এ যুগেও অজ্ঞাতবাসের প্রয়োজন পড়ে বইকি। তবে পঞ্চপাণ্ডবের লুকিয়ে থাকার মেয়াদ ছিল বারো বছর, আর এই যুবক যুবতীর গল্পে সেই সময়সীমা গড়িয়েছে দশ বছরে। আর সব শেষে, জিত হয়েছে তাঁদেরই।
একেই বলে প্রেমের জয়! কথায় বলে, প্রেমের জন্য মানুষ কী না করতে পারে! কী যে করতে পারে, তারই প্রমাণ দিলেন এই প্রেমিকযুগল। এক নয়, দুই নয়, দশ-দশটা বছর এ ওকে লুকিয়ে রাখলেন। টের পেল না কাকপক্ষীটিও! কী ভাবছেন, এও কি হয়! আজ্ঞে হ্যাঁ, এ জগতে যে কী হয় আর কী হয় না, সে হিসেবটাই বড় গোলমেলে। রহমান আর সজিতার গল্পটা সেরকমই একটা প্রায় অসম্ভব ঘটনা। খুলেই বলি।
অবশেষে অপেক্ষার অবসান। চার হাত এক হল দুই যুবক যুবতীর। আলিঞ্চুভাত্তিল রহমান আর সজিতার। তা দুজনের বিয়ে আর কী এমন নতুন ঘটনা! চমকটা সেখানেই। কেরালার পালাক্কার জেলার এই দুজন যুবক যুবতীর গল্পটা আর পাঁচজনের মতো নয় যে। বলা ভাল, গল্পটা আর পাঁচজনের মতোই ছিল, কিন্তু দশ বছর আগে গল্পটার পথ বদলে যায়।
আরও শুনুন: একরত্তি মেয়েকে নিয়ে অভিনব কায়দায় প্রয়াত স্ত্রীর স্মৃতি ফেরালেন যুবক, বিহ্বল নেটদুনিয়া
জমিয়ে প্রেম চলছিল দুজনের। তবে সজিতার বাড়ির লোকজন একে ভাল চোখে দেখেনি। একদিন সজিতা রহমানকে জানান, তাঁর পক্ষে আর নিজের বাড়িতে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। প্রেমিকার জন্য ঝুঁকি নেন রহমান। তাঁকে বলেন বাড়ি ছেড়ে চলে আসতে। কাউকে না জানিয়েই বাড়ি থেকে পালান সজিতা। তখন তাঁর বয়স ১৮ বছর। এদিকে আলাদা থাকার মতো সংস্থানও নেই। উপায়ান্তর না দেখে প্রেমিকাকে নিজের বাড়িতেই লুকিয়ে ফেলেন রহমান। কিন্তু সেই আত্মগোপনের মেয়াদ যে গড়াবে দশ-দশটা বছর, সে কথা কে ভেবেছিল!
আরও শুনুন: মাসে আয় ৭৫ হাজার টাকা, আছে দুটি অ্যাপার্টমেন্ট… দেশের ‘ধনী ভিখারি’র গল্পে অবাক নেটিজেনরা
নিজের তিন-কামরা বাড়ির এক ঘরে সজিতাকে লুকিয়ে রেখেছিলেন রহমান। ঘরে বিশেষ ধরনের তালা লাগানোর ব্যবস্থাও করেন তিনি, যাতে বাড়ির অন্য কেউ সে ঘরে না ঢুকতে পারে। এদিকে সজিতার বাড়ির লোক জানতেও পারেননি যে তাঁদের বাড়ি থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরেই রয়েছেন তাঁদের হারিয়ে যাওয়া মেয়ে। ২০১০ সালে সজিতা বাড়ি ছেড়ে পালানোর পর থানায় মিসিং ডায়েরি করেছিলেন তাঁরা। সজিতার প্রেমিক হিসেবে রহমানকে জেরাও করে পুলিশ। বছরের পর বছর পেরোতে পেরোতে একসময় হাল ছেড়ে দেন সজিতার বাড়ির লোকজন।
চলতি বছরের মার্চ মাসে রহমানের বাড়ি ছেড়ে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন দুজনে। এদিকে রহমান বাড়িতে না ফেরায় তাঁর বাড়ি থেকেও থানায় ডায়েরি করা হয়। কিন্তু জুন মাসে রহমানকে রাস্তায় দেখে ফেলেন তাঁর এক ভাই। শেষমেশ স্বীকারোক্তি করেন প্রেমিকযুগল।