পৃথিবীতে এমন অনেক কিছুই ঘটে, যুক্তি যাকে ব্যাখ্যা করতে পারে না। এমন কথাই বলেছিলেন শেক্সপিয়র। এ কথাকেই যেন বারবার মনে করিয়ে দেয় বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা একাধিক উপাদান। এমনকি ভারতেও রয়েছে এমনই কোনও কোনও রহস্যময় জায়গা, বিজ্ঞান বা দর্শন দিয়েও যে রহস্যের উত্তর মেলে না। শুনে নিন তেমনই এক স্থানের কাহিনি।
ভারত যেমন বৈচিত্র্যে মোড়া দেশ, তেমনই তার মধ্যে যে কত রহস্য লুকিয়ে রয়েছে তারও হিসাব মেলে না। যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে সেসব রহস্যের তল পাওয়া যায়নি আজও। কোথাও বরফে ঢাকা সরোবরের বরফ গলে গেলে বেরিয়ে পড়ে অসংখ্য মানুষের কঙ্কাল। কোথাও আবার জলাশয়ের সামনে দাঁড়িয়ে হাততালি দিলেই নেচে ওঠে জল। কেন ঘটে এমন? সে উত্তর আজও অজানা। জানা কেবল কিছু আশ্চর্য কাহিনি। আসুন, শোনা যাক তেমনই এক আশ্চর্য জায়গার গল্প।
আরও শুনুন: চোরেদের আজব কীর্তি! চুরি হয়ে গেল ৫৮ ফুট লম্বা আস্ত একখানা সেতু
ভারতেই ঝাড়খণ্ড রাজ্যের বোকারো জেলায় রয়েছে একটি কুণ্ড। কংক্রিটের প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এই জলাশয়ের স্থানীয় নাম দলাহি কুণ্ড। স্থানীয় দেবতা দলাহি গোসাই-এর পুজো করা হয় জলাশয় চত্বরে, সেই থেকেই এর এমন নাম। প্রতি বছর মকর সংক্রান্তির দিন এই কুণ্ড ঘিরে মেলা বসে। তার কারণ স্থানীয় লোকবিশ্বাস। এই অঞ্চলে প্রচলিত কিংবদন্তি যে, এই কুণ্ডের জলের ঔষধি গুণ রয়েছে। ফলে এই জলে স্নান করলে রোগবালাই দূর হয়। বিশেষত চর্মরোগ দূরীকরণের ক্ষেত্রে নাকি মহৌষধ এই কুণ্ডের জল। কিন্তু কেন এমনটা বিশ্বাস করেন এক বিস্তৃত অঞ্চলের মানুষ?
আসলে এই মিথ গড়ে ওঠার পিছনে রয়েছে এই কুণ্ডের কিছু আশ্চর্য বৈশিষ্ট্য। শোনা যায় এর জল নাকি গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা থাকে, আর শীতকালে গরম হয়ে ওঠে। তার চেয়েও বড় কথা, এই কুণ্ডের সামনে দাঁড়িয়ে হাততালি দিলেই নাকি জলের মধ্যে উথালপাতাল দেখা দেয়। যেন নেচে ওঠে কুণ্ডের জল। অথচ কেন এমন হয়, তার কোনও সন্তোষজনক ব্যাখ্যা মেলেনি আজ অবধি।
আরও শুনুন: শত্রুদের চোখে ধুলো দিতে লুকিয়ে ফেলা হয়েছিল আস্ত তাজমহল, কীভাবে জানেন?
এই জলে স্নান করার ফলে চর্মরোগ সেরে যাওয়ার যে বিশ্বাস রয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই জলে রয়েছে সালফার এবং হিলিয়াম গ্যাস। যেমন উষ্ণ প্রস্রবণেও সালফার থাকে বলেই চর্মরোগ নিরাময়ের উদ্দেশ্যে দূরদূরান্ত থেকে সেখানে ছুটে যায় মানুষ। আবার এই কুণ্ডের জল জামুই নালার মধ্যে দিয়ে বাহিত হয়ে গঙ্গায় গিয়ে মিশেছে। তাই কারও কারও মতে, নালার মধ্যে দিয়ে মাটির অনেক গভীরে চলে গিয়েছে জল, ফলে হাততালির দরুন উৎপন্ন শব্দতরঙ্গ তাকে অতিরিক্ত প্রভাবিত করে। আর সেই কারণেই জলে এমন আলোড়ন দেখা দেয়। কিন্তু এই বক্তব্য আদৌ ঠিক কি না, তা প্রমাণিত হয়নি এখনও। রহস্য বুকে নিয়েই রয়ে গিয়েছে দলাহি কুণ্ড।