দুশো বছর ধরে কোনও বসতি গড়ে ওঠেনি এখানে। লোকে বলে, এই গ্রামে নাকি দেখা মেলে ভূতেরও। দুশো বছরের প্রাচীন এক অভিশাপের স্মৃতি এখনও বয়ে নিয়ে চলেছে কুলধারা। শুনে নিন ভারতের এই অভিশপ্ত গ্রামের কথা।
রাতারাতি জনশূন্য হয়ে গিয়েছিল গোটা গ্রাম। পরদিন সকালে গ্রামের কুলদেবতা বিষ্ণুর মন্দিরে ঘণ্টাধ্বনি শোনা যায়নি আর। কোনও ঘরে দেখা যায়নি উনুনের ধোঁয়া। কোথাও শোনা যায়নি ফিসফিসিয়ে কথা বলার আওয়াজটুকুও। যেন ভোজবাজির মতো উবে গিয়েছিল গ্রামের সমস্ত মানুষ। আর তাদের সঙ্গেই উধাও হয়ে গিয়েছিল গ্রামের সমস্ত সমৃদ্ধ, সবটুকু শ্রীও। দুশো বছর পরেও সেই ঘরছাড়া মানুষদের অভিশাপ বুকে নিয়ে সেদিনের মতোই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে রাজস্থানের কুলধারা গ্রাম।
আরও শুনুন: কানের মধ্যে ঢুকে বসে রইল জ্যান্ত কাঁকড়া! বেড়াতে গিয়ে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা মহিলার
ইতিহাস জানায়, এই গ্রাম গড়ে তুলেছিলেন কুলধর গোত্রের পালিওয়াল ব্রাহ্মণেরা। পালি নামের এক জনপদ থেকে এসে এখানে বসতি গড়েছিলেন তাঁরা। তাঁদের উদ্যমে গ্রামটি ধীরে ধীরে এক সমৃদ্ধ নগরের চেহারা নিয়েছিল। রাজস্থানের মরু অঞ্চলে পত্তন করা এই গ্রামে পুকুর কেটে, কুয়ো খুঁড়ে, পরিকল্পনামাফিক নদীর জল ব্যবহার করে কৃষিকাজ পর্যন্ত শুরু করেছিলেন তাঁরা। কঠোর পরিশ্রমে সবুজ করে তুলেছিলেন বন্ধ্যা ভূমিকে। শোনা যায়, কুলধারা হয়ে উঠেছিল শেখাওয়াতি অঞ্চলের সবথেকে সমৃদ্ধ গ্রাম। বাইরে থেকে আসা এই মানুষদের গুণের মতো রূপের খ্যাতিও ছড়িয়ে পড়েছিল সারা রাজস্থানে।
আর কাল হয়েছিল সেটাই। জনশ্রুতি অনুযায়ী, এই সম্পদের জন্য মানুষের লোভই শেষ করে দিয়েছিল সমৃদ্ধ গ্রামটিকে। উনিশ শতকে নাকি জয়সলমির স্টেটের অত্যাচারী দেওয়ান সালিম সিং-এর কুনজর পড়েছিল এই গ্রামের উপর। বা বলা ভাল, গ্রামের মোড়লের অপূর্ব সুন্দরী কন্যাটির উপর। মেয়েটিকে দখল করার জন্য এক নোংরা চাল চেলেছিলেন দেওয়ান। কুলধারার জন্য অসম্ভব চড়া হারে খাজনা ধার্য করেছিলেন তিনি। আর তারপর গ্রামবাসীদের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, হয় ওই মেয়েটিকে তাঁর হাতে তুলে দিতে হবে, না হলে ওই বিপুল পরিমাণ খাজনা তো দিতেই হবে, সঙ্গে মেয়েকেও তুলে নিয়ে যাবে সেনারা।
আরও শুনুন: আকাশ থেকে মাছ বৃষ্টি হয় প্রতিবছর, আশ্চর্য ঘটনার সাক্ষী থাকে এই শহর
বিকেলে মেয়েকে বিদায় দেওয়া যাবে না, এই অজুহাতে সেদিনের রাতটুকু সময় চেয়ে নিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। আর সেই সুযোগেই, রাতের আঁধারে গা ঢাকা দিয়ে গ্রাম ছেড়েছিলেন তাঁরা। পিছনে পড়ে ছিল তাঁদের ঘরবাড়ি, জমিজমা, ইষ্টদেবতার মন্দির, শস্যের ভাণ্ডার, আর এতদিনের শ্রম-যত্ন-ভালবাসা দিয়ে গড়ে তোলা জনপদ কুলধারা। পরবর্তীকালেও আর কোনও খোঁজই মেলেনি তাঁদের।
সেই অসহায় মানুষগুলির চোখের জলই কুলধারা গ্রামকে অভিশপ্ত করে রেখেছে বলে বিশ্বাস করেন স্থানীয় মানুষেরা। এই পরিত্যক্ত গ্রামে বাস করতে গিয়ে অনেকে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন, এমনকি প্রাণও হারিয়েছেন বলে শোনা যায়। এমনকি ২০১০ সালে দিল্লির প্যারানরম্যাল সোসাইটির একটি দল এই গ্রামে এক রাত কাটিয়েছিল। তাঁদের একাধিক ভৌতিক অভিজ্ঞতা হয়েছে বলেও দাবি করেছিলেন ওই দলের সদস্যরা। আর এই সব ঘটনা মিলিয়েই পাকাপাকিভাবে অভিশপ্ত গ্রামের তকমা লেগে গিয়েছে কুলধারা গ্রামের গায়ে। সেদিনের অসহায় পালিওয়ালদের ক্ষোভ হয়তো খানিক সুবিচার পেয়েছে এভাবেই, মনে করেন স্থানীয় মানুষেরা।