পুতুলের দ্বীপ। শুনতে বেশ মজার হলেও এই দ্বীপে গেলে কিন্তু বেশ ভয় ভয়ই করবে। কারণ এই দ্বীপ নাকি অভিশপ্ত। এখানকার বাসিন্দাদের জিজ্ঞেস করলে জানা যাবে, এখানে নাকি ছায়ারাও কথা বলে। অনেকেই নাকি সচক্ষে প্রত্যক্ষও করেছেন ‘তেনাদের’! তাই সুযোগ পেলেই এই দ্বীপ ছেড়ে পালান বাসিন্দারা। একটু এগোলেই চোখে পড়বে ইতিউতি সার দিয়ে ঝুলে রয়েছে জীর্ণ পুতুলের দল। কে ঝুলিয়ে রাখে ওদের। কেনই বা! আসুন, শুনে নিন পুতুল দ্বীপের ভূতুড়ে কাহিনি।
গাছের মগডাল থেকে শুরু করে বাড়ির মাচা, উঠোনের কোণা থেকে ঘরের দেওয়াল। যেদিকে তাকাবেন সার সার করে টাঙানো পুতুল। না, কোনওটিকে দেখলেই আপনার খেলতে বা আদর করতে ইচ্ছা করবে না। বরং ভয়ে ছমছম করে উঠতে পারে শরীর। কারণ কোনও পুতুলই নিজের অবস্থায় নেই। কারওর চোখ খুবলানো তো কারওর বা তুবড়ে গিয়েছে গাল। পোশাকে কবেকার কালিঝুলি। সবটা মিলিয়ে দারুণ ভয় ধরানো ব্যাপারখানা।
না, কোনও শখ করে সাজানো স্কেয়ারি হাউস নয় মোটেই। আস্ত একটা দ্বীপ, গোটাটা জুড়েই ছড়িয়ে রয়েছে এমনই ভয়ের চিহ্ন সব।
আরও শুনুন: ২০০ বছর আগে রাতারাতি উধাও হয়ে যায় গ্রামবাসীরা! অভিশাপের জেরেই নাকি ভূতুড়ে এই গ্রাম
মেক্সিকো শহর থেকে শোচিমিকো খাল পেরিয়ে আরও গভীরে গেলেই মিলবে লা ইসলা দা লাস মিউনেকাস দ্বীপ। আর সেই দ্বীপ কিন্তু যে সে দ্বীপ নয়, রীতিমতো অভিশপ্ত সেই জায়গা। সেই দ্বীপে যে ঠিক কতগুলি পুতুল ওই অবস্থায় টাঙানো রয়েছে, তার হিসেব কষা ভুলে গিয়েছেন বাসিন্দারা। শুধু বাতাসে উপকথার মতো ভেসে বেড়ায় খুচরো গল্প সব।
শোনা যায়, ওই দ্বীপটি ছিল ডন হুলিয়ান সান্তানা বাররেরা নামে এক ব্যক্তির। তিনিই ওই দ্বীপে পুতুল টাঙানো শুরু করেন। তবে প্রথম পুতুলটি টাঙানো হয়েছিল নাকি একটি দুর্ঘটনার পরে। কী সেই দুর্ঘটনা?
শোনা যায়, কোনও ভাবে খালের জলে ডুবে মারা গিয়েছিল ছোট্ট একটি মেয়ে। ওই খালের পাড়েই উদ্ধার হয়েছিল তার নিথর দেহ। পাশে পড়েছিল একটি পুতুল। তার পর থেকেই যেন মেয়েটির কান্না ভেসে বেড়াত বাতাসে। শুনতে পেতেন শুধু ডন হুলিয়ান। ছোট্ট মেয়েটি যেন নিজের পুতুলের খোঁজে কেঁদে বেড়াচ্ছে। ওই মেয়েটির আত্মার শান্তির জন্যই প্রথম পুতুলটি গাছে বেঁধে দিয়েছিলেন হুলিয়ান।
কিন্তু তার পর থেকেই শুরু হল ভূতুড়ে কাণ্ড। হুলিয়ান যতবারই বাড়ির বাইরে বেরোতেন, দেখতেন গাছে একটি করে নতুন পুতুল টাঙানো। ভূতের খবর রটতে দেরি হল না গ্রামে। হুলিয়ান ভাবলেন, ওই আত্মা থেকে বাঁচার একটাই উপায়। হুলিয়ান আরও পুতুল জোগার করা শুরু করলেন। টাঙাতে শুরু করলেন গাছের ডাল থেকে শুরু করে সর্বত্র। সেখান থেকেই বিশ্বাস জন্মায়, ওই সব পুতুল আসলে ভূতেদের দূরে রাখতে সাহায্য করে।
না, এখানেই ভূতের গল্পের শেষ নয়। মাঝখানে নাকি ওই দ্বীপ থেকে পুতুল অদৃশ্য হতে শুরু করে। ভূতের ভয়ে গ্রাম ছেড়েছিলেন অনেক বাসিন্দাই। এর প্রায় বছর পঞ্চাশ পরে মারা যান হুলিয়ান। তবে অদ্ভুত ব্যাপার, হুলিয়ানের দেহ মিলেছিল ঠিক সেখানেই, যেখান থেকে একদিন তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন ছোট্ট মেয়েটির নিথর দেহ।
আরও শুনুন: বিলেতে মৃত্যু বড়লাটের, তবে কীসের টানে আজও নেটিভ শহরে ঘোরে হেস্টিংসের ভূত?
অভিশপ্ত বলে মাঝখানে একটা সময় এই দ্বীপের অস্তিত্বই স্বীকার করত না কেউ। তবে দু-দশক ধরে ফের পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে এই পুতুলের দ্বীপ। ভূতুড়ে অথচ রোমাঞ্চকর এই দ্বীপ দেখতে প্রায়শই ভিড় করেন পর্যটকেরা। আর কে না জানে, ভয়ের মধ্যে একটা আশ্চর্য রোমাঞ্চ থাকে। যার জন্য চাদর মুড়ি দিয়ে কাঁপতে কাঁপতেও ভূতের সিনেমা দেখে লোকে। আর সেই রোমাঞ্চ পেতে চাইলে একবার ঘুরেই আসতে পারেন মেক্সিকোর এই ভূতুড়ে পুতুলের দ্বীপ থেকে।