গর্ভগৃহেই রয়েছে ৯০ ফুটের মূর্তি। সেখানেই পূজিত হন দেবী। এতবড় মূর্তির রত্নভাণ্ডারও ছোট নয়। কোটি কোটি টাকার গয়নায় সেজে ওঠেন দেবী। মালা থেকে শুরু করে মুকুটের মাপও রাজকীয়। কোন মন্দিরের কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
মন্দিরে বড় মূর্তি থাকতেই পারে। তবে গর্ভগৃহে থাকা মূর্তির আকার কোনওভাবেই বড় হয় না। কারণ অবশ্য একাধিক। এই মূর্তিতেই মূলত স্নান করানো বা অন্যান্য উপাচার পালন হয়। কিছুক্ষেত্রে কেবলমাত্র পুরোহিতেরই অধিকার থাকে গর্ভগৃহের মূর্তি স্পর্শ করার। বড় মূর্তি হলে সাজানো বা স্নান করানোয় অসুবিধা। তাই গর্ভগৃহের মূর্তি সাধারণত ছোটই হয়। ব্যতিক্রম অন্ধ্রের বাসবি দেবীর মন্দির।
:আরও শুনুন:
পায়ের তলায় পিষে দিলেই বাড়বে পাপের বোঝা, এই মন্দিরে পিঁপড়েই আরাধ্য
এ দেশে মন্দিরের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। উত্তরের মতো দক্ষিণেও রয়েছে একাধিক বিখ্যাত মন্দির। মূলত স্থাপত্যের জন্যই এখানকার মন্দিরগুলি বিখ্যাত। প্রায় সব মন্দিরের চূড়াতেই একাধিক মূর্তি দেখা যায়। একইসঙ্গে আরাধ্যের বড় মূর্তি রাখাও এখানকারই চল। তাই বলে গর্ভগৃহে ৯০ ফুটের মূর্তি! অন্ধ্রের বাসবি মন্দির গোটা দেশের মধ্যেই বিরল। মন্দিরের আরাধ্য দেবী বাসবি, স্থানীয় কোমতি জাতির কুলদেবী। এঁকে দুর্গাজ্ঞানে পুজো করা হয়। অন্ধ্রপ্রদেশে বাসবি দেবীর একাধিক মন্দির রয়েছে। কিন্তু পেনুগোণ্ডার মন্দিরটিতেই রয়েছে সবথেকে বড় মূর্তি। তবে এর বয়স খুব বেশি নয়। বছর পাঁচেক আগ মন্দিরের গর্ভগৃহে মূর্তিটির প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রায় ৪২ টন তামা, দেড় টন ব্রোঞ্জ, ২০ টন দস্তা, ৬০০ কেজি রুপো এবং ৪০ কেজি সোনা দিয়ে মূর্তিটি তৈরি। সেইসঙ্গে রয়েছে চোখ ধাঁধানো গয়নাও। বড় মূর্তির গয়নার মাপও রাজকীয়। বিগ্রহে একটি ফুলের মালা পরাতে হলেও ১০-১২ জনের সাহায্য প্রয়োজন। অবশ্য এই একটিই মূর্তি যে রয়েছে তা নয়। সঙ্গে রয়েছে পাথরের একটি ছোট মূর্তিও। সাধারণ ভক্তরা সেই মূর্তিতেই পুজো করেন। দুর্গা অংশ হিসেবে এই দেবীর উল্লেখ পুরাণের গল্পেও মেলে। সেখানে দেবীকে মনুষ্য অবতার হিসেবেই দেখানো হয়েছে।
:আরও শুনুন:
কোল আলো করে আছে ছোট্ট শিশু, অন্য রূপেও পূজিতা মা কালী
দেবী সম্পর্কে রয়েছে কিংবদন্তিও। শোনা যায়, বহুকাল আগে এখানকার রাজা সন্তান শোকে কাতর হয়ে উঠেছিলেন। সেইসময় স্থানীয় কোমতি উপজাতির এক পণ্ডিত রাজাকে পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করতে বলেন। সেই যজ্ঞ থেকে উঠে আসা প্রসাদ খেয়েই গর্ভবতী হন রাণী। কোল আলো করে জন্ম নেয় দুই সন্তান। এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সুখে শান্তিতে রাজ্যপাট সামলাতে থাকেন রাজা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজকন্যা বাসবি বড় হন। তবে আজীবন কুমারী থাকার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তখনকার দিনে কোনও মহিলার এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া বেশ দুঃসাহসী ছিল। কিন্তু রাজকন্যাকে কিছু বলার সাহস ছিল না কারও। কিন্তু বাসবির দিকে নজর পড়ে রাজা বিমলাদিত্যের। রাজকন্যাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন তিনি। বাসবিও নিজের সিদ্ধান্তের কথা রাজাকে জানিয়ে দেন। রেগে গিয়ে যুদ্ধঘোষণা করেন রাজা। রাজ্যের তখন সেই অবস্থা ছিল না, যে যুদ্ধে বিমলাদিত্যকে হারাবেন। রাজ্যবাসীর কথা ভেবে বাসবি ঘোষণা করেন তিনি আগুনে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ বিসর্জন দেবেন। সকলে বাধা দিতে এলে দুর্গারূপে প্রকট হন বাসবি। রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করেন, তাঁর মৃত্যু হলেই রাজার পতন হবে। বাস্তবে হয়ও তাই। বাসবির মৃত্যুর খবর পেয়েই রক্তবমি করে মারা যান রাজা। এরপর থেকেই বাসবি দেবী হয়ে ওঠেন স্থানীয়দের কাছে। এমনিতেই তাঁকে দুর্গার অংশ মনে করতেন সকলে। তবে রাজ্যবাসীর প্রাণ রক্ষা করে সকলের মধ্যে দেবি হিসেবে মান্যতা পান বাসবি। আজও সেই ধারা বজায় রেখে হাজার হাজার মানুষ অন্ধ্রের এই দেবীকে পুজো করে আসছেন।