এক-একটা বাঁকে জীবন যে কখন আমাদের বোকা বানিয়ে দেয়, তা ধরাই যায় না। আর সেইজন্যই বোধহয়, মানুষের দিনলিপিতে রয়ে গিয়েছে এমন একটা দিন, যা কেবল বোকাদের উদ্দেশেই উৎসর্গ করা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক এপ্রিল ফুল’স ডে-র গল্প।
কেবল বোকাদের জন্যেই একটা গোটা দিন! কেন এল এমন ভাবনা? তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। শুনে নেওয়া যাক, কী বলছেন তাঁরা?
আরও শুনুন: সেনাবাহিনীতে চাকরি পেল পেঙ্গুইন, মিলল ‘স্যার’ উপাধিও
সবচেয়ে প্রচলিত মতটি ক্যালেন্ডার সম্পর্কিত। আজকে আমরা যে ক্যালেন্ডার দিয়ে দিন-মাস-বছরের হিসেব রাখি, সেই গোছানো হিসেবে পৌঁছতে মানুষের সময় লেগেছিল কয়েকশো বছর। আজকের এই দিনপঞ্জির গোড়াপত্তন করেছিলেন রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার। কিন্তু তাঁর প্রচলন করা জুলিয়ান ক্যালেন্ডারেও বেশ কিছু হিসেবের সমস্যা ছিল। ক্রিস্টোফার ক্ল্যাভিয়াস নামের এক জ্যোতির্বিদকে সেইসব গোলযোগ মেটানোর দায়িত্ব দেন ত্রয়োদশ পোপ গ্রেগরি। ১৫৮২ সাল থেকে চালু হয় নতুন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। আর এখনও পর্যন্ত সেই ক্যালেন্ডারই ব্যবহার করে চলেছি আমরা। ১ জানুয়ারিকেই বছরের প্রথম দিনের মর্যাদা দেওয়া হয় এই ক্যালেন্ডারে। কিন্তু পুরনো জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে নতুন বছর উদযাপন করা হত ২৫ মার্চ কিংবা ১ এপ্রিল তারিখে। মুশকিল হল, গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার চালু হওয়ার পরেও ইউরোপের বেশ কিছু অংশের মানুষ সেই পুরনো রীতিই মেনে চলছিলেন। বছরের প্রথম দিনটিকে রাতারাতি মাস তিনেক এগিয়ে আনতে ঘোরতর আপত্তি জানিয়েছিলেন তাঁরা। ১ এপ্রিলে তাঁদের নববর্ষ উদযাপনের ঘটা দেখে বাকি ইউরোপ তাঁদের ‘ফুল’ অর্থাৎ ‘বোকা’ বলে বিদ্রুপ করতে শুরু করে। আর সেখান থেকেই এপ্রিল ফুল’স ডে-র শুরুয়াত বলে মনে করেন অনেকে।
আরও শুনুন: মানুষ প্রায় নেই বললেই চলে! এই দ্বীপে বসবাস কয়েক হাজার বিড়ালের
বছর শুরুর দিনের সঙ্গে ‘ফুল’ বা ‘বোকা’ শব্দের যোগ থাকার নজির কিন্তু এই একটিতে শেষ নয়। ফ্রান্সে একসময় ১ জানুয়ারি ফিস্ট অফ ফুলস উদযাপন করা হত বলে জানা যায়। পরে সেই দিনেই ‘অল ফুলস ডে’ নামে অন্য একটি অনুষ্ঠানের প্রচলন হয়। ফ্রান্সে এই অনুষ্ঠানকে বলা হত পয়জন দি’ এভরিল। তার অর্থ এপ্রিল ফিশ। বন্ধুদের পিছনে কাগজের তৈরি মাছ আটকে মজা করা হত এই দিনে। স্কটল্যান্ডে এই অনুষ্ঠানকে বলা হয় গকি ডে। কোকিলের আরেক নাম গকি, যা আসলে বোকামির ইঙ্গিত।
এপ্রিল ফুলের সঙ্গে আরেকটি ঘটনাকেও জুড়ে দেয় ব্রিটেনের প্রচলিত লোককাহিনি। ত্রয়োদশ শতক নাগাদ সেখানে নিয়ম ছিল, ব্রিটেনের রাজা যেখানে যেখানে পা রাখবেন তা হয়ে যাবে রাষ্ট্রের সম্পত্তি। একবার রাজা পাড়ি দেন ব্রিটেনের গথাম শহরে। কিন্তু নিজেদের সম্পত্তি যাতে রাষ্ট্রের দখলে চলে না যায়, সেজন্য শহরের অধিবাসীরা এক অভিনব বুদ্ধি বের করে। দেখা যায়, সারা শহরের সব বাসিন্দা বোকার মতো কাজ করছে। এমন বোকাদের শহরে আর কে যায়! এই ভেবেই বাতিল হয়ে যায় রাজার সফর। রাষ্ট্রের দখলদারি থেকে বেঁচে যায় গথাম। এই ঘটনাকে স্মরণ করে এপ্রিল ফুল’স ডে পালিত হয় বলেও মনে করেন অনেকে।