ভ্যালেন্টাইনস ডে মানে কি কেবল প্রেমের দিন? উঁহুঁ। অন্য এক ইতিহাসও জড়িয়ে রয়েছে এই বিশেষ দিনটির সঙ্গে। সে ইতিহাসের গায়ে জমাট বেঁধে আছে রক্ত, অন্ধকার আর লোভের গন্ধ। আর রয়েছে সারি দিয়ে সাজানো সাত-সাতটি মৃতদেহ। আসুন, ঘুরে আসা যাক সেই রক্তাক্ত ইতিহাসের পাতায় পাতায়।
প্রেমের সপ্তাহের যাকে বলে ফাইনাল। সাতদিনের প্রেম প্রেম ভাব একেবারে চূড়ান্ত বিন্দুতে পৌঁছয় এই দিনটিতে, যার নাম ভ্যালেন্টাইনস ডে। প্রিয়জনের জন্য সবচেয়ে বিশেষ উপহারটি সাজিয়ে রাখা থাকে সেদিনের নামেই। সেই উপহারই সাজিয়েছিলেন এই ব্যক্তিও। তবে প্রেমিকার জন্য নয়, প্রতিদ্বন্দ্বীর জন্য। সেই শত্রুর জন্য নিখুঁত লক্ষ্যে ছুটে গিয়েছিল পরপর গুলি। ঠিক ভ্যালেন্টাইনস ডে-তেই।
কী ঘটেছিল তারপর? আসুন তবে, শুনে নেওয়া যাক সেই রক্তাক্ত কাহিনি।
আরও শুনুন: নিজে নয়, প্রেমের চিঠি লিখতে ভরসা অন্য কেউ! কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারসাজিতে ঠকলেন কারা?
দিনটা ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি। সাল, ১৯২৯। আর স্থান আমেরিকা। হ্যাঁ, অধিকার দখলেরই খেলা চলেছিল সেদিন। তবে প্রেমিকার মনে নয়, অপরাধজগতের শীর্ষ স্থান দখল করতেই সেদিন ছক সাজিয়েছিলেন মার্কিন ক্রাইম দুনিয়ার এক গ্যাং লিডার। যার নাম আলফঁস গ্যাব্রিয়েল কাপোন। তবে আল কাপোন নামেই তিনি বিশ্ববিখ্যাত। আর এই খ্যাতি, থুড়ি কুখ্যাতির পিছনে ছিল সেই ভ্যালেন্টাইনস ডে-টিই।
ইতালি থেকে আসা দরিদ্র ছিন্নমূল পরিবারের ছেলে আল কাপোন। মেধাবী ছেলের উপর ভরসা রেখেছিল পরিবারও। কিন্তু ১৪ বছর বয়সেই এক শিক্ষককে মারধর করার দৌলতে স্কুল থেকে নাম কাটা গেল। বদলে নাম জড়িয়ে গেল ছোট ছোট গ্যাংয়ে। বিশ শতক থেকেই আমেরিকার জায়গায় জায়গায় ঘাঁটি গেড়ে বসেছিল একাধিক মাফিয়া গ্যাং। সেই জগতে পা রাখলেন আল কাপোন। ভিড়ে গেলেন জনি টরিও নামে এক মাফিয়ার সঙ্গে। আমেরিকায় তখন মদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। আর এই নিষিদ্ধ নেশাদ্রব্যের চোরাচালান করেই ফুলেফেঁপে উঠেছিলেন আল কাপোন। এঁদের দাপট কমাতে টরিও-কে খুন করার ছক কষে প্রতিদ্বন্দ্বী জর্জ মোরান-এর গ্যাং। সেই ছক সফল হল না বটে, কিন্তু প্রাণের ভয়ে আল কাপোনের হাতে দলের ভার তুলে দিয়ে আমেরিকা ছাড়লেন টরিও।
দলের ভার নিয়ে একদিকে সম্পত্তি আর প্রতিপত্তি বাড়িয়ে চলেছিলেন আল কাপোন। অন্যদিকে মোরান-কে উচিত শিক্ষা দেওয়ার কথাটাও তিনি কখনও ভোলেননি। আর সেই কাণ্ডটাই তিনি ঘটিয়েছিলেন ওই ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে। ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখে মোরানের প্রধান সাত সহযোগীর মৃতদেহ পাওয়া যায় তাদেরই এক গ্যারেজের অভ্যন্তরে। দেয়ালের দিকে মুখ করে লাইন করে দাঁড় করিয়ে পেছন থেকে প্রায় ৭০ রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয় এই সাতজনের উপর। শিকাগোতে ঘটে যাওয়া এই গণহত্যা ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে ম্যাসাকার’ বলে কুখ্যাত হয়ে যায় গোটা বিশ্বে। আর একইসঙ্গে মার্কিন মাফিয়া জগতের বেতাজ বাদশা হয়ে যান আল কাপোন।
আরও শুনুন: আরশোলার নাম রাখা যাবে প্রাক্তনের নামে, প্রেম দিবসে উপলক্ষে অভিনব ‘অফার’ চিড়িয়াখানায়
মাফিয়াদের ভয়ে সেসময় মুখ খুলত না কোনও মানুষই। এমনকি ওই মৃতদেহগুলির মধ্যে একমাত্র যার দেহে প্রাণ ছিল বলে দেখতে পায় পুলিশ, মৃত্যুর আগে কোনও জবানবন্দি দেয়নি সেও। অনেক চেষ্টা করে শুধু এইটুকু জানা গিয়েছিল যে পুলিশের পোশাক পরা এক দল ব্যক্তিই সেদিন হাজির হয়েছিল গ্যারেজে। মোরানের দলের তরফে এ ঘটনার জন্য আল কাপোন-কেই দায়ী করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও সাক্ষ্যপ্রমাণ না থাকায় পুলিশ কিছুই করতে পারেনি। অমীমাংসিতই রয়ে গিয়েছে ভ্যালেন্টাইনস ডে-র এই কুখ্যাত গণহত্যা।