যন্ত্রপাতির সাধনা তাঁর পেশা। সেখানেও যথেষ্ট সফল তিনি। তার পরেও তাঁর মন পড়ে থাকে সেই প্রকৃতির কাছেই। তাই ভূস্বর্গকে ‘স্বর্গেতর’ করে তুলতে লড়ে যাচ্ছেন কাশ্মীরের এই ব্যক্তি। ধনকুবেরের চেয়ে তাই তিনি বেশি খ্যাত ‘ট্রি-ম্যান’ নামেই। কী করেছেন তিনি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
শুখা সমস্ত জমিকে সবুজে ভরিয়ে তুলতে চান তিনি। তার জন্য কাজের ফাঁকে ফাঁকেই চলে সবুজের সাধনা। সুযোগ পেলেই রুক্ষ, শুষ্ক মাটিকে গাছে গাছে সাজিয়ে তোলেন কাশ্মীরের ‘ট্রি ম্যান’ আব্দুল হামিদ ভাট। কাশ্মীর এমনিতেই সুন্দর। আর সেই সুন্দরকেই আরও মনোরম করে তুলতে চান শ্রীনগরের বাসিন্দা ৫৬ বছরের হামিদ।
আরও শুনুন: কাশ্মীর সীমান্তে রমরমিয়ে চলছে সেনার ক্যাফে, রুটিরুজির সন্ধান পাচ্ছেন স্থানীয়রাও
স্কুটার মেকানিক হিসেবে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন হামিদ। সেখান থেকে কাশ্মীরের অন্যতম বড় অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ রহিম মোটরসের মালিক। কাশ্মীরের অন্যতম ধনী ব্যবসায়ী বললেও ভুল হয় না। তবে এই সমস্ত কিছুর মধ্যেই সবুজের সাধনা তিনি ছাড়েননি কখনও। নিজের উপার্জনের একটা অংশ বরাবর তিনি খরচ করেছেন এই কাজে। অটোমোবাইল ব্যবসার পাশাপাশি রহিম গ্রিন নামে একটি প্রকল্পও চালান হামিদ।
ইতিমধ্যেই কাশ্মীরের উপত্যকায় ২ লক্ষ গাছ লাগিয়ে ফেলেছেন হামিদ। ২০৩০ সালের মধ্যে তা দশ লক্ষে পৌঁছে যাবে বলেই আশা তাঁর। আর সেই লক্ষ্যমাত্রা নিয়েই সবুজের অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
খুব বেশি আগের কথা নয়। কাঠপাচারকারীদের হাতে পড়ে শোচনীয় অবস্থা হয়েছিল মধ্য কাশ্মীরের বদগাম জেলার সুথারন জঙ্গলটির। দশ বছর আগে সেই জঙ্গলের রূপ ফেরানোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন হামিদ। আর সে কাজে সফলও হয়েছেন তিনি। ফের সবুজে ভরে উঠেছে সে জঙ্গল। হামিদ জানান, তিনি যখন গাছ লাগানো শুরু করেন, তখন জঙ্গলটিকে দেখলে মরুভূমি মনে হত। খুব বেশি হলে পাঁচ থেকে দশটা গাছ বেঁচেছিল গোটা জঙ্গল জুড়ে। আজ সেই জঙ্গল দেখলে চেনাই যাবে না। এই ক-বছরে ফের সেটিকে সবুজে ভরিয়ে তুলেছেন হামিদ।
আরও শুনুন: কন্যাসন্তান জন্মালেই রোপণ ১১১টি চারা গাছ, কোথায় পালিত হয় এই প্রথা?
আর এই কাজের জন্য না কোনও দিন অর্থ সংগ্রহ করেছেন তিনি, না পেয়েছেন কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্য। ব্যক্তিগত উপার্জন থেকেই এত বছর ধরে এ কাজ করে চলেছেন হামিদ। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, এটা মানুষ হিসেবে তাঁর কর্তব্য। যে পৃথিবীর জল-হাওয়া খেয়ে তিনি বড় হয়েছেন, তাকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়াটা তাঁর দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। আর এ কাজে সবসময়ে গ্রামের মানুষকে পাশে পেয়েছেন হামিদ। সম্প্রতি শের-ই-কাশ্মীর এগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে একটি আলপাইন গাছের নার্সারি খুলেছেন তিনি। যেখান থেকে প্রতিবছর প্রায় এক লক্ষ আলপাইন গাছের চারা উৎপাদিত হচ্ছে। যা একের পর এক উপত্যকাকে মুড়ে দিচ্ছে আরও সবুজে। আর তাঁর এই সবুজের অভিযান কাশ্মীরে পর্যটনের সুযোগকে আরও বাড়িয়ে তুলবে বলেই আশা।
আর এ কাজে হামিদের বড় সাফল্য কী জানেন? আগে যাঁরা কাঠপাচারকারীর কাজ করতেন, তাঁরাই আজ হাত লাগিয়েছেন হামিদের বৃক্ষরোপন মিশনে। শুধু যে কাশ্মীরের রুক্ষ উপত্যকাকেই তিনি সবুজ করে তুলতে পেরেছেন তা নয়, সেই সঙ্গে সেই সমস্ত রত্নাকরদেরও বাল্মিকী করে তুলতে পেরেছেন হামিদ। আর সেখানেই সবচেয়ে বড় জয় তাঁর।