‘নীল রং ছিল ভীষণ প্রিয়’! আর সেই প্রিয় রঙেই রাঙা এই শহর। দরজা, জানলা থেকে দেওয়াল, এমনকি রাস্তা, সবটাই এখানে এমনই নীলাভ! লোকে তাকে ডাকে নীল মুক্তোর শহর বলে? জানেন কোথায় রয়েছে এই শহরটি? কেনই বা এ শহরে এমন নীলের ঘনঘটা। শুনে নিন।
নীল আপনার পছন্দের রং হলে, আপনার পরবর্তী গন্তব্য অবশ্যই এই শহর। কারণ আকাশ বা সমুদ্রের মতোই এ শহরের রংও গাঢ় নীল। ভাবছেন নিশ্চয়ই, শহরের আবার রং থাকে নাকি! আলবাত থাকে। অন্তত এ শহরের তো আছেই। নীল মুক্তোর মতোই নীলাভ এই শহরের সব কিছু!
মরোক্কোর টাঙ্গিয়ার এবং তাতোয়ান থেকে যেতে হবে আরও খানিকটা গভীরে। সেখানে গেলেই মিলবে ছোট্ট শহর শেফচাউইন। না কাউকে বিশেষ জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন পড়বে না। নিজের সঙ্গে নিজেই পরিচয় করিয়ে দেবে এই শহর। সাধারণ ভাবে দেখা যায়, কোনও শহরের কয়েকটা বাড়ি নীল রঙা। তবে এ শহরে সব রং গিয়ে মিশেছে শুধু নীলেই। এমন নীল শহর বুঝি আর দ্বিতীয় নেই এই ব্রহ্মাণ্ডে।
প্রত্যেকটি বাড়ির দেওয়াল থেকে শুরু করে সিঁড়ি, দরজা, জানলা, এমনকি শহরের রাস্তাঘাট পর্যন্ত নীল। হ্যাঁ, এ শহরের গেলে রংমেলান্তির ধারণা আপনার গুলিয়ে যেতে বাধ্য। এ শহরের নামই তাই নীল মুক্তোর শহর।
আরও শুনুন: দেওয়াল থেকে সিঁড়ি সবই তৈরি হয়েছে নুন দিয়ে! মাটির নিচে রয়েছে এই ‘ঈশ্বরের ঘর’
মরোক্কো আফ্রিকার একটি দেশ হলেও, আফ্রিকার সংস্কৃতির থেকে অনেকটাই আলাদা এই ভূখণ্ড। পশ্চিমের রাজ্যের প্রভাব এই দেশের উপরে অনেকটাই বেশি। এমনকি শেফচাউইন নামের সঙ্গেও একটি যোগ রয়েছে ওই আরবি ভাষার। বিশাল পাহাড়ঘেরা ভূখন্ডের জন্যই এমন নাম বলে মনে করা হয়।
আসলে স্প্যানিশ ইনকুইজিশনের সময় হাজার হাজার ইহুদি ও মুসলিম স্পেন ছেড়ে মরোক্কোয় এসে বসবাস শুরু করেন। রিফ পর্বতমালা ঘেরা এই শেফচাউইন শহরটি তৈরি হয়েছিল তাঁদের হাত ধরেই। পোর্তুগিজ আধিপত্যর হাত থেকে বাঁচতেই গড়ে ওঠে এ শহর। সেটা প্রায় ১৪৭১ সালের কথা।
শেফচাউইন শহরে রয়েছে ঐতিহাসিক গ্রেট মসজিদ। শহরের পূর্বদিকে পাহাড়ের উপরে রয়েছে স্প্যানিশ নির্মিত আরও একটি মসজিদ। যেখান থেকে দেখা মিলবে গোটা শহরের আশ্চর্য সুন্দর একটা ল্যান্ডস্কেপের। মরোক্কোর এই শহরেই রয়েছে রেফ টোগোবিট নামে একটি গুহা। যা আফ্রিকার গভীরতম গুহাগুলির মধ্যে অন্যতম। তাছাড়া এ শহর কিন্তু হাতের কাজের জন্যও বেশ বিখ্যাত। উলের পোশাক, হাতে বোনা কম্বল- এসব তৈরিতে এদের জুড়ি মেলা ভার।
আরও শুনুন: তেরো মাসে বছর, তাই এই দেশে এখন চলছে ২০১৩ সাল, জানেন এই দেশের কথা?
ভাবছেন নিশ্চয়ই, এত রং থাকতে, এমন একটি মাত্র রংকে কেন বেছে নিল এই শহর? আসলে ইহুদিদের কাছে এই নীল রং অত্যন্ত পবিত্র। সে কারণেই হয়তো এই শহরে নীলের এত আধিপত্য। নীল রং নাকি আকাশ ও ঈশ্বরের উপস্থিতির কথা মনে করায় তাঁদের। কেউ কেউ আবার মনে করেন, এই নীল রং নাকি সমুদ্রের প্রতীক। তবে অন্য একটা মতামতও রয়েছে। একটা সময় নাকি ম্যালেরিয়ার খুব প্রাদুর্ভাব হয়েছিল এ শহরে। সে সময়ে মশার হাত থেকে বাঁচতেই শহরকে এমন ভাবে নীলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। নীল রং নাকি মশাদের দূরে রাখে।
১৯৭০ সাল পর্যন্ত এই শহরের বাড়িগুলিতে নীল রং করা ছিল বাধ্যতামূলক একটা বিষয়। তবে সেই বিধিনিষেধ কাটলেও বাসিন্দারা সেই রঙের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন এখনও। এ শহরকে নীলিয়ে রাখার দায়িত্ব আজও পালন করে চলেছেন তাঁরা। পর্যটকদের কাছেও অন্যতম জনপ্রিয় একটি জায়গা হয়ে উঠেছে এই নীল মুক্তোর শহর। দূর থেকে এ শহরকে দেখলে একটুকরো স্বপ্ন বলেই ভুল হয়।