রাবণের চিতা নাকি কখনও নেভে না। এরকমই জনশ্রুতি। তবে এরকম এক অনির্বাণ অগ্নিশিখার কথা সত্যিই জানা যায়। অনন্তকাল ধরে জ্বলছে সেই আগুন। সে ধুনির আগুনও কখনও নেবে না। কবে কোন মুনি যে সাধনা করতে বসে উসকে দিয়েছিলেন সেই আগুন। তার পর থেকে শত ঝঞ্ঝার বাতাস, ঝরনার জলও কোনও দিন নেভাতে পারেনি এই অনন্ত শিখাকে। কোথায় দেখা মিলবে এই অগ্নিশিখার? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
‘সবুজ দ্বীপের রাজা’ গল্পের কথা মনে আছে? মনে করে দেখুন সেখানে ‘জারোয়া’ উপজাতির মানুষ খুঁজে পেয়েছিল এমন আগুনের সন্ধান, যা কখনও নেভে না। সেরকমই এক অগ্নিশিখার সন্ধান মেলে প্রকৃতিতে, যা নাকি আজ অব্দি নেভেনি। প্রাকৃতিক এক গুহার মুখে জ্বলছে সেই আগুন। ঠিক যেন কেউ ধুনি জ্বেলে বসেছেন সাধনায়। স্থানীয় মানুষ বলেন শাশ্বত এই অগ্নিশিখা।
এই অগ্নিশিখার খোঁজ পেতে যেতে হবে এক ঝরনার কাছে। নিউ ইয়র্কের ইরি কাউন্টির কাছে চেস্টনাট রিজ পার্কে রয়েছে ঝরনাটি। তারই বুকে পাথরের খাঁজে বহু বছর ধরে জ্বলছে ওই অগ্নিশিখা।
তবে, সত্যিই কি ম্যাজিক, নাকি কোন এক দৈববলেই অনন্তকাল ধরে জ্বলতে থাকে ওই আগুন! বিজ্ঞানীরা অবশ্য এর নেপথ্যে তেমন কোনও ম্যাজিক-ট্যাজিক দেখছেন না। তাঁরা জানাচ্ছেন, পাথরের খাঁজে কোনও একটি গর্ত দিয়ে নাকি অনবরত গ্যাস নির্গত হওয়ার কারণে ওই শিখাটি জ্বলতে থাকে। যদি শিখা নেভার উপক্রম হয়, তবে ওই গ্যাসের কারণে তা ফের জ্বলে উঠতেও সময় লাগে না।
ওই ঝরনার কাছে গেলেই মেলে নাকে এসে লাগবে একটা কটু গন্ধ। একটু ভাল করে খেয়াল করলে দেখবেন, গন্ধটা বেশ চেনা চেনা। ডিম পচলে যেমন গন্ধ বেরোয় এ-ও যেন অনেকটা তেমনই। ঠিক ধরেছেন, এ আসলে পাথরের ফাটল থেকে বেরিয়ে আসা প্রাকৃতিক গ্যাসেরই গন্ধ। পাথরের মধ্যে থাকা জৈব পদার্থগুলির পচনের ফলে ওই গ্যাস উৎপন্ন হয়। যা সাধারণ অবস্থায় পাথরের মধ্যেই চাপা থাকে। তবে পাথরের মধ্যেকার আলগা স্তর ও ফাটলের মধ্যে বেরিয়ে এসে ওই শিখার জন্ম দেয়।
ভাবছেন নিশ্চয়ই, এত হাওয়া, ঝরনার জলের ছিটকে আসা কুচি, তবু কেন নেভে না এ আগুন। আসলের পাথরের খাঁজের ওই গুহাই হাওয়া ও জলের হাত থেকে রক্ষা করে শিখাটিকে। কেউ কেউ বলেন, অনেক সময়েই ভারী বৃষ্টির কারণে নিভে যায় শিখা। তবে তা আবার জ্বলে ওঠে নিজে থেকেই, প্রাকৃতিক নিয়মে।
পৃথিবীর আর কোথাও সম্ভবত এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর নেই। শান্ত নিরিবিলি এই চেস্টনাট রিজ পার্কে পর্যটকেরা ছুটে আসেন প্রায়শই। ঝরনাটি তো বটেই, পার্কটিও বেশ সুন্দর। রয়েছে পাহাড় চড়ার বন্দোবস্ত, সাইক্লিংয়ের ব্যবস্থা। বেশ কিছু খেলাধুলার সরঞ্জামও রয়েছে এই উদ্যানে। গরমের দিনে পর্যটকদের ভিড় আরও বাড়তে থাকে। সব মিলিয়ে নিউ ইয়র্কের এই চেস্টনাট রিজ পার্ক কিন্তু মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়। শাশ্বত অগ্নিশিখা দেখার সুযোগ কেই-বা আর ছাড়তে চায়!