বিষ্ণু মন্দির। আরাধ্য স্বয়ং নারায়ণ। আমিষ খেয়ে মন্দিরে ঢোকাও পাপ মনে করেন ভক্তরা। অথচ সেই তিরুপতি মন্দিরের প্রসাদেই ব্যবহার হয় গরুর চর্বি। এই খবর সামনে আসতেই শোরগোল পড়েছে। কিন্তু শুধু তিরুপতির প্রসাদ নয়, গরুর চর্বি ব্যবহার হয় মোমবাতিতেও। তালিকায় আর কী কী রয়েছে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
তিরুপতি মন্দিরের প্রসাদী লাড্ডু তৈরিতে ব্যবহার হয় গরুর চর্বি। অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর এমন অভিযোগ ঘিরে শোরগোল পড়েছিল। টেস্ট রিপোর্টেও তাঁর দাবিকেই মান্যতা দেওয়া হয়েছে। লাড্ডু পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে, তার মধ্যে গরুর চর্বি, মাছের তেল, পাম তেল ইত্যাদি অনেক কিছুই ব্যবহার করা হয়। যদিও এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ যে বিশেষ ধরনের প্রাণীজ ফ্যাট এই লাড্ডুতে ব্যবহার করে হয় তা আরও অনেক কিছু তৈরিতেই কাজে লাগে। তালিকায় রয়েছে মোমবাতি, সাবান, স্যুপ, কেক সহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনের জিনিস।
স্রেফ প্রসাদ হিসেবে নয়, তিরুপতি মন্দিরের এই লাড্ডু স্বাদের জেরেও জনপ্রিয়। প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্ত মন্দিরে পুজো দেন। প্রসাদ হাতে মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে ছবিও তোলেন। আকারে লাড্ডুর মতোই, তবে নিরেট গোল নয়। বরং একটু উঁচুনিচু। এমনটা হয় লাড্ডুর মধ্যে থাকা বিভিন্ন রকমের ড্রাইফ্রুটের জন্য। মজার বিষয় এই লাড্ডু সহজে ভাঙে না। কারণ সম্পূর্ণ ঘি দিয়ে লাড্ডুর পাক প্রস্তুত হয়। এখানেই যত সমস্যা। সাধারণ বাজারচলতি ঘি ব্যবহার করলে এমন স্বাদ আর পাক হয়তো করা সম্ভব হতো না। তাই তিরুপতি লাড্ডু তৈরিতে ব্যবহার হয় বিশেষ ধরনের ঘি। তাতেই থাকে ‘বিফ ট্যালো’ অর্থাৎ গরুর থেকে প্রাপ্ত চর্বি। সেইসঙ্গে ম্যাচের তেল, পাম ওয়েলও থাকে এই লাড্ডুতে। মূলত লাড্ডুর স্বাদ ও মান বৃদ্ধির জন্যই এমনটা করা হয়। অন্তত বিশেষজ্ঞদের দাবি এটাই। কারণ স্রেফ এই লাড্ডু তৈরিতেই যে বিফ ট্যালো ব্যবহার হয় তা নয়। সাবান, মোমবাতি, স্যুপ এমনকি কেক তৈরিতেও কাজে লাগতে পারে এই ফ্যাট। শুধু তাই নয়, তালিকায় রয়েছে আরও অনেক কিছুই।
ননস্টিক রান্নার বাসনের কথাই ধরা যাক। বর্তমানে অনেকেই এই বিশেষ পাত্রে রান্না করেন। তাতে হাজার একটা সুবিধা রয়েছে বলেই মনে করেন তাঁরা। কিন্তু এই ননস্টিক বাসনে যে কালো আস্তরণ দেখা যায়, তাতেও অনেক সময় বিফ ট্যালো ব্যবহার করা হয়। সব সংস্থার বাসনে এমনটা না হলেও , বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয়। বেকিং জগতেও এর চাহিদা অনেক। যে পাত্রে কেক তৈরি হবে তার মধ্যে সামান্য পরিমাণে এই চর্বি লাগিয়ে নিলে কোনওভাবেই পাত্রের গায়ে কেক আটকে যাবে না। অনেকে এই কাজ তেল বা মাখন দিয়ে সেরে নেন। কিন্তু বড় বড় বেকিং কারখানায় বিফ ট্যালো ব্যবহারের চল রয়েছে। অনেকে বলেন সামান্য পরিমাণে থাকলেও এই চর্বি কেকের স্বাদ দ্বিগুণ করে দেয়। রেস্তরাঁয় স্যুপ তৈরিতেও এই ট্যালো ব্যবহারের চল রয়েছে। উদ্দেশ্য একই, স্বাদ বাড়ানো। তবে সবথেকে বেশি ট্যালো ব্যবহার করা হয় মোমবাতি তৈরিতে। বাজারচলতি সাধারণ মোমাবাতিতে না হলেও জার ক্যান্ডেল বা শৌখিন মোমবাতিতে এ জিনিস ব্যবহার হয়। একইভাবে সাবান তৈরিতে এই ফ্যাট অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রীতেও ব্যবহার করা হয়। আর এমনটা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। অন্তত বেশ কিছু জনপ্রিয় জিনিসের ক্ষেত্রে তো বটেই। কিন্তু মন্দিরের প্রসাদে এই গরুর চর্বির ব্যবহার সহজে মানতে পারছেন না কেউই। আপাতত এই নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়েছে বিভিন্ন মহলে।