হৃদয় ভাঙলে লোকে কত কিছুই না করেন। কেউ মন মজান গজলে। তো কেউ বা হাফসোল খাওয়া হৃদয় নিয়ে হয়ে যান ‘দেবদাস’। তখন কারণসুধা ছাড়া তাঁর চলে না একটা দিনও। কেউ বা প্রাক্তনের স্মৃতি বুকে আগলে অনর্গল চোখের জল ফেলেন। তবে প্রেম ভাঙার পরে মিউজিয়াম খোলার এমন অভিনব ভাবনা বোধহয় কেউ ভাবেনি তাঁদের মতো করে। কোথায় রয়েছে সেই আশ্চর্য মিউজিয়াম? আসুন, শুনে নিই।
সম্পর্ক ভাঙলেও স্মৃতিরা পিছু ছাড়ে না মোটেই। যেসব স্মৃতি একদিন ছিল সততই সুখের, তাই হয়ে ওঠে বিষপোকার মতো। শুধু কি স্মৃতি, ঘরময় ছড়িয়ে থাকা প্রাক্তনের দেওয়া উপহার, তারাও এসে ব্যতিব্যস্ত করতে থাকে যখনতখন। এদিকে, সেসব জিনিস প্রাণে ধরে ফেলতেও ভারী মায়া।
তবে এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইলে সহজ সমাধান আছে ক্রোয়েশিয়াবাসীর কাছে। কারণ সেখানে রয়েছে এমন প্রেমসিক্ত জিনিসের আস্ত একটা মিউজিয়াম।
সম্পর্ক ভাঙারও কোনও সংগ্রহশালা হয় নাকি আবার? তবে ক্রোয়েশিয়ার জাগরেবে রয়েছে এমনই একটি আশ্চর্য সংগ্রহশালা। যার নাম ‘মিউজিয়াম অব ব্রোকেন রিলেশনশিপ’।
আরও শুনুন: ‘বাজে’ ছবির মিউজিয়াম! জানেন কোথায় রয়েছে এমন আশ্চর্য সংগ্রহশালা
২০০৩ সালে এই মিউজিয়ামটি শুরু করেছিলেন ওলিঙ্কা ভিসটিকা ও ড্রাজেন গ্রুবিসিক নামে দুই শিল্পী। ওলিঙ্কা একজন নামকরা চলচ্চিত্র প্রযোজক। অন্যদিকে, ড্রাজেন জনপ্রিয় লেখক হওয়ার পাশাপাশি একজন পরিচিত স্থপতিও। প্রায় চার বছর একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন তাঁরা। ২০০৩ সালে সেই সম্পর্কে ইতি পড়ে। এতগুলো বছর ধরে জমিয়ে রাখা স্মৃতি, একে অপরকে দেওয়া উপহার সেসবের কী উপায় হবে, এসব ভাবনা থেকেই শুরু হয়েছিল এই মিউজিয়ামের। পরবর্তীকালে তাঁদের বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে সংগ্রহশালার জন্য এমন জিনিসপত্র চাওয়া শুরু করেন তাঁরা। সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পরে যেসব জিনিসপত্র নিয়ে নাজেহাল হয়ে যান প্রাক্তনেরা, সেসব জিনিসেই ভরে উঠতে শুরু করে ওলিঙ্কা-ড্রাজেনদের মিউজিয়াম।
২০০৬ সাল থেকে দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়া হয় মিউজিয়ামের দরজা।
না, তখনও কোনও পাকাপোক্ত জায়গা বরাদ্দ ছিল না মিউজিয়ামটির জন্য। বরং চলমান ওই মিউজিয়াম নিয়ে বিশ্বভ্রমণ শুরু করেন ওলিঙ্কারা। ২০০৬ সাল থেকে ২০১০ পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছে এই মিউজিয়াম। আর্জেন্টিনা থেকে শুরু করে জার্মানি, ফিলিপাইনস থেকে সাউথ আফ্রিকা, তুরস্ক থেকে ইংল্যান্ড, অসংখ্য দেশ ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করেছে বহু ভগ্ন প্রেমের চিহ্ন। ২ লক্ষেরও বেশি দর্শকের নজর কেড়েছে এই অভিনব সংগ্রহশালা। ২০১০ সালে জাগরেবে পাকাপোক্ত একটা বাসা পায় এই আশ্চর্য মিউজিয়ামটি।
আরও শুনুন: সুখের খোঁজে গোটা একটা মিউজিয়াম! বিশ্বের কোথায় এমন সংগ্রহশালা আছে জানেন?
ক্রোয়েশিয়ার অন্যতম একটি আকর্ষণীয় জায়গা হয়ে উঠেছে এই মিউজিয়াম। ব্যর্থ প্রেমের স্মৃতি বলতে ঠিক যা যা বোঝায়, তার প্রায় সবকটি অনুষঙ্গেরই দেখা মিলবে এই আশ্চর্য সংগ্রহশালায়। রয়েছে ব্যক্তিগত বার্তার অডিও এবং ভিডিও ক্লিপ। শোনা যাবে সেসবও।
আসলে প্রেমে পড়ে দাগা খাননি, বা জীবনে একটাও ব্যর্থ প্রেম নেই, এমন মানুষ বোধহয় দুনিয়ায় খুঁজে পাওয়া ভার। আর সে সমস্ত ভগ্নহৃদয়ের মানুষই এই মিউজিয়ামে এসে খুঁজে পাবেন সেসব দুঃখের দোসর এবং মলম। আর সেই কারণেই বোধহয় ক্রমশই দর্শকসংখ্যা বেড়েই চলেছে ওলিঙ্কা-ড্রাজেনদের এই আশ্চর্য মিউজিয়ামে।