পুরাণমতে স্বয়ং মহেশ্বরের চোখের জল জমা হয়ে গড়ে উঠেছিল এই পবিত্র জলাশয়। শোনা যায়, মহাভারতের অরণ্যপর্বের শেষ ভাগে এই জলাশয়ের সামনেই পঞ্চ পাণ্ডবের পরীক্ষা নিয়েছিলেন যক্ষ। পরবর্তীকালে এই জলাশয়কে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে হিন্দুধর্মের এক পবিত্র পীঠস্থান। তবে বর্তমানে এর ঠাঁই হয়েছে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে। আর কী মাহাত্ম্য হয়েছে এই পবিত্রভূমের? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
দক্ষযজ্ঞের ফলে সতীর মৃত্যু হলে মহেশ্বর শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েন। প্রথমে ত্রিভুবন কাঁপিয়ে প্রলয় নৃত্যে উদ্যত হন তিনি। কিন্তু বিষ্ণুর নিক্ষেপিত সুদর্শন চক্র সতীর দেহকে ভিন্ন খণ্ডে ভাগ করে দিলে মহাদেব আবার শান্ত হয়ে শোকে নিমজ্জিত হন। পুরাণমতে, সেইসময় মহাদেবের নয়ন হয়ে উঠেছিল অশ্রুসজল। আর তাঁর চোখের জল থেকেই জন্ম নেয় এক বিশাল জলাশয়। চোখের জল থেকে সৃষ্ট এই পুকুরের নাম হয় ‘কটাস’। পরবর্তীকালে যার তীরে বিভিন্ন হিন্দু দেবতার মন্দির গড়ে ওঠে। তবে বর্তমানে সেই জলাশয়ের অবস্থান পাকিস্তান অধ্যুষিত পাঞ্জাব প্রদেশে। হিন্দু ধর্মের পবিত্র পীঠ হলেও যেখানে চাইলেই পা রাখতেন পারেন না ভারতীয় হিন্দুরা।
আরও শুনুন: মেয়ে গেল কলেজে, ফেরার পথে হাপুস নয়নে কান্না বাবার, দেখে আপ্লুত নেটদুনিয়াও
তবে এছাড়াও এই জলাশয়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এর সঙ্গে থাকা মহাভারত যোগ। মহাভারতের প্রতি পর্বেই পঞ্চ পাণ্ডব সম্মুখীন হয়েছেন বিভিন্ন পরীক্ষার। তেমনই এক পরীক্ষার উল্লেখ মেলে অরণ্যপর্বের শেষভাগে। যেখানে পাণ্ডবরা তৃষ্ণার্ত হয়ে এক জলাশয়ের কাছে এসে পৌঁছন। কিন্তু সেখানে তাঁদের জলগ্রহণ করতে বাধা দেন জল থেকে উঠে আসা এক যক্ষ। যক্ষের শর্ত অনুযায়ী তাঁর করা কিছু প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারলেই পাণ্ডবরা ওই পুকুর থেকে জল নেওয়ার অনুমতি পাবেন। কিন্তু তাঁর অদ্ভুত প্রশ্নের সামনে কার্যত হার স্বীকার করতে বাধ্য হন অর্জুন-সহ তিন অনুজ পাণ্ডব। অবশেষে প্রবল জ্ঞানী সত্যবাদী জ্যেষ্ঠ পাণ্ডব যুধিষ্ঠির এগিয়ে আসেন সেসব প্রশ্নের ধাঁধা সমাধানের জন্য। তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত ও যুক্তিপূর্ণ উত্তর শুনেই যক্ষ খুশি হয়ে পাণ্ডবদের জল খাওয়ার অনুমতি দেন। পরে জানা যায় সেই যক্ষ আসলে ছদ্মবেশে স্বয়ং ধর্মরাজ ছিলেন। পরবর্তীকালে মহাভারতের সেই জলাশয়কে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল এক হিন্দু পীঠস্থান। যেখানে নানা হিন্দু দেবতার মন্দির দেখা যেত। শিব থেকে আরম্ভ করে রামচন্দ্র বা হনুমান, কোনও দেবতাই বাদ ছিলেন না সেই তালিকায়। সেই সমস্ত মন্দিরই এখন পাকিস্তানের অন্তর্গত।
আরও শুনুন: কার্ড দিতেই জানা গেল টাকা নেই, বন্ধুই খাবারের বিল মেটাল ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর
দেশভাগের সময় বিভিন্ন হিন্দু মন্দিরের মতো এই মন্দিরেরও স্থান হয় পাকিস্তানে। বিশেষত পাঞ্জাব প্রদেশের যেটুকু অংশ পাকিস্তানের দিকে রয়েছে তার মধ্যেই রয়েছে বিভিন্ন হিন্দু মন্দির। তবে শুধুমাত্র ঐতাহাসিক গুরুত্বই নয় স্থাপত্যকলার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবেও উল্লেখ করা যেতে পারে এই মন্দিরটিকে।