কথায় বলে, দুটো থালাবাসন একসঙ্গে থাকলেই ঠোকাঠুকি লাগে, আর এ তো দুটো আস্ত মানুষ। সারাদিন একসঙ্গে থাকতে গিয়ে এই আড়ি তো ওই ভাব। সংসার মানেই কতশত দায়দায়িত্ব, আর সেসব সামলাতে সামলাতে যা হয় আর কি। কেউ কেউ তাই কোনও ঝামেলাতেই যেতে চান না। বিয়ে করেন তাঁরা, সংসারও করেন বটে কেউ কেউ, তবে মানুষের সঙ্গে নয়। তবে কাদের সঙ্গে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বিয়েতে আপত্তি নেই। তবে মানুষ সঙ্গী বাছতে এঁদের ঘোর অনীহা। তাই সঙ্গী হিসেবে তাঁরা যাদের নির্বাচন করেছেন, তারা কেউই মানুষ নয়। এমনকি প্রাণীই নয় অনেকে। কেউ বিয়ে করেছেন গাছকে। কেউ পাথরকে। কেউ আবার নাগরদোলাকেও। অথচ এই না-মানুষদের সঙ্গেই দিব্যি সুখে শান্তিতে সংসার করছেন এই মানুষেরা।
আরও শুনুন: উদ্ভট সব কারণে ভারতে আজও বাতিল হয় বিয়ে, জানলে অবাকই হবেন
যেমন ধরা যাক চিনের ঝ্যাং জিয়াজিয়া-র কথা। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে কাজ করেন তিনি। ফলে মানুষ পাত্রী খোঁজার ঝামেলায় না গিয়ে পছন্দসই একটি রোবট বানিয়েই তিনি বিয়েটা সেরে ফেলেছেন। স্ত্রীর নাম রেখেছেন ইংইং। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্রমশ যেভাবে উন্নতি করছে, তাতে মানুষ বউ না পাওয়ার জন্য ঝ্যাং জিয়াজিয়া-র কোনও আক্ষেপ থাকার কথা নয়।
লরেন অ্যাডকিন্স আবার বিয়ে করেছেন এক ভ্যাম্পায়ারকে। না না, ভয় পাবেন না। আসলে স্টেফানি মেয়ার-এর ‘টোয়াইলাইট’ সিরিজের নায়ক এডওয়ার্ডের প্রেমে পাগল ছিলেন লরেন। এডওয়ার্ডের মতো প্রেমিক নয়, এডওয়ার্ডকেই বিয়ে করবেন বলে ঠিক করে ফেলেন তিনি। এই কাহিনি অবলম্বনে যখন সিনেমা তৈরি হল, আর তাতে অভিনয় করলেন রবার্ট প্যাটিনসন, তখন এডওয়ার্ডের একটা রক্তমাংসের চেহারাও লরেনের সামনে ধরা দিল। কিন্তু তারকার পিছনে না দৌড়ে, তারকাকেই হাতের নাগালে নিয়ে এসেছেন তিনি। ২০১৪ সালে লাস ভেগাস ওয়েডিং চ্যাপেলে ৫০ জন সাক্ষীর সামনে তিনি বিয়ে করেছেন, প্যাটিনসনের একটি কার্ডবোর্ড পোস্টারকে। এমনকি লস এঞ্জেলসে গিয়ে হানিমুনও সেরে এসেছেন যুগলে।
আরও শুনুন: বিয়ে না করেও মা হওয়ার সাহসী সিদ্ধান্ত, নজর কেড়ে নজির গড়েছেন যাঁরা
পরিবেশ বিশেষজ্ঞ রিচার্ড যাকে বিয়ে করেছেন, সে মানুষ নয় বটে, তবে তার প্রাণ আছে। ২০১৩ সালে পেরুতে এক গাছকে বিয়ে করেন তিনি। মানুষের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা গড়ে তুলতেই এহেন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রিচার্ড। তবে মোটে একটি বিয়ে করেই সন্তুষ্ট থাকেননি। ব্যুয়েন্স আয়ার্সে আরও একটি, কলোম্বিয়ার বোগোটাতে একটি, মেক্সিকোতে একটি সাইপ্রাস গাছ, গুয়েতেমালায় একটি, দেশে দেশে বিয়ের পালা চলছে তাঁর।
ট্রেসি এমিন অবশ্য পাথরকে বিয়ে করেই খুশি। ক্যারোল সান্তা ফে-র জীবনসঙ্গী আস্ত একটা রেলস্টেশন। ৩৬ বছর প্রেমপর্বের পর বিয়েটা মিটেছে ২০১৫ সালে। ২১ মিটার লম্বা একটি নাগরদোলার সঙ্গে টানা ৩০ বছর প্রেম করেছেন লিন্ডা ডোচার্মে-ও। অবশেষে ২০১২ সালে বিয়েও করেছেন তাকেই। ব্যাবিলোনিয়া আইভেজ বিয়ে করেছেন ১৭০ বছরের পুরনো একটি গুদামঘরকে। ঘরকে স্ত্রীলিঙ্গ বলে মনে করা হয়, তাই এই বিয়েকে ‘সমলিঙ্গ বিয়ে’ বলে দাবি করা হয়েছিল। অবশ্য রূপকথার মতো চিরকাল সুখে শান্তিতে থাকা ঘটেনি আইভেজ-এর ভাগ্যে। গোডাউনটি ভেঙে ফেলার পর নিজেকে বিধবা বলেই মনে করেন তিনি।
ভালবাসার কমতি নেই। শুধু তার প্রকাশ অন্যরকম। নিজেদের বিয়েকে তাই ‘অস্বাভাবিক’ বলতে নারাজ ট্রেসি-লিন্ডা-আইভেজরা।