ঘোস্ট আর্মি, অর্থাৎ ভূতুড়ে সেনা? তারা নাকি নাস্তানাবুদ করে দিয়েছিল খোদ ফুয়েরারকে? ইতিহাস তো সে কথাই বলছে। তবে কি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ময়দানে সত্যিই ভূতের দেখা পেয়েছিল জার্মান সেনারা? কী বলছে ভূতুড়ে সেনার গল্প?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো ভয়ংকর যুদ্ধ পৃথিবীর ইতিহাসে আর ঘটেনি। আর এই যুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অদ্ভুত ঘটনার সংখ্যাও কম নয়। জানেন কি, এই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল একদল ঘোস্ট আর্মি, অর্থাৎ কিনা ভূতুড়ে সেনা? এমনকি, সেই সৈন্যের আক্রমণে একবার গোহারা হেরে গিয়েছিল হিটলারের দুর্ধর্ষ নাৎসি বাহিনী।
সত্যিই কি লড়াইয়ের ময়দানে নেমেছিল ভূত? তাহলে খুলেই বলি।
আরও শুনুন: বিলেতে মৃত্যু বড়লাটের, তবে কীসের টানে আজও নেটিভ শহরে ঘোরে হেস্টিংসের ভূত?
মহাযুদ্ধ তখন শেষের দিকে এগোচ্ছে। জার্মানি-ইতালি-জাপানের মিলিত বাহিনী যে আর যুঝে উঠতে পারছে না মিত্রশক্তির সঙ্গে, সে কথা ক্রমশই স্পষ্ট। কিন্তু দুই দলের মধ্যেই ভয়, কার হাতে রয়েছে আধুনিক বিজ্ঞানের সেই ব্রহ্মাস্ত্র, যার নাম অ্যাটম বোমা? ফলে যুদ্ধের অবস্থা যাই হয়ে থাকুক, কেউই নিশ্চিন্ত হতে পারছে না। আরও অস্ত্র চাই, চাই আরও কৌশল। এই পরিস্থিতিতেই এক জব্বর চাল চাললেন আমেরিকার সমরবিশেষজ্ঞরা। এমন একটা বিভাগ গড়ে তুললেন, যার কাজ হল শত্রুকে ভয় দেখানো। এমন ভয়, যা আসলে সত্যি নয়, কিন্তু তাকে সত্যি মনে করে ভুল পথে চালিত হবে শত্রু। এর মাস্টারমাইন্ড ছিলেন দুজন, কর্নেল বিলি হ্যারিস এবং মেজর র্যালফ ইঙ্গারসোল। আর এই বিভাগের নামই ছিল ঘোস্ট আর্মি।
আরও শুনুন: হ্যালোইনের রাতে পৃথিবীতে কি সত্যি নেমে আসে আত্মারা?
কী কাজ ছিল সেনাদলের মধ্যে থাকা এই বিভাগের? সোজা কথায় ভয় দেখানো। এই দলে ছিলেন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার, ইঞ্জিনিয়ার, ফটোগ্রাফার, আঁকিয়ে, এমন নানা ধরনের লোক। বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত লোকেদের এই দলে রাখার কারণ আর কিছুই না, নকল করা। নকল সৈন্য, নকল অস্ত্র, নকল কোড, নকল সিগন্যাল, যতভাবে শত্রুকে ভুল বোঝানো যায়, কোনও কিছু করতেই খামতি রাখেনি আমেরিকা। কামান, সাঁজোয়া গাড়ি, ট্যাঙ্ক ইত্যাদি সব ভয়ংকর অস্ত্রশস্ত্রের ডামি বানাত এই বিভাগ, যা দেখে আসলের সঙ্গে তফাত খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। আর তৈরি করা হত নকল বার্তা, যা ট্যাপ করলেও আদতে ভুল বার্তা পেত অক্ষশক্তি। এইভাবে নিজেদের ইচ্ছেমতো পথে তাদের চালিত করতে পারত মার্কিন সেনা। তারপরে যুদ্ধ জিতে নেওয়া তো কেবল সময়ের অপেক্ষা। এ ছাড়াও এই দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন একদল মানুষ, যাঁরা কাজ করতেন ডামি আর্মি হিসেবে। নকল সেনা, যারা যুদ্ধ করবে না, কিন্তু বিপক্ষের সামনে ভিড় বাড়ালে সৈন্যের সংখ্যা দেখে বিভ্রান্ত হবে তারা। আবার যেদিকে আসলে মিত্রপক্ষের সৈন্য নেই, সেদিকে এই ডামি সৈন্য, সেনাদের কুচকাওয়াজের শব্দের রেকর্ডিং ইত্যাদি দেখেশুনে সেদিক রক্ষা করতে ছুটে আসত অক্ষশক্তির সেনারা। আর সেই সুযোগে দুর্বল জায়গা বুঝে আক্রমণ শানাত মার্কিন সৈন্যরা। ঠিক এই ঘটনাই ঘটেছিল ১৯৪৫ সালে, অর্থাৎ মহাযুদ্ধের শেষ বছরে আমেরিকা-জার্মানির ভিয়ারসেন যুদ্ধে। রাইন নদী পেরিয়ে মার্কিন সেনাবাহিনীর একটা বিরাট অংশ ঢুকে পড়েছে দেখে তাদের প্রতিহত করতে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়েছিল নাৎসি বাহিনী। যতক্ষণে তারা বুঝতে পারে এ সবই আসলে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা, ততক্ষণে পিছন থেকে আক্রমণ করে যুদ্ধ নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছে মার্কিন সেনা।
তাহলেই বুঝুন, ভূত কোথায় নেই! সত্যি ভূতের দেখা মিলুক বা না মিলুক, মিথ্যে ভূতেরাও কিন্তু কম কাজের নয়।