প্রধানমন্ত্রী মোদির সফরের পর নেটদুনিয়ার চর্চায় লাক্ষাদ্বীপ। একসময় যেখানে মূলত হিন্দু আর বৌদ্ধদের বাস ছিল। কিন্তু বর্তমানে এখানকার অধিকাংশ বাসিন্দাই মুসলিম। কীভাবে হল এই পরিবর্তন? আসুন শুনে নিই।
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর প্রচার শোনা যায় প্রধানমন্ত্রী মোদির মুখে। দেশের জনপ্রিয় পর্যটন ক্ষেত্রগুলিও হামেশাই মোদির প্রশংসা কুড়োয়। সম্প্রতি তালিকায় যোগ হয়েছে লাক্ষাদ্বীপের নাম। প্রধানমন্ত্রী নিজে সেখানে গিয়ে সময় কাটিয়েছেন। পোস্ট করেছেন সমুদ্র সৈকতে বিশ্রাম নেওয়ার ছবি। আর সেই ছবি ঘিরেই যত বিতর্ক।
আরও শুনুন: সাধের বেনারসি শাড়িতেও চাই রাম মন্দিরের ছবি, ‘রামাবলি’ জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন আনিসুররা
এমনিতে প্রধানমন্ত্রী মোদি ‘ছুটি’ নেন না। এমনটা অনেকেই বলেই থাকেন। এমনকি দেশের নামীদামী সংবাদমাধ্যমও এই দাবিতে সিলমোহর দেয়। সেই মোদিকেই সম্প্রতি দেখা গিয়েছে দেশের অন্যতম হলিডে ডেস্টিনেশন লাক্ষাদ্বীপে। কখনও শাল গায়ে সমুদ্র সৈকতে তিনি হাঁটছেন, আবার কখনও সমুদ্রের ধারে চেয়ারে বসে রয়েছেন। এমনই সব ছবি নেটদুনিয়ায় প্রকাশ করেছেন তিনি। সেইসঙ্গে লাক্ষাদ্বীপের অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথাও লিখেছেন। এরপর থেকেই গুগল সার্চের প্রথম দিকে জায়গা করে নিয়েছে এই লাক্ষাদ্বীপ। সেখানে কী কী দেখার জায়গা রয়েছে, কেমন খরচ বেড়ানোর, সেই সবকিছুর খোঁজ করতে শুরু করেছেন অনেকেই। এরই মাঝে মোদির ছবিতে বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেন মালদ্বীপের এক মন্ত্রী। এমনকি মোদির এই সফরকে নিয়ে সে দেশের কিছু রাজনৈতিক নেতাও কটাক্ষ করেন। যা একেবারেই ভালোভাবে নেননি ভারতীয় নেটিজেনরা। কিছুক্ষনের মধ্যেই নেটদুনিয়ায় শুরু হয়ে যায়, বয়কট মালদ্বীপ হ্যাসট্যাগ। এমনকি সচিন, অক্ষয়ের মতো সেলিব্রিটিরাও এই ইস্যুতে মুখ খোলেন। মালদ্বীপের নেতাদের এই আচরণের বিরোধিতা তো বটেই, নতুন করে লাক্ষাদ্বীপেরও প্রচার করতে শুরু করেন তাঁরা। এমনিতেই মোদির সফরের পর লাক্ষাদ্বীপ ঘিরে আগ্রহ দেখাতে আরম্ভ করেছিলেন নেটদুনিয়ার একাংশ। এই বিতর্কের জেরে সেই উত্তেজনা আরও বাড়ে। জানা যায়, মালদ্বীপ যাওয়ার যাবতীয় পরিকল্পনাও ইতিমধ্যেই অনেকে বাতিল করেছেন।
আরও শুনুন: মসজিদে আশ্রয় চাইলেন শবরীমালার ভক্তরা, মিলল পুজোপাঠের অনুমতিও
তবে শুধুমাত্র বেড়াতে যাওয়ার খুঁটিনাটি নয়, লাক্ষাদ্বীপ সম্পর্কে আরও একটা বিষয় নেটদুনিয়ার আলোচনায় উঠে এসেছে। তা হল, এখানকার নাগরিকদের ধর্মপরিচয়। জানা গিয়েছে, লাক্ষাদ্বীপের বর্তমান বাসিন্দাদের ৯৬ শতাংস মুসলিম। কিন্তু ইতিহাস বলছে, এখানে একসময় স্রেফ হিন্দু আর বৌদ্ধরাই থাকতেন। তাহলে এই পরিবর্তন হল কীভাবে?
এই অঞ্চলে ইসলামের প্রবেশ ৬৩১ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ। শুরুর দিকে হিন্দু রাজারাই এখানে শাসন করতেন। ধীর ধীরে বিদেশি শক্তির আক্রমণে ভারতের অন্যান্য প্রদেশের মতো, লাক্ষাদ্বীপও বিপর্যস্ত হয়। মুঘল, ব্রিটিস সকলেই দীর্ঘদিন লাক্ষাদ্বীপে শাসন করেছে। তবে স্বাধীনতার পর দেশের এই দ্বীপপুঞ্জ মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির সঙ্গে যুক্ত হয়। ১৯৫৬ সালে সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের তকমা পায়। এই সময় থেকেই এখানে সংখ্যায় বাড়তে শুরু করে মুসলিমরা। যার দরুন বর্তমানে মুসলিম জনসংখ্যা এই জায়গায় পৌঁছেছে। তবে এখানকার বাসিন্দাদের ধর্ম যাই হোক, পর্যটন ক্ষেত্র হিসেবে লাক্ষাদ্বীপের জুড়ি মেলা ভার। অন্তত আমাদের দেশে অমন প্রাকৃতিক সোন্দর্য আর কোথাও নেই বললেই চলে। মোদির সফরের পর নতুন করে সেসব চর্চায় আসতে শুরু করেছে। আর সেই পালে হাওয়া লাগিয়েছে মালদ্বীপকে কেন্দ্র করে হওয়া এই নতুন বিতর্কটি।