চাই মনপসন্দ কাবাব। ভাবামাত্র অর্ডার আর অর্ডারমাত্র দুয়ারে কাবাব, একেবারে খুশবু ছড়িয়ে। তাও একেবারে লখনউ থেকে গুরুগ্রামে, মাত্র তিরিশ মিনিটে। মাঝখানে পথ পাড়ি দিয়েছে প্রায় ৫০০ কিমি। তা হতে পারে নাকি? ক্রেতার মনে জাগল খটকা, আর তাই আদালতে ঠুকলেন নালিশ। আসুন শুনে নেওয়া যাক সেই ঘটনা।
খাবার ডেলিভারি করা অ্যাপগুলো যেন ভূতের রাজা। চাওয়ামাত্র খাবার হাজির। কত কম সময়ে ক্রেতার হাতে থুড়ি পাতে খাবার তুলে দেওয়া যায়, তাই-ই নিয়ে পড়িমড়ি প্রতিযোগিতা। আর তাতে ডেলিভারি বয়দের প্রাণ ওষ্ঠাগত। তাড়াতাড়ি খাবার পৌঁছে না দিলে আছে নালিশে নাস্তানাবুদ হওয়ার ভয়। তবে, জলদি খাবার পৌঁছে দিয়েও যে বিপদে পড়তে হবে কে জানত! সম্প্রতি তেমন সমস্যাতেই জেরবার এক জনপ্রিয় খাবার সরবরাহকারী অ্যাপ।
আরও শুনুন:
কথা ছিল, ৩০ মিনিটে অর্ডার দেওয়া খাবার পৌঁছে যাবে নির্দিষ্ট ঠিকানায়। তা পৌঁছে গিয়েছে বটে। তবে, খুঁটিনাটি দেখলে চোখ কপালে ওঠাই স্বাভাবিক। দেখা যাচ্ছে, এই তিরিশ মিনিট খাবার পেরিয়ে এসেছে প্রায় ৫০০ কিমি পথ। কেননা গলৌটি কাবাব তো অর্ডার দেওয়া হয়েছিল লখনউয়ের এক রেস্তরাঁয়, আর তা পৌঁছেছে গুরুগ্রামের ঠিকানায়। ঠিক এই কারণেই খটকা জাগে সৌরভ মল্ল নামে এক ক্রেতার। তিনি সোজা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। সাফ জানিয়েছেন, এটা হতে পারে না। বরং এই ধরনের কাজ আসলে ক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা করারই শামিল। কাবাবের খুশবুর বদলে তিনি যে এর ভিতর অসাধু ব্যবসার গন্ধ পাচ্ছেন, সে কথা জানিয়েই আইনের দরবারে কড়া নালিশ ঠুকেছেন তিনি। খোলসা করে জানিয়েছেন যে, সেদিন তিনি বেশ কয়েক রকমের খাবার অর্ডার দিয়েছিলেন। বিভিন্ন শহরের রেস্তরাঁয় খাবার অর্ডার দেওয়ার বিশেষ ব্যবস্থা আছে ওই অ্যাপে। সেইমতোই তিনি দিল্লি আর লখনউয়ের রেস্তরাঁয় অর্ডার দেন। অ্যাপ জানায় যে, ২০ থেকে ৪৫ মিনিট এস্টিমেটেড টাইম, অর্থাৎ এর মধ্যেই খাবার চলে আসবে। বাস্তবিক হলও তাই। মিনিট পনেরোর মধ্যেই সব খাবার চলে এল। এমনকী লখনউ থেকেও। যে প্যাকেটে খাবার এল, তা ওই রেস্তরাঁর নয় বলেই দাবি সৌরভের। বরং তাঁর বক্তব্য, অ্যাপটি বিভিন্ন শহরের মধ্যে ডেলিভারি দেওয়ার জন্য একটা অন্য প্যাকেট বানিয়েছে। তার মধ্যেই ছিল লখনউ থেকে আসা খবর। তবে, তাঁর মতে এত কম সময়ে অন্য শহরের রেস্তরাঁ থেকে গুরুগ্রামে খাবার দেওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং প্যাকেটের ভিতর কাবাব থাকলেও, ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। এই যুক্তিতেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। তাঁর আইনজীবীরা বলছেন, আসলে নামী ঐতিহ্যবাহী রেস্তরাঁ থেকে খাবার দেওয়ার নামে এই ধরনের অ্যাপগুলি আসলে ক্রেতার চোখে ধুলো দিচ্ছে। কেননা যে খাবার দেওয়া হচ্ছে, তা দূরের কোনও রেস্তরাঁর হতে পারে না। আর হলেও, তা কোনও ভাবেই টাটকা বা হাতে গরম জিনিস নয়। অথচ ক্রমাগত বিজ্ঞাপন দেখে সেই ফাঁদে পা দিচ্ছেন ক্রেতারা। সব দেখেশুনে খোদ বিচারকও অবাক। দিন সাতেকের মধ্যে সংস্থার কাছে এই বিষয়ে জবাব তলব করেছেন তিনি। তবে, আপাতত মুখে কুলুপ ওই খাবার ডেলিভারি করা অ্যাপের। ভূতের রাজা হতে গিয়ে যে জব্বর সমস্যা বেধে গিয়েছে, তা বোধহয় মর্মে মর্মেই মালুম হয়েছে সংস্থার।