একটা লোক ব্যাগপত্তর নিয়ে বাজারে বেরোলো। আর দিব্য মাঝরাস্তায় ঘুমিয়ে কাদা! একটা স্কুল। ক্লাস চলতে চলতে ঘুম! ছাত্র থেকে শিক্ষক সকলেই। হয়তো জেগে উঠল চার কী পাঁচদিন পর। কেন এমন হয় এই গ্রামে? ভিনগ্রহের প্রাণীর ঝঞ্ঝাট ? কী বলছে বিজ্ঞান?
কুম্ভকর্ণের কথা মনে পড়ছে বটে। তবে কিনা মহাবলী রাবণের ভাইয়ের ঘুমে যাওয়াটা ছিল ঘোষিত। এই গ্রামের বিষয়টা খানিক আলাদা। কেমন আলাদা? আসলে এখানে কে, কখন, কোথায় ঘুমিয়ে পড়বে, তা তাঁরা নিজেরাও জানে না। এমনকী, যাদের ইনসোমনিয়া আছে তাদেরও নিস্তার নেই৷ যে-সে ঘুম না, একবার ঘুমোলে জাগতে জাগতে লেগে যেতে পারে কম করে সাত থেকে আট ঘণ্টা৷ একটানা তিনদিনের জন্যও ঘুমিয়ে পড়তে পারেন আপনি৷ অবাক লাগছে তো? বুদ্ধিও প্রশ্ন তুলছে, এমনটা হয় না-কি? কেন হয়? ঘটনা কোথাকার?
দেশের নাম কাজাখস্তান৷ গ্রামের নাম কালাচি৷ এলাকার মানুষের ঘুমিয়ে পড়া রোগই গোটা বিশ্বে পরিচিত করেছে কালাচিকে৷ শুধু মানুষ নয়, পশু-পাখিরাও রক্ষা পায় না ‘কাল ঘুম’ থেকে৷ হ্যাঁ, কাল ঘুমই বটে৷ কারণ কালাচির ঘুমের মারাত্মক পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া রয়েছে৷ কেমন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া?
আরও শুনুন: এখানে ১২ বছর বয়স হলেই মেয়েরা হয়ে যায় ছেলে, জানেন সেই আজব গ্রামের কথা?
লম্বা ঘুম ভাঙার পর নানারকম শারীরিক অস্বস্তি দেখা দিচ্ছে৷ যেমন তীব্র মাথা ব্যথা, বমি ভাব৷ কারও কারও আবার রক্তচাপ বেড়ে যাচ্ছে মাত্রাহীন পর্যায়ে৷ স্মৃতি লোপ পাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে৷ শিশুদের অস্বস্তি খানিক আলাদা। জানা গিয়েছে, ঘুম ভাঙার পর চরম হ্যালুসিনেশন তৈরি হচ্ছে শিশুদের মধ্যে৷ আজব সব দৃশ্য দেখছে তারা৷ অন্যদিকে পুরুষদের ক্ষেত্রে কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে যৌন আকাঙ্ক্ষা৷ এবং ঘুম-রোগ ভাঙার পর সাত দিন থেকে এক মাস অবধি থেকে যাচ্ছে এমন সব শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা৷
স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম এই রোগের শিকার হন এক মহিলা৷ নাম লিউভক বেলকোভা৷ ২০১০ সাল একদিন বাজারে কাজে বেরিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় হঠাৎই তীব্র ঘুম পায় তাঁর। চার দিন পর ঘুম ভাঙে বেলকোভার৷ তখন তিনি হাসপাতালে৷ চিকিৎসকেরা জানান, স্ট্রোক হয়েছিল তাঁর৷ পরবর্তীকালে কালাচি গ্রামের আরও অনেকের সঙ্গে একই ধরনের ঘটতে শুরু করে৷ যেমন, ভিক্টর কাজাচেনজো৷ ২০১৪ সালের অগাস্টের একদিন বাড়ি থেকে বাইক নিয়ে বেরিয়েছিলেন৷ তারপর ঘুম৷ চোখ খুলেছিলেন হাসপাতালের বেডে৷ সেবার একটানা চারদিন ঘুমিয়েছিলেন ভিক্টর৷ ভিক্টর আসলে মাঝ রাস্তায় ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। গ্রামবাসীরাই তাঁকে তুলে এনে হাসপাতালে ভর্তি করেন৷
আরও শুনুন: সারা গ্রামে সকলেই অন্ধ, এমনকী পশুরাও… জানেন এই ‘অভিশপ্ত’ গ্রামের কথা?
এ তো গেল একেকজন মানুষের ঘুম৷ যৌথ ঘুমের ঘটনাও আছে। কালাচির এক আস্ত স্কুল বেমালুম ঘুমিয়ে পড়েছিল সেবার। ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ঘুম ভাঙে চারদিন পর৷ একটি পরিসংখ্যান বলছে, শুধু ২০১০ সালেই ১২০ জন গ্রামবাসী ঘুমের শিকার হয়৷ পরে আরও মানুষ কাল ঘুমে জেরবার হয়েছেন৷ আসল প্রশ্ন, এই মারণ ঘুমের কারণটা কী?
নাঃ। চিকিৎসকরা একশ শতাংশ উত্তর দিতে পারছেন না৷ প্রথমটায় তাঁদের সন্দেহ ছিল, গ্রামবাসীরা বুঝি কোনও মানসিক রোগে আক্রান্ত৷ বৈজ্ঞানিক, রেডিওলজিস্ট, টক্সিকোলজিস্টরা গ্রামে এসে ঘুমের কারণ সন্ধান করেন৷ স্থানীয় জল-মাটিরও পরীক্ষা হয়৷ এইসময়েই গ্রামের বাসিন্দাদের মস্তিষ্ক স্ক্যান করা দেখা যায়, এদের মস্তিষ্কের কোষে রয়েছে অতিরিক্ত তরল৷ চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘ইডিমা’৷ যদিও গ্রামবাসীদের সন্দেহ, এই ঘুমের পেছনে রয়েছে কালাচির কাছাকাছি ক্রাসনোগোরস্কি অঞ্চলের ইউরোনিয়াম খনির বিষাক্ত বাতাস৷
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।