরুত্ব দিতে শেখাবে ওয়ানড়?
তবে ডার্ক ট্যুরিজমের চল নতুন নয়। ধ্বংসস্তূপের ছবি তোলার শখ রয়েছে অনেকেরই। সম্প্রতি এই বিষয়ে একটি সমীক্ষাতেও দেখা গিয়েছে, অনেকেই জীবনে একবার হলেও এই ডার্ক ট্যুরিজমের শরিক হতে চেয়েছেন। তালিকায় নাৎসিদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্প কিংবা চেরনোবিল পরমাণু দুর্ঘটনা স্থল সবই রয়েছে। কেউ কেউ কুলধারার মতো ভূতুড়ে গ্রামেও ঘোরার জন্য পৌঁছে যান। আদতে এই গ্রামের সঙ্গে ভূতের সম্পর্ক আছে কি না, তা তর্কের বিষয়। কিন্তু রাতারাতি এই গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন এখানকার বাসিন্দারা। সেই ফাঁকা শুনশান জায়গা দেখতে দলে দলে ভিড় জমান পর্যটকরা। আবার কিছু কিছু দেশে জনসমক্ষে অপরাধীকে ফাঁসি দেওয়ার চল রয়েছে। সে দৃশ্য দেখতেও অনেকে ভিড় জমান। এও ডার্ক ট্যুরিজমের অংশ বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এমনিতে এই ভ্রমণ কী আনন্দ দেয়, তা বলা কঠিন। তবে পর্যটনের এই নয়া ধরন যেভাবে উদ্ধার কাজে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে তা সমর্থন করা যায় না।