গরমে বাইরে বেরোতেও ইচ্ছা করে না। দৌড়ানো তো দূর অস্ত! অথচ চাঁদিফাটা গরম উপেক্ষা করেই ম্যারাথনে অংশ নিয়েছিলেন মহিলা। গরমের চোটে জুতো অবধি গলে যায়। তাতেও থামেননি। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
একটা বয়সের পর অনেকেই দৌড়ঝাঁপ এড়িয়ে চলেন। এমনকি বেশিক্ষণ হাঁটার প্রয়োজন পড়লেও রীতিমতো ঘাবড়ে যান। এদিকে ৫২ বছর বয়সী মহিলা দিব্যি অংশ নিয়েছেন ম্যারাথনে। ১২ দিনে দৌড়ে শেষ করেছেন ১০০০ কিমি। যার দরুণ রেকর্ডও গড়েছেন তিনি।
আরও শুনুন: শুধু খাবার পৌঁছানো নয়, প্রয়োজনে করবেন চিকিৎসাও, ডেলিভারি কর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ সংস্থার
কথা বলছি, নাতালি দাউ সম্পর্কে। বছর ৫২-র এই মহিলা আল্ট্রাম্যারাথন রানার। মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। সম্প্রতি এমনই এক ম্যারাথনে অংশ নিয়ে এই রেকর্ড গড়েছেন তিনি। লক্ষ ছিল ১০০০ কিমি দৌড়ে পার করা। তাও কোনও একটা দেশে নয়। নাতালি দৌড়েছেন তাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন এলাকার মধ্যে দিয়ে। এর জন্য তিনি সময় নিয়েছেন ১২ দিন। প্রায় ৮৪ কিমি দৌড়েছেন রোজ। যা ওই বয়সের অনেকে ভাবতেই পারেন না। শুধু বয়সের সমস্যা নয়, নাতালি দৌড় শুরু পর থেকে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও পড়েছেন। যার প্রধান কারণ ছিল গরম। যেসব দেশের মধ্যে দিয়ে তিনি দৌড়েছেন তা কোনওভাবেই শীতপ্রধান নয়। তার ওপর গরমকাল। কাজেই প্রায় ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা তারও বেশি তাপমাত্র সহ্য করেই রাস্তায় দৌড়েছেন নাতালি। দৌড় শুরুর প্রথমদিনেই হিপ জয়েন্টে চোট পান। তৃতীয়দিনের মাথায় ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশনও হয়। তবু তিনি থামেননি। যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করেই দৌড় চালিয়ে যান। তবে আসল সমস্যা হয় অন্য জায়গায়। তীব্র গরমে তাঁর জুতো গলতে শুরু করে। যার ফলে চোট পান পায়ে। ফোস্কা অবধি পড়ে। তাতেও দৌড় থামাননি।
আরও শুনুন: চাকরি না পেলে বেলাকে পাবেন না! চাকরির আবেদনে কাতর সওয়াল যুবকের
আসলে, এই দৌড় বিশেষ এক বার্তা পৌঁছে দিতেই শুরু করেছিলেন নাতালি। যা মূলত বয়স্ক মহিলাদের জন্যই ছিল। আসলে, বয়স যে কোনও কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার অজুহাত হতে পারে না, সেটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন নাতালি। তাঁর কথায়, প্রত্যেকের নিজের সীমাবদ্ধতাকে চ্যালেঞ্জ করা উচিত। তাতে কী হল শেষমেশ তা ভাবার দরকার নেই। উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসাটা আসল। কোনও কাজ শুরু করব এই ভাবনাটাই সেই কাজ শেষ করতে সাহায্য করবে। নিজের উদাহরণ দিয়েই তা বোঝাতে চেয়েছেন নাতালি। শারীরিক প্রতিকূলতা নিয়ে তাঁর পক্ষেও দৌড় চালিয়ে যাওয়া সহজ ছিল না। প্রতিদিন দৌড়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে বেশ সমস্যা হত নাতালির। তবু তিনি পেরেছেন। এবং তাঁর মতো আরও অনেকেই এমন কিছু করতে পারবেন বলে মনে করছেন তিনি। এদিকে, ১২ দিনে ১০০০ কিমি দৌড়ে বিশেষ রেকর্ডও গড়েছেন তিনি। একইসঙ্গে তাঁর উদ্দেশ্য প্রচার করে প্রায় ৫০ হাজার ডলার অর্থ সাহায্যও যোগাড় করেছেন। যা মহিলাদের ক্রিড়া জগতে আরও বেশি উৎসাহ জোগানোর কাজেই ব্যবহার করবেন বলে জানিয়েছেন নাতালি। তবে তাঁর এই দৌড় যে বিশেষ অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবে অনেকের কাছে তা মনে করছেন ম্যারাথন জগতের কর্তাব্যক্তিরাই।