এই মন্দির নাকি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন স্বয়ং পঞ্চপাণ্ডব। জনশ্রুতি, পবিত্র বলেই দিনের অধিকাংশ সময় মরমানুষের চোখের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রাখে এই মন্দির। আসুন, শুনে নেওয়া যাক এই আশ্চর্য মন্দিরের কাহিনি।
আরব সাগরের বুকে লুকিয়ে আছেন নিষ্কলঙ্ক মহাদেব। হ্যাঁ, এমনটাই বিশ্বাস করেন ভক্তরা। মহাদেবের দর্শন পাওয়ার আশায় বর্তমানের ক্যাম্বে উপসাগর এবং খাম্বাট উপসাগরের মধ্যে থাকা কোলিয়াক সৈকতে আজও ভিড় জমান তাঁরা। কারণ এই সৈকতেরই পশ্চিম দিকে, আরব সাগরের দুই কিলোমিটার ভিতরে রয়েছে সেই বিরল শিবমন্দির। যা নাকি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন স্বয়ং পঞ্চপাণ্ডব।
আরও শুনুন: কেবল দেবতাই নন, সমন্বয়ের বার্তা দিয়ে দেশের এই মন্দিরে পূজিতা হন রাক্ষসীও
প্রচলিত কাহিনি জানায়, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ জয়ের পরে অনুশোচনা কুরে কুরে খাচ্ছিল পাণ্ডবদের। লক্ষ লক্ষ ভাই, বন্ধু, আত্মীয়দের মৃত্যুর জন্য নিজেদেরই দায়ী বলে মনে করছিলেন তাঁরা। সেই সময় তাঁদের সহায় হন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। পঞ্চপাণ্ডবকে একটি কালো গোরু ও কালো পতাকা দিয়ে গোরুটিকে অনুসরণ করতে বলেন তিনি। বলেন, কোনও একদিন উভয়েরই রং কালো থেকে সাদায় বদলে যাবে। আর তক্ষুনি, সেই স্থানেই মহাদেবের তপস্যায় বসতে হবে তাঁদের। মহাদেব তুষ্ট হলে তবেই ঘটবে তাঁদের পাপমুক্তি।
সেইমতোই কালো গোরুটিকে অনুসরণ করে চলেছিলেন পাণ্ডবেরা। প্রায় সারা ভারত ঘুরে এই কোলিয়াক সৈকতে পৌঁছে হঠাৎ করেই সাদা হয়ে যায় গোরু এবং পতাকার রং। কালবিলম্ব না করে তপস্যায় বসেন পাঁচ ভাই। সমুদ্রে জোয়ার আসে, ক্রমশ জলের নিচে তলিয়ে যান তাঁরা, তবুও তপস্যায় ছেদ পড়েনি। অবশেষে তুষ্ট হন শিব। পাণ্ডবেরা দেখতে পান, সাগরের জল সরে গিয়েছে, আর সেখানে জেগে উঠেছে পাঁচটি শিবলিঙ্গ ও শিবের বাহন নন্দীর মূর্তি। এখানেই মন্দির প্রতিষ্ঠা করে পঞ্চলিঙ্গকে স্থাপন করেন পঞ্চপাণ্ডব। শিবের করুণায় কলঙ্ক থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন তাঁরা, তাই এই শিবলিঙ্গের নাম হয় নিষ্কলঙ্ক মহাদেব।
আরও শুনুন: জলে ডুবে থাকে গর্ভগৃহ, অহংকারেই নাকি হেলে পড়েছিল কাশীর এই মন্দিরের চূড়া
গুজরাটের ভাবনগর এলাকায় অবস্থিত কোলিয়াক সৈকতের কাছে সেই মন্দির আজও রয়েছে। তবে দিনের অধিকাংশ সময়েই তার দেখা মেলে না। কেবল চোখে পড়ে সমুদ্রের জলস্তরের উপর উড়তে থাকা একটি পতাকা। ভাটার টান এলে ক্রমশ সরে যায় জল। দেখা মেলে আরও একটি ছোট পতাকার। জেগে ওঠে মন্দিরটি। আশ্চর্যের কথা হল, মন্দিরটির কোনও ছাদ কিংবা দেওয়াল নেই। বস্তুত, সমুদ্রের মধ্যে এক বিশাল পাথরের বেদির উপরে পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় রয়েছে বিভিন্ন উচ্চতার পাঁচটি শিবলিঙ্গ। জনশ্রুতি আছে, নিষ্কলঙ্ক মহাদেবের ওই ধ্বজা যে কোনও বিপর্যয়ে অক্ষুণ্ণ থাকে। এমনকি ভুজের ভয়াবহ ভূমিকম্প বা সুনামির পরেও তা অক্ষত ছিল বলে জানা যায়। আর এই সব ঘটনা মিলিয়েই স্থানটির দৈবী মাহাত্ম্য আরও বেড়ে গিয়েছে। এখানে স্নান করে পুজো দিলে পাণ্ডবদের মতোই পাপমুক্তি ঘটে, এমনটাই বিশ্বাস করেন ভক্তরা।