যা ছিল একান্তই কর্পোরেট বিজ্ঞাপন, তাকেই মানবিকতার প্রয়োজনে কাজে লাগিয়ে ফেললেন এক শিখ ব্যক্তি। ওই বিজ্ঞাপনের আড়ালেই জানালেন, অসহায় দুঃস্থ মানুষদের জন্য হাত বাড়িয়ে রেখেছেন তাঁরা। কীভাবে? তাহলে আসুন, শুনেই নিই সে কথা।
নেটদুনিয়ায় সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়েছে একটি বিজ্ঞাপন। উপভোক্তা যা চাইবেন তাই সহজে মিলবে, এই মর্মে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল এক কর্পোরেট সংস্থা। আর সেই বিজ্ঞাপন এমনই নজর কেড়েছে সকলের, যে, ভাষার সামান্য অদলবদল করে একই ছাঁচে বিজ্ঞাপন বানিয়ে ফেলেছে আরও একাধিক সংস্থা। অর্থাৎ পুঁজির দুনিয়ায় বেশ সাড়া ফেলেছে এই বিজ্ঞাপনটি। কিন্তু সেই বিজ্ঞাপনকেই এবার একেবারে অন্য মোড়কে হাজির করলেন এক শিখ ব্যক্তি। কোনও ব্যবসায়িক প্রয়োজনে নয়, জনহিতকর কাজের স্বার্থেই এই বিজ্ঞাপনকে ব্যবহার করলেন তিনি। আর তা দেখেই বেশ চমকে গিয়েছেন সকলে।
আরও শুনুন: অন্যরকম পৃথিবী… পথশিশুদের কার্টুন দেখান দোকানদার, খাবার বিলি বাসচালকের
কী ঘটেছে ঠিক? তাহলে খুলেই বলা যাক।
হরতীরথ সিং নামের ওই সমাজসেবী হাতে দুটি প্ল্যাকার্ড ধরা ছবি পোস্ট করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তার একটিতে লেখা, ‘খানা মাঙ্গোগে, লঙ্গর দেঙ্গে’। কোনও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ হোক কি আধুনিক শহর, গুরু নানকের নামে সব জায়গায় লঙ্গরখানা রয়েছে, যে কোনও জাতি ধর্মের মানুষের জন্য তাদের অবারিত দ্বার। সে কথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। কেবল খাবারই নয়, শীতের হাত থেকে বাঁচার জন্য একইভাবে শীতবস্ত্রের জোগানও রেখেছেন তাঁরা। ওই ব্যক্তির হাতে ধরা আরও একটি পোস্টারে লেখা রয়েছে, ‘ঠান্ড লাগেগি, কম্বল দেঙ্গে’।
আরও শুনুন: রামের সঙ্গে সীতার নাম নেয় না, RSS-কে কৌরবের সঙ্গে তুলনা রাহুল গান্ধীর
কিন্তু কোথা থেকে এল এহেন কথা দুটি? আসলে ২০০২ সালের ‘মা তুঝে সালাম’ সিনেমাটির একটি সংলাপ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। কাশ্মীর ইস্যু তুলে ধরে সেখানে বলা হয়েছিল, কেউ দুধ চাইলে ক্ষীর দেওয়া যেতে পারে, অর্থাৎ চাহিদার চেয়েও বেশি কিছু দেওয়া হবে, কিন্তু কাশ্মীর চাওয়ার স্পর্ধা যেন কেউ না করে। ওই সংলাপের প্রথম অংশ ‘দুধ মাঙ্গোগে, ক্ষীর দেঙ্গে’, এই কথাটি নিজেদের মতো সাজিয়ে নিয়ে সম্প্রতি বিজ্ঞাপন বানিয়েছিল দুটি ই-কমার্স সংস্থা। রোজকার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, শাকসবজি, দুধ, ডিম ইত্যাদি পৌঁছে দেয় যে সংস্থাটি, তার ক্যাচলাইন ছিল ‘দুধ মাঙ্গোগে, দুধ দেঙ্গে’। আর খাবার ডেলিভারি সংস্থাটির বিজ্ঞাপনী বোর্ডে লেখা ছিল, ‘ক্ষীর মাঙ্গোগে, ক্ষীর দেঙ্গে’। বলাই বাহুল্য, এ সবকিছুই নিছক ব্যবসায়িক প্রয়োজনে। বিজ্ঞাপনের স্বার্থেই সিনেমার হিংস্র কথাটিকে বদলে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই ব্যক্তি তা করেননি। পুঁজিকেও যে কীভাবে জনহিতকর কাজে ব্যবহার করা যায়, তারই নজির গড়েছেন এই ব্যক্তি। আর তাঁর এই অভিনব কাজেই চমকে গিয়েছে নেটদুনিয়া।