জরা নেই। নেই ব্যাধি। এমনকি ক্যানসারের মতো ভয়ানক অসুখকেও নাকি বুড়ো আঙুল দেখিয়েছে এই এলাকা। এমনটাও কি হওয়া সম্ভব? কোথায় রয়েছে এমন আশ্চর্য স্থান? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
হঠাৎ করেই প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। শ্বাস নিতেই পারছেন না প্রায়। ভরতি করা হল হাসপাতালে। আর সেখানেই শোনা গেল দুসংবাদটা। ফুসফুসকে আক্রমণ করেছে মারণরোগ ক্যানসার। আয়ু মেরেকেটে আর বছরখানেক, জানিয়ে দিলেন ডাক্তারেরা।
ভদ্রলোকের বয়স তখন ৬০। তাঁদের দেশে অনেকে এই বয়সে নতুন করে জীবন শুরু করে। আর সেই সময়েই দাঁড়ি পড়ে যাচ্ছে তাঁর জীবনে। স্ট্যামাটিস মোরাইটিস নামের ওই ব্যক্তি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, জীবনের শেষ কটা দিনের জন্য ফেলে আসা জন্মভূমির কাছেই ফিরে যাবেন তিনি। সেইমতোই আমেরিকার ফ্লোরিডাবাসী এই মানুষটি ফিরে এলেন তাঁর জন্মস্থানে, গ্রিসের একটি ছোট্ট দ্বীপ ইকারিয়াতে। আর এরপরেই ঘটল একটা অদ্ভুত কাণ্ড। এমনই কিছু, যাকে ম্যাজিক বললে হয়তো খুব ভুল হবে না। দেখা গেল, আস্তে আস্তে দুর্বলতা কাটিয়ে উঠছেন ওই ব্যক্তি। জোর ফিরে পাচ্ছেন শরীরে। এতদিন যিনি বিছানা ছেড়েই উঠতে পারছিলেন না, তিনি একা একাই হাঁটাচলা শুরু করে দিলেন একসময়। এমনকি হাত লাগালেন বাড়ির বাগানেও। না, এক বছর শেষ হলেও আয়ু শেষ হয়নি তাঁর। ইনি যখন মারা যান, তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।
আরও শুনুন: দুর্ধষ গুপ্তচর আবার তিনি গান্ধী অনুগামীও… সিনেমাকেও হার মানায় এই সাহসিনীর জীবন
বিশ্বাস হচ্ছে না তো? ভাবছেন বানানো গল্প? কিন্তু এমন গল্পেরাই যে অহরহ সত্যি হয়ে ওঠে এই বিস্ময় দ্বীপে। পাহাড় আর সমুদ্রের বৈচিত্র্য দিয়ে সাজানো, মাত্র আড়াইশো বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপকে অসুখ বুঝি ছুঁতেই পারে না। এখানকার বাসিন্দাদের গড় আয়ু ১০০ বছর। অথচ শতবর্ষেও জরার চিহ্ন মাত্র পাওয়া যাবে না তাঁদের শরীরে। এমনকি হাঁটার জন্য লাঠি পর্যন্ত দরকার হয় না তাঁদের। এই দ্বীপের মানুষদের দেখলে বিশ্বাস না হয়ে উপায় নেই, বয়স সত্যিই একটা সংখ্যা মাত্র। ইউনিভার্সিটি অব আথেন্স-এর এক গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, ৮০ শতাংশ ইকারিয়ান ৬৫ থেকে ১০০ বছরেও সম্পূর্ণ সুস্থ এবং স্বাভাবিক যৌন জীবন পর্যন্ত উপভোগ করেন।
আরও শুনুন : তাজমহল তো বটেই, ৫৪৫ জন সদস্য-সহ পার্লামেন্টটিকেও বেচে দিয়েছিলেন তিনি! জানেন কে এই ব্যক্তি?
এহেন দীর্ঘ জীবনের রহস্য কী? কেনই বা শারীরিক অসুস্থতা সেভাবে দেখাই যায় না এই দ্বীপে? স্বাভাবিকভাবেই এমন অনেক প্রশ্ন উঠে এসেছে এই দ্বীপকে ঘিরে। যার উত্তর খুঁজতেই ২০০০ সালে ‘দ্য ব্লু জোনস সলিউশন’ নামে একটি বই লিখেছেন ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এক্সপ্লোরার এবং লেখক ড্যান বুয়েটনার। মোটামুটি সব গবেষণাই ইঙ্গিত করেছে এই দ্বীপের জীবনযাপনের ধরনের দিকে। দ্বীপের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, যেমন জলবায়ুর পাশাপাশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে অধিবাসীদের জীবনযাপনে স্ট্রেস কম থাকার কথাও। তবে কি চিন্তার হাত থেকে মুক্তি পেলেই বাড়তে পারে মানুষের আয়ু? উত্তর এখনও অজানা।