বয়স ১১০। অভিজ্ঞতার ভারে নুব্জ। তবু মানুষের সঙ্গ ছেড়েছেন। শেষ বয়সের শেষ কটা দিন, অন্য কারও জন্য। আর তাতেই শিরোনামে উঠেছে তাঁর নাম। সকলের কাছে তাঁর আচরণ বেশ অদ্ভুত ঠেকেছে। কিন্তু এমনটাই কি স্বাভাবিক হতে পারে না? প্রশ্ন নিয়ে ভাবনার অবকাশ থাকবেই। তবে তার আগে জেনে নেওয়া দরকার কী নিয়ে কথা বলছি! আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কথায় আছে, যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ! অর্থাৎ দেহে যতক্ষণ প্রাণ আছে ততক্ষণ মোহের জালে জড়িয়ে থাকা। বেঁচে থাকা। কিন্তু যিনি ১১০ বছর পৃথিবীতে কাটিয়ে ফেললেন তাঁর আর নতুন করে বাঁচার বাকী আছে?
হয়তো না। অন্তত মনুষ্য জগতের যাবতীয় সুখ-অসুখের বিস্তর ধারণা হয়েছে তাঁর, এমনটা বলাই যায়। নিজেও যে ঝুলি ভরে সেসব আগলে রেখেছেন তা বলাই যায়। হয়তো জটিল কোনও ব্যধি, পাকাপাকিভাবে জায়গা করে নিয়েছে শরীরে। সম্পত্তির সুখ না হোক, সেই অসুখ সঙ্গে নিয়ে পরলোকে গমন করতে হবে। তবু আক্ষেপ নেই। বরং কিছু করার তাগিদ রয়েছে। যদিও নতুন করে নিজের সুনাম বৃদ্ধির চেষ্টা নয়। মানুষের পৃথিবীতে চির অমর হয়ে থাকার চাহিদাও নয়। বরং নিতান্তই ক্ষুদ্র, অবোলাদের জন্য জীবনের শেষ সময়টা উতসর্গ করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অ্যালফ্রেড। কাজ বলতে, সোয়েটার বোনা। তবে পেঙ্গুইনের জন্য। শুনতে অবাক লাগছে? বিষয়টা তবে খুলেই বলি।
:আরও শুনুন:
পোষা মোরগের শ্রাদ্ধ করলেন মালিক, ভোজ খেলেন ৫০০ গ্রামবাসী
আসলে, পরিবেশ দূষণ কিংবা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সমস্যার কথা সকলেরই কমবেশি জানা। এর প্রভাবে মানুষের কী কী ক্ষতি হতে পারে সেই নিয়েও কম আলোচনা হয়নি। কিন্তু তার বাইরেও তো কতশত প্রাণী রয়েছে, তাদের কথা কজন ভাবে? তাই অনায়াসে লুপ্তপ্রায় থেকে বিল্পুত হয়ে যায় কত প্রাণী। এই দলে সামুদ্রিক প্রাণীরাও সংখ্যায় কম নেই। কারণ, বিভিন্ন সময় সমুদ্রের জলে অশুদ্ধি মিশে যাওয়া। কখনও তেল লিক, কখনও অন্য কিছু, নানা সময় দূষিত করছে সমুদ্রকে। তার প্রভাবে জীবন মরণ সমস্যা দেখা দিচ্ছে বেশ কিছু প্রাণীর। পেঙ্গুইনের কথাই ধরা যাক। সমুদ্রে ভাসমান তেলের কারণে এই ছোট ছোট পাখির শরীরে বিশেষ বদল দেখা যায়। মূলত পালক উঠে যাওয়া। তার জেরে ঠাণ্ডায় বেঁচে থাকা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে ওঠে। যদিও পৃথিবীতে একেবারেই ভালো মানুষ নেই এমন নয়। এক সংগঠনের তরফে বিভিন্ন গবেষণা চালিয়ে দেখা যায়, পেঙ্গুইনদের যদি সোয়েটার পরিয়ে দেওয়া যায় তাহলে সমস্যা সুরাহা হতে পারে। ছোট বাচ্ছাদের যে মাপের সোয়েটার পরানো হয়, অনেকটা সেইরকম। এই নিয়ে সাধারণ জনগনের ওই সংস্থা আবেদন জানায়, কেউ যদি স্বেচ্ছায় সোয়েটার বুনে দেয় অসহায় অবোলাদের জন্য।
:আরও শুনুন:
পোষা শুয়োরের প্রতি মায়া পড়ে গেছে, ঘরে রাখতে আইন-আদালত করছেন ব্যক্তি
এই ডাকে অনেকেই সারা দিয়েছিলেন। আর সেই দলে ছিলেন অ্যালফ্রেড। বয়সের ভারে যতই নুব্জ হয়ে পড়ুন, পেঙ্গুইনের জন্য সোয়েটার বুনতে এতটুকু হাত কাঁপেনি তাঁর। শুয়ে বসে দিব্য বুনেছেন বেশ কয়েকটা সোয়েটার। সেসব পরেছে ছোট ছোট পাখির দল। বিষয়টা যে অন্যরকম সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। তবে এটাই যে শিক্ষনীয় তা সহজেই বলা যায়। হয়তো এইভাবে সোয়েটার বোনার প্রয়োজন হত না, যদি অন্য কেউ একটু সচেতন হতেন। সমুদ্রের জল দূষণের মতো বিষয়টা আরও খানিক গুরুত্ব দিয়ে দেখা হতো। তাহলে হয়তো অন্যরকম একটা পৃথিবীর সাক্ষী থাকতাম আমরা। ১১০ বছরের বৃদ্ধ যেন নিজের কাজ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, আরও কত কি শেখা, আরও কত কি জানা, কতটা সচেতন থাকা বাকি থেকে গিয়েছে। তা না হলে হয়তো কারও কিছু যায় আসবে না, তবে অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর অধরাই থেকে যাবে।