অক্সফোর্ডের ‘ওয়ার্ড অফ দ্য ইয়ার’ তকমা পেয়েছে ‘ব্রেন রট’ শব্দটি। যার আভিধানিক অর্থ ‘মস্তিষ্কের পচন’। একপ্রকার মানসিক রোগই বটে, যার শিকার প্রায় সকলেই। ঠিক কীভাবে ‘ব্রেন রট’ হয়? এর থেকে সমস্যাই বা কী হতে পারে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
বেরোনোর কথা সকাল দশটায়। এদিকে সাড়ে নটা বাজলেও হুঁশ নেই সমীরণের। দেড় ঘন্টা হতে চলল বাথরুমেই রয়েছে। শরীর খারাপ? আজ্ঞে না, হাতে মোবাইল নিয়ে বাথরুমে ঢুকলে এমনই অবস্থা হয় সমীরণের। চেষ্টা করেও এই অভ্যাস বদলাতে পারেনি। বরং জোর করে মোবাইলের থেকে দূরে থাকা শুরু করলে, হিতে বিপরীত হয়েছে।
ধরে নেওয়া সমীরণ কাল্পনিক চরিত্র। কিন্তু সমস্যাটা মোটেও অবাস্তব নয়। ইন্টারনেটে যুগে স্মার্টফোন ব্যবহারকারী অধিকাংশই এই সমস্যায় ভুগছেন। কেউ বাথরুমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিচ্ছেন, কেউ বা নির্ধারিত স্টপেজে নামতে ভুলে যাচ্ছেন, কেউ আবার খিদে-তেষ্টা সব ভুলতে বসেছেন! সবের নেপথ্যে ভিলেন মোবাইল। অবশ্য একা মোবাইলকে দোষ দিয়ে লাভ নেই, এর জন্য দায়ী মস্তিষ্কের এক বিশেষ অবস্থা। যার পোশাকি নাম, ‘ব্রেন রট’। অভিধান বলছে ‘রট’ শব্দের অর্থ পচন, সুতরাং ব্রেন রটের সহজ অর্থ ‘মস্তিষ্কের পচন’। সত্যি সত্যি এমন কিছু হলে বেঁচে থাকার কথা নয়। তাই এক্ষেত্রে বিশেষ মানসিক অবস্থা বোঝাতে ব্যবহার হচ্ছে শব্দটি। ডিজিটাল যুগে মোবাইল ছাড়া থাকা সম্ভব না, কিন্তু তাই বলে জীবনের সব আবেগ, আনন্দ যদি মুঠোফোনে আটকা পড়ে, তাহলে সমস্যা বিস্তর। এই নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা হয়, সমাধানের পথ খোঁজার চেষ্টা করেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু লাভের লাভ হয় না। মাঝখান থেকে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘ব্রেন রট’ শব্দটি। ২০২৪ সালের অক্সফোর্ড ওয়ার্ড অফ দ্য ইয়ার হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে এই শব্দ। প্রতিবছর ভোটাভুটির মধ্যমে বেছে নেওয়া হয় বছরের সেরা শব্দটিকে, চলতি বছর ৩৭ হাজারের বেশি মানুষ ভোট দিয়েছেন ‘ব্রেন রট’-এ। আর তাতেই মস্তিস্কের বিশেষ অবস্থানের আভিধানিক অর্থটি জিতে নিয়েছে নয়া খেতাব।
জানা যায়, এই শব্দের প্রথম প্রয়োগ হয়েছিল ১৮৫৪ সালে। সেই সময় তো ডিজিটাল দুনিয়া বলে কিছুর অস্তিত্ব ছিল না, তাহলে ‘ব্রেন রট’ কী বোঝাত? সহজ করে বললে এই একই কথা বোঝাত। তখনও যেটুকু প্রযুক্তির অগ্রগতি, তার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা এবং বিপদের কথাই ইঙ্গিত করত এই শব্দ। মোটের উপর এই শব্দকে নেতিবাচকই বলা যায়। ব্রেন রট হওয়া মানে, বুদ্ধিভ্রম হওয়া। সবকিছুকেই সহজ করে ধরে নেওয়া, কোনও বিষয়ের গভীরে গিয়ে সেটা নিয়ে ভাবনাচিন্তা না করাকেই ‘ব্রেন রট’ বলা যায়। যা এত বছর পরেও সমান ভাবে প্রাসঙ্গিক। প্রযুক্তির অগ্রগতি বর্তমানে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যা এই অবস্থা করছে অনেকের। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার আদৌ কোনও উপায় রয়েছে কি না, তা বলা কঠিন। বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকেন, তা কেউ মানে, কেউ কানেই তোলে না। আর তাতেই ‘ব্রেন রটে’ কোনওরকম প্রভাব পড়ছে না। একইভাবে সমাজের ব্যধি হিসেবে আরও বড় আকার নিচ্ছে এই মানসিক অবস্থান। নতুন প্রজন্মও এই অবস্থাকে মেনে নিচ্ছে, নিজেদের সঙ্গে তাঁরা মিল খুঁজে পাচ্ছে এই অবস্থার। তাই সকলেরই নজরে ‘ব্রেন রট’, সারিয়ে ফেলার জন্য নয়, জনপ্রিয় শব্দ হিসেবে ভোট দেওয়ার জন্য।